Advertisement
E-Paper

ক্ষতিপূরণ পাবে কি প্রকৃত চাষি, উদ্বেগ নদিয়ায়

দু’একজন নয়। মৌখিক চুক্তিতে ঠিকা নিয়ে চাষ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এমন চাষির সংখ্যা নদিয়ায় অন্তত ১০-১২ হাজার, বলছেন কৃষক সভার নদিয়া জেলা সম্পাদক মেঘলাল শেখ। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ঠিকা চাষিদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের প্রস্তাব ছিল, অন্য কোনও প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক। নির্দিষ্ট কোনও প্রতিশ্রুতি পাইনি।’’

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:০১

নাকাশিপাড়ার দহকুলার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ খামারিয়া বিঘে দু’য়েক জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছিলেন। গ্রামেরই বাসিন্দা মতিলাল দাসের থেকে ওই জমি মৌখিক চুক্তিতে ঠিকা নিয়ে, ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চাষ করেন তিনি। বন্যায় ফসল পুরোপুরি জলে তলিয়ে গিয়েছে। ক্ষতিপূরণের জন্য কিন্তু আবেদন করতে পারেননি রবীন্দ্রনাথবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার জমির দলিল, বা মালিকের সঙ্গে চুক্তির কাগজ চাইছে। দীর্ঘদিন মৌখিক চুক্তিতে চাষ করি। ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে পারছি না।’’

দু’একজন নয়। মৌখিক চুক্তিতে ঠিকা নিয়ে চাষ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এমন চাষির সংখ্যা নদিয়ায় অন্তত ১০-১২ হাজার, বলছেন কৃষক সভার নদিয়া জেলা সম্পাদক মেঘলাল শেখ। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ঠিকা চাষিদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের প্রস্তাব ছিল, অন্য কোনও প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক। নির্দিষ্ট কোনও প্রতিশ্রুতি পাইনি।’’

ঠিকা চাষিরা মৌখিক চুক্তিতে অন্যের জমি চাষ করেন। কেউ টাকা, কেউ ফসলের ভাগ দেওয়ার চুক্তিতে জমিতে চাষ করেন। পুরো চুক্তিই হয় মুখের কথায়, বিশ্বাসের ভিত্তিতে। লিখিত নথি থাকে না। তার একটা কারণ, কোনও ঠিকা চাষি একটি জমি চাষ করছেন বলে প্রমাণ দেখাতে পারলে সেই জমির বর্গা দাবি করতে পারেন। তাই জমির মালিকরা লিখিত চুক্তি করতে চান না। নাকাশিপাড়ার মাঝেরগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৮০ শতাংশ কৃষিজমিই জলের তলায় তলিয়ে যায়। কিন্তু আসান শেখ, কিরাই শেখ, আব্দার মণ্ডল, মানিক শেখরা ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে পারছেন না। জেলার কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা (প্রশাসন) বিকাশচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘‘চুক্তির লিখিত কাগজ থাকলে ঠিকা চাষিরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।’’ আবেদনপত্র পরীক্ষায় নিযুক্ত কর্মীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, এখনও অবধি হাজারখানেক আবেদন পরীক্ষা করে তাঁরা মাত্র একটিই আবেদন পেয়েছেন, যেখানে লিখিত চুক্তিতে ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন চাষি। ফলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ঠিকাচাষিরা পকেটের টাকা খরচ করে জমি চাষ করলেও, সেই জমিতে ফসলের ক্ষতির ক্ষতিপূরণের টাকা যাচ্ছে মালিকের কাছে।

অন্য জেলার অভিজ্ঞতা অবশ্য তা বলে না। বর্ধমানে শিলাবৃষ্টিতে গত বোরো চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষতিপূরণের চেক বিলি শুরু হয়েছে সম্প্রতি। তারপরেই বর্ধমান ১ ব্লকের জামাড় গ্রাম কিংবা বর্ধমান ১ ব্লকের বেগুটিতে চাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ। কারণ, ঠিকাচাষি ঋণ করে চাষ করার পরেও ক্ষতিপূরণের চেক পেয়েছে জমির মালিক। যেমন, বেগুটি গ্রামের অচিন্ত্য পন্ডিত গ্রামেরই সাঁই পরিবারের জমি ঠিকা নিয়ে চাষ করেছিলেন। শিলাবৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও মৌখিক চুক্তি অনুসারে জমির মালিককে ফসলের ভাগ দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষতিপূরণের চেক ৭৫ হাজার টাকা পুরোটাই নিয়ে নিয়েছে সাঁই পরিবার। কী করে এমন হল? বর্ধমান কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি কে চাষ করেছে, সে তথ্য দেওয়ার কথা ছিল পঞ্চায়েত সদস্যদের। অভিযোগ, সদস্যদের তৈরি তালিকায় তাঁদেরই নাম উঠেছে বেশি, যাঁরা জমির মালিক হয়েও চাষ করেননি। নদিয়ায় কী হবে? পঞ্চায়েত সদস্যের দেওয়া চাষের শংসাপত্রের ভিত্তিতে নদিয়ার ঠিকাচাষি কি আমন, আউসের ক্ষতিপূরণ পাবেন? সেখানেও দেখা গিয়েছে বিভ্রান্তি। কৃষি দফতর বলছে, শংসাপত্রের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ মিলবে। কিন্তু বিডিও-রা জানাচ্ছেন, এ ব্যাপারে লিখিত নির্দেশ মেলেনি। তাই এ নিয়ম কার্যকর করা যাচ্ছে না। ধুবুলিয়ার এক পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, ‘‘ব্লক কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক গোড়ায় ঠিকাচাষিদের শংসাপত্র দিতে বলেছিলেন আমাদের। কিন্তু পরে মানা করে দেন।’’

জেলাশাসক বিজয় ভারতী। বলেন, ‘‘আগামী সোমবার কৃষি দফতরের সঙ্গে বৈঠক করব।’’ তিনি বলেন, মালিকেরই উচিত ঠিকা চাষিকে শংসাপত্র দেওয়া। যদি মালিক তা না দেন, তা হলে আর কোনও ভাবে যাতে চাষিরা শংসাপত্র পান, তার ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হবেন তিনি।

Controversy flood compensation Nadia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy