Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শিশুশ্রমিকদের স্কুল চলা নিয়ে নৈরাজ্য বহাল

কোথাও পড়ুয়া আছ়ে কিন্তু টাকার অভাবে স্কুল বন্ধ। কোথাও আবার স্কুল চালু আছে, মাসে মাসে বেতন পাচ্ছেন শিক্ষকেরা, কিন্তু পড়ুয়াই নেই। শিশুশ্রমিক স্কুলের ক্ষেত্রে এই আশ্চর্য বৈপরীত্য লাগোয়া দুই জেলা নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে।

বিমান হাজরা ও সুস্মিত হালদার
রঘুনাথগঞ্জ ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ০১:২০
Share: Save:

কোথাও পড়ুয়া আছ়ে কিন্তু টাকার অভাবে স্কুল বন্ধ। কোথাও আবার স্কুল চালু আছে, মাসে মাসে বেতন পাচ্ছেন শিক্ষকেরা, কিন্তু পড়ুয়াই নেই।

শিশুশ্রমিক স্কুলের ক্ষেত্রে এই আশ্চর্য বৈপরীত্য লাগোয়া দুই জেলা নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে।

২০০৬ সালে শ্রম মন্ত্রকের অধীনে নদিয়ায় একশোটি শিশুশ্রমিক স্কুল চালু করা হয়েছিল। শিক্ষকেরা মাসিক চার হাজার টাকা বেতন পান। স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য মাসে দেড়শো টাকা করে ভাতা বরাদ্দ রয়েছে।

সম্প্রতি নদিয়ায় সর্বশিক্ষা মিশনের ‘শিক্ষাবন্ধু’ এবং শ্রম দফতরের ইনস্পেক্টরদের যৌথ সমীক্ষায় দেখা যায়, বেশির ভাগ স্কুলেই খাতায়-কলমে ৫০ জন পড়ুয়া দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে স্কুলের কোনও অস্তিত্বই নেই। পড়ুয়ার নাম ধরে খুঁজতে গিয়ে ওই নামে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সিংহভাগ পড়ুয়া আসলে পড়ছে পাশে প্রাথমিক স্কুলে। কোথাও আবার যাদের শিশুশ্রমিক বলে দেখানো হয়েছে তাদের অনেকে কোনও দিনই তা ছিল না।

মাস ছয়েক আগেই এ রকম ৭৭টি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কোনও স্কুলে পড়ুয়া থাকলে তাদের পাশের প্রাথমিক স্কুলে সরিয়ে দেওয়া হবে বলেও ঠিক হয়। কিন্তু মাত্র তিনটি স্কুল বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয়েছে প্রশাসন। স্কুলের অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও টাকা পেয়ে যাচ্ছেন পরিচালন সংস্থা ও কর্মীরা। কর্তাদের একাংশের মতে, এই কেন্দ্রীয় প্রকল্প‌ বন্ধ হোক, সেটা অনেকেই চাইছেন না। কেননা, প্রতিটি স্কুলে পাঁচ জন কাজ করেন। তাঁরা কাজ হারাবেন। তাই শাসক দলের নেতাদের ধরে তাঁরা প্রক্রিয়াটা বন্ধ করতে চাইছেন।

তৃণমূল নেতা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায়ও বলেন, “স্কুল বন্ধ করলে অনেকে মানুষ রুজি হারাবেন। যাতে তাঁদের একটা বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।” জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয়েছে, কিছু স্কুল বন্ধ করা হবেই। তবে সেটা ধাপে-ধাপে হবে। কিছু দিনের মধ্যেই আরও কয়েকটা স্কুল বন্ধ হবে।”

মুর্শিদাবাদের স্কুলগুলিতে হাজার সাতেক পড়ুয়া, প্রায় চারশো শিক্ষক। বিড়ি শ্রমিক অধ্যুষিত জঙ্গিপুর মহকুমার ছ’টি ব্লকে শিশুশ্রমিক স্কুল ২০১৫-এর মার্চ থেকে বন্ধ। জেলার ১৪০টি শিশু শ্রমিক স্কুল খোলার ব্যাপারে কোনও আশ্বাসও দিতে রাজি নন জেলা প্রশাসন। বুধবার রঘুনাথগঞ্জে মহকুমাশাসকের দফতরে তৃণমূলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখান ওই সব স্কুলের শিক্ষকেরা। স্কুলগুলি খোলা এবং বকেয়া ভাতা দেওয়ার দাবিতে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার মতে, কোথাওই শিশু শ্রমিক বাস্তবে থাকার কথা নয়। শিক্ষার অধিকার আইনে সমস্ত শিশুকে স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করা বাধ্যতামূলক। তাই
জেলায় বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে যে সমীক্ষা করানো হয়েছিল, তার যথার্থতা নিয়ে কর্তাদের একাংশ সন্দিহান। সংস্থাটির জেলা কো-অর্ডিনেটর জয়ন্ত চৌধুরী অবশ্য বলেন, “বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বাবা-মায়েদের সঙ্গে কথা বলে এমন ৯৩৮৪টি শিশুশ্রমিকের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে যারা স্কুলে যায়, পাশাপাশি বাড়িতেই বাবা-মাকে কাজে সাহায্য করে। কোনও সংস্থায় কাজ করা শিশুশ্রমিকের সংখ্যা মাত্র ৪৩।”

অতিরিক্ত জেলা শাসক শমনজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, “শ্রম মন্ত্রক ভাতার টাকা সরাসরি জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠায়। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে তা বকেয়া পড়ে, যার পরিমাণ ৫.৬৬ কোটি টাকা। তা না পেলে স্কুল চালু করা সম্ভব নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Labour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE