Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চোট কম থাকায় পাঁচ শ্রমিক নামেন উদ্ধারে

এক জন আলিম শেখ বলেন, “প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠে চারদিক থেকে আর্তনাদ কানে এল।

দুর্ঘটনার পরে চলছে উদ্ধারকাজ।

দুর্ঘটনার পরে চলছে উদ্ধারকাজ। — ফাইল চিত্র।

কৌশিক সাহা
সালার শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ১০:৪০
Share: Save:

দুর্ঘটনার পরে সালারের তালিবপুরের পাঁচ শ্রমিক খেয়াল করেন, সব ওলটপালট হলেও তাঁদের তেমন চোট লাগেনি। তবে রেজাউল শেখ নামে দলের আরও এক জন গুরুতর জখম। তাঁকে ধরাধরি করে নামানোর পরেই বাকিরা কামরাতে অন্য যাঁরা জখম হয়েছিলেন, তাঁদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শুধু নিজেদের কামরাই নয়, পাশের কামরাতেও তাঁরা চলে যান উদ্ধার করতে। তাঁদেরই এক জন আলিম শেখ বলেন, “প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠে চারদিক থেকে আর্তনাদ কানে এল। নিজেদের কামরার যাত্রীদের ধীরে ধীরে উদ্ধার করে পাশের কামরার যাত্রীদের উদ্ধার করতে শুরু করি। কিন্তু কয়েক জনকে উদ্ধার করতে পারলেও অধিকাংশ যাত্রী এমন ভাবে আটকে ছিলেন যে তাঁদের উদ্ধার করার ক্ষমতা আমাদের ছিল না।”

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের এস ২ কামরাতে সকলেই বসার আসনে ছিলেন। ওই শ্রমিকদের এক জন সেন্টু শেখ বলেন, “আমাদের কামরার চাকা খুলে গিয়েছিল বলে আমরা রক্ষা পেয়েছি। আমাদের কামরায় থাকা কোনও যাত্রীর মৃত্যু হয়নি। তবে জখম হয়েছেন।”

কিন্তু যে দৃশ্যের সামনে তাঁরা পড়েছিলেন, তা ভুলতে সময় লাগবে। চারদিকে মৃত মানুষ পড়ে রয়েছেন, রক্তের নদী বয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করে শ্রমিকদের এক জন মাসুদ শেখ বলেন, “কেউ বলছেন ভাই বাঁচাও, কেউ বলছেন বাবা বাঁচাও। কিন্তু এমন অবস্থায় তাঁরা আটকে পড়েছেন যে আমাদের ক্ষমতার বাইরে।” ওই কামরার মধ্যে থাকা রেজাউল শেখ সেই সময় কামরার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই কারণে তাঁর ডান হাত ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে কোমরে চোট লেগেছে, মাথায়ও বড় ধরনের আঘাত লেগেছে। শ্রমিকদের অন্যতম শাহ আলম বলেন, “রেজাউলকে একটি লুঙ্গিকে স্ট্রেচার বানিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচশো মিটার দূরে রাস্তার ধারে নিয়ে যায়। সেখানে একটি অ্যাম্বুল্যান্স তাঁকে নিয়ে যায় বালেশ্বরের হাসপাতালে। হাজার হাজার মানুষের কান্নার আওয়াজ সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনে আমরা সকলেই ভেঙে পড়েছিলাম। এখনও সেই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারিনি।”

পরে রাতেই ওই এলাকা থেকে একটি বাসে চেপে পাঁচশো টাকা ভাড়া দিয়ে হাওড়াতে এসে পৌঁছন তালিবপুরের পাঁচ জন। সেখান থেকে দুপুরে বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা।

তত ক্ষণে তাঁদের পরিবার উদ্বেগে ভেঙে পড়েছে। পরিজনরা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলেন, তাঁরা জানতেন এই ট্রেনেই আলিম, সেন্টু, শাহ আলমদের যাওয়ার কথা। আলিমের বাবা আলো শেখ বলেন, “করমণ্ডলের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা বারবার ছেলেকে ফোন করেও যোগাযোগ করতে পারিনি। ছেলের যখন খবর পেলাম তখন রাত এগারোটা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এলাকায় কাজ থাকলে ছেলেরা কি আর ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যায়।”

আলিমের স্ত্রী হাসিবা বিবি বলেন, “কোনও মতে আমার স্বামী বেঁচেছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের এই দুর্গতি কবে কাটবে।” তাঁর প্রতিবেশীরাও সে কথা বলছেন।

তালিবপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান লিলি বেগম বলেন, “সকলে বাড়ি ফিরেছে এতেই স্বস্তি।” পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ওই শ্রমিক পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। লিলি বলেন, “যাঁরা সামান্য জখম হয়েছেন তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। প্রাথমিক ভাবে কিছু খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE