Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

মাদক আইনে ধরা পড়লেও জামিন

মাদক আইনে ধরা পড়ছে ঠিকই, তবে জামিনও জুটছে আনায়াসে। আর, এ জন্য জেলার পুলিশ-প্রশাসনের গয়ংগচ্ছ মনোভাবকেই দায়ি করছে কলকাতা হাইকোর্ট। মুর্শিদাবাদ-নদিয়া কিংবা সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলিতে এমন বেলাগামের ছবিটা বেশ স্পষ্ট।

শমীক ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৮
Share: Save:

মাদক আইনে ধরা পড়ছে ঠিকই, তবে জামিনও জুটছে আনায়াসে।

আর, এ জন্য জেলার পুলিশ-প্রশাসনের গয়ংগচ্ছ মনোভাবকেই দায়ি করছে কলকাতা হাইকোর্ট। মুর্শিদাবাদ-নদিয়া কিংবা সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলিতে এমন বেলাগামের ছবিটা বেশ স্পষ্ট।

শুধু মাদক মামলা নয়, জাল নোটের সুতোয় জড়িয়েও অভিযুক্তেরা একই ভাবে জামিন পেয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে, হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে তাও।

হাইকোর্টের মন্তব্য, এই ধরনের ঘটনা মুর্শিদাবাদেই বেশি। উচ্চ আদালতের এই পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষিতে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নির্দেশ সোমবারই জেলার পুলিশ সুপার একটি কমিটি তৈরি করছেন। আর, হাইকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন আদালতে মাদক মামলাগুলি কি অবস্থায় রয়েছে, তার সবিস্তার রিপোর্টও তলব করেছে হাইকোর্ট।

শাশ্বতবাবু জানান, মাদক মামলায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তি নিম্ন আদালত থেকে জামিন পাওয়ায় ওই মামলায় ধৃত অন্য কয়েক জন জামিন পেতে হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম রায় ও বিচারপতি অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এ দিন জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল।

পিপি জানান, মামলার নথি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতি রায় সরকার পক্ষের কাছে জানতে চান, নিম্ন আদালতে অভিযুক্তের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করা হয়নি কেন। বিচারপতি রায়ের পর্যবেক্ষণ, বাজেয়াপ্ত করা মাদকের রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ায় এবং গ্রেফতারির পরে চার্জশিট পেশের সময়সীমা ১৮০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে নিম্ন আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন করেছিলেন ওই অভিযুক্ত। রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে দেরি হচ্ছে দেখে নিম্ন আদালতে চার্জশিট পেশের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন সরকারি কৌঁসুলি কেন করেননি, সেই প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি রায়।

বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ওই অভিযুক্ত বাবার মৃত্যুতে পারলৌকিক কাজের জন্য প্যারোলে মুক্তির আবেদন যে করা হয়নি, তা নিম্ন আদালতের গোচরে আনেননি কেন সরকার পক্ষের কৌঁসুলি। তার ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তি নিম্ন আদালত থেকে একাধিক বার অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছেন। সরকার পক্ষের উচিত ছিল, অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর সময় আদালতে বিরোধিতা করা।

বিচারপতি রায় এ দিন পিপি-র উদ্দেশে মন্তব্য করেন, ‘‘কী কারণে মুর্শিদাবাদ জেলার মাদক মামলাগুলির ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রশাসনিক গাফিলতি হচ্ছে, তার কারণ জানতে রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে আদালতে ডেকে পাঠানো হবে না কেন।’’

এ দিন হাইকোর্টের ওই পর্যবেক্ষমের জেরে ডিজি মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন, এই ধরনের মামলাগুলি কি অবস্থায় রয়েছে, কোথায় প্রশাসনিক গাফিলতি হচ্ছে, তার জন্য কে দায়ি, তা দেখার জন্য একটি কমিটি গড়তে। ইতিমধ্যেই মুর্সিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর)-কে কমিটির প্রধান করেছেন পুলিশ সুপার। তা শুনে বিচারপতি রায় নির্দেশ দেন, কমিটি যে কাজ শুরু করেছে। তা লিখিত আকারে আজ, মঙ্গলবার আদালতে জানাতে এবং কমিটিকে বিস্তারিত একটি রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bail criminal drug case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE