Advertisement
০৮ মে ২০২৪

দালালের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হাসপাতাল

সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সেলিম রেজা। স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজাউদ্দিন। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর। জল নিকাশির কোনও ব্যাবস্থা নেই। ব্লক সদর হলেও বাড়ির নোংরা রাস্তায় জড়ো করেন এলাকার বাসিন্দারা। নোংরা ফেলার কোনও জায়গাও নেই। এর প্রতিকার কবে হবে?

পিচ উঠে গিয়ে এমনই বেহাল নসিপুর মাদ্রাসা মোড়ের রাস্তা। সাফিউল্লা ইসলামের তোলা ছবি।

পিচ উঠে গিয়ে এমনই বেহাল নসিপুর মাদ্রাসা মোড়ের রাস্তা। সাফিউল্লা ইসলামের তোলা ছবি।

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০২:৩৮
Share: Save:

• জল নিকাশির কোনও ব্যাবস্থা নেই। ব্লক সদর হলেও বাড়ির নোংরা রাস্তায় জড়ো করেন এলাকার বাসিন্দারা। নোংরা ফেলার কোনও জায়গাও নেই। এর প্রতিকার কবে হবে?

শঙ্কর মণ্ডল, চকবেড়ের পাড়া

ওই এলাকায় নিকাশিনালার সমস্যা আছে। আগামী অর্থবর্ষে ওই এলাকায় নালা তৈরির চেষ্টা করব আমরা। আর নোংরা ফেলা এবং সেগুলি সংগ্রহ করার জন্য আমরা খুব দ্রুত একটা ব্যবস্থার পরিকল্পনা নিয়েছি। তা বাস্তবায়িত হলে সমস্যা মিটবে।

• চক এলাকার দুটো রাস্তার বেহাল দশা। ওই রাস্তা সংস্কার না হলে বর্ষাকালে, পুজোর সময় সমস্যায় পড়তে হয়।

নারায়ণ দাস, পুরাতন চক

পঞ্চায়েত সমিতিতে রাজনৈতিক ডামাডোল চলছে। ফলে অর্থনৈতিক ভাবে আমরা খুব সমস্যায় রয়েছি। তবে পুজোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার সংস্কার করি। ওই রাস্তাটিও আমাদের তালিকায় আছে।

• শৌচালয়ের সমস্যা আছে। অনেক পরিবারে শৌচাগার নেই। সরকারি সাহায্যে শৌচাগারের জন্য টাকা জমা দিয়েও কোনও কাজ হয়নি। বছরের পর বছর মানুষ ঘুরপাক খাচ্ছে পঞ্চায়েত সদস্যদের কাছে। এর সমাধান কবে হবে?

রবিউল আওয়াল, নসিপুর

আমরাও বিষয়টি নিয়ে ঘোর বিপদে পড়েছি। আমাদেরও পরিস্কার করে জানানো হচ্ছে না, কেন টাকা জমা দেওয়ার পরেও শৌচাগার হচ্ছে না। জেলা বা ব্লক প্রশাসনের থেকেও কোনও সদুত্তর মেলেনি।

• এসেরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ৮০০ মিটার রাস্তার বেহাল দশা, কিন্তু এই রাস্তার দু’পাশেই পাকা রাস্তা। সামান্য এই রাস্তার জন্য গোটা এলাকার মানুষ পড়ুয়াদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাস্তাটি সংস্কার করলে বা পাকা করলে ভাল হয়।

আজাদ আলি, এসেরপাড়া

রাস্তাটি সংস্কার করা চিন্তা-ভাবনা চলছে। আগামী অর্থবর্ষে আশা করি সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

• আমাদের গ্রামের রাস্তা চলাচলের অবস্থায় নেই। প্রায় দুর্ঘটনা লেগেই আছে। এলাকার গুরুত্তপূর্ণ ওই রাস্তার সংস্কার চাই।

রেজাউল শেখ, হড়হড়িয়া পূবর্পাড়া

পাকা রাস্তার সংস্কার আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। রাস্তাটি সংস্কারের জন্য পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের কাছে আবেদন জানাব। তবে ওই রাস্তার ২০০ মিটার ঢালাই করেছি। বাকিটাও ঢালাই করার চেষ্টা করব।

• আমাদের সংসদ এলাকার তিনটে রাস্তা এখনও কাঁচা আছে। বর্ষাকালে ওই রাস্তায় চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। তিনটে রাস্তায় প্রায় ৪০০ পরিবারের বাস। পাকা না হলেও ইটের রাস্তা হলেও অনেক সুরাহা হয়।

বিধানচন্দ্র দাস, গোয়াস

১০০ দিনের প্রকল্পে ওই রাস্তায় মাটি ফেলায় অনেকটায় সুরাহা হয়েছে। আগামীতে লালমাটি বা ইট বিছানো রাস্তার জন্য পরিকল্পনা নেব।

• ব্লক সদর ইসলামপুর, প্রচুর অর্থ খরচ করে এই বাজারে ভেপার আলোর ব্যবস্থা করেছে জেলা পরিষদ। কিন্তু বিল না মেটানোই সেই আলো বন্ধ। কতদিনে ওই সমস্যা মিটবে বুঝতে পারছি না।

রাসিদুল ইসলাম, নেতাজি পার্ক

ওই আলোর বিল মেটানো পঞ্চায়েতের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা নতুন করে আলো লাগিয়েছি। এতে খানিক হলেও বাজারের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আলোকিত হবে। বিলও অনেক কম হবে।

•হাসপাতালের শৌচাগার এতটাই অপরিষ্কার যে সেখানে যাওয়া কঠিন। আর হাসপাতাল চত্বরে দালাল আর মাতালদের আড্ডা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনও কাজ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত একটু উদ্যোগ নিলে ভাল হয়।

সইদুল ইসলাম, সেনপাড়া

এ বিষয়ে প্রচুর অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। কিন্তু বিষয়টি সম্পূর্ণ হাসপাতালের এক্তিয়ারভূক্ত। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে শৌচাগার সংস্কারের বিষয়টি আমরা ভেবে দেখব। আর মাতাল দালালদের বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের। তারা উদ্যোগ নিলে ওই সমস্যার সমাধান হবে।

•পানীয় জলের সমস্যা আছে। পরিস্রুত জল নেই। এলাকার মানুষ অপরিস্রুত জল খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সমস্যার কী কোনও সমাধান নেই?

মনোরঞ্জন সাহা, বৈদ্যপাড়া

পানীয় জলের জন্য পঞ্চায়েতের পক্ষ এর আগে অনেক টিউবয়েল বসানো হয়েছিল। সেগুলির জল পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে তা বিপন্মুক্ত নয়। ফলে আমরা আর জলের কল নতুন করে বসাচ্ছি না।

•আমাদের এলাকায় তিটে রাস্তা খারাপ, তা ছাড়া নদীর পাড়ে রাস্তায় হিউম পাইপ দরকার। ওই এলাকায় একটি কবরস্থান আছে। সেটিরও সংস্কার প্রয়োজন।

দিলওয়ার হোসেন, মল্লিকপাড়া

ওই রাস্তার সংস্কার করা হবে। তবে কবরস্থানের সংস্কার করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ ওই কাজটি করতে পারে আমরা ওই এলাকার হয়ে আবেদন করব।

•আমাদের পাড়ায় শিশু শ্রমিকের সমস্যা চরমে। লেখাপড়া ছেড়ে এলাকার হোটেল থেকে চায়ের দোকানে দিনরাত কাজ করে শিশুরা। এর সমাধান প্রয়োজন।

হামিদুল শেখ, নসিওয়াতপাড়া

আমরা নিরুপায়। এর আগেও বিষয়টি নিয়ে ওই মহল্লায় অভিভাবকদের কাছে গিয়েছি। তারা উল্টে আমাদের প্রশ্ন করে তা হলে আমাদের পরিবারের জন্য যে টাকা ওই শিশুটা এনে দেয় তা আপনারা এনে দিন। অভিভাবকেরা সচেতন না হলে আমরা আর কতদূর এগোতে পারি।

•এলাকার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটির অবস্থা বেহাল। ছাদের চাঙড় খুলে পড়ছে। ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। গোটা বাড়িটি স্যাতসেতে। বিদ্যুতের সংযোগও নেই।

সোনারুদ্দিন শেখ, নাজিরপুর রামচন্দ্রপুর

বিষয়টি সম্পুর্ণ স্বাস্থ্য দফতরের অধীন। আমরাও আবেদন জানাব ওই বাড়িটির ব্যাপারে। আর ওই এলাকায় উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়তে আমাদের কোনও সাহায্যের প্রয়োজন হলে আমরা তা করব।

•এলাকায় একটি ইসলামপুর এসসিএম হাইস্কুলের খেলার মাঠ আছে। দিনে দিনে মাঠের একাংশে অবৈধ ভাবে বাড়ি তৈরি করে দখল হয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে ওই মাঠে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাবে। এর কি কোনও সুরহা আছে?

রফিকুল ইসলাম, পান্ঠিপাড়া

ওই মাঠ স্কুলের। তবু স্কুল আবেদন করলে মাঠের বিষয়টি নজর দেবে পঞ্চায়েত।

•এলাকায় একটি পিএইচইর জল সরবরাহ কেন্দ্র আছে। সেটির জল পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে জল বিপন্মুক্ত নয়। ফলে জল কেউ খেতে পারেন না। অন্য দিকে, পাড়ার টিউবয়েলের অবস্থাও একই। ফলে পানীয় জল ঘোর সংকট ইসলামপুরে।

ধীমান দাস, তাতিপাড়া

আমরাও বিষয়টি নিয়ে দফতরের কর্তাদের বারবার বলেছি। ওই দফতরের কর্মীরা কেউ নিয়মিত সেখানে আসেন না। আবারও লিখিত ভাবে জানাব দফতরে।

• এলাকার পাটের হস্তশিল্পের কদর দেশ-বিদেশে। অথচ স্থানীয় ভাবে তাদের পণ্য বিক্রির কোনও বাজার নেই। ফলে শিল্পীরা সমস্যায় পড়ছেন। পঞ্চায়েত কি কোনও উদ্যোগ নেবে?

যাদব হাজরা, হাজরাপাড়া

পাট শিল্পীরা ইসলামপুরের গর্ব। ওদের তৈরি হস্তশিল্প শুধু
দেশেই নয়, বিদেশেও বেশ কদর পাচ্ছে। এই বিষয়টিও পঞ্চায়েতের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রশাসন
কোনও উদ্যোগ নিলে আমরা
পাশে দাঁড়াব।

•এলাকার বেশকিছু দেবত্তর সম্পত্তি বেদখল করার চেষ্টায় আছে এলাকার একটি চক্র। তাদের জ্বালায় কেউ তিষ্ঠোতে পারছেন না। পঞ্চায়েত উদ্যোগ নিলে ওই চক্রের মোকাবিলা করা সম্ভব।

দোলন ঠাকুর, ঠাকুরপাড়া

জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়টি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অধীন। ওটা আমাদের এক্তিয়ারের মধ্যেও নয়। তাই এটা তারা দেখলে ভাল হবে।

•কাছেই ভৈরব নদী অথচ জল নিকাশির কোনও ব্যবস্থা না থাকায় গোটা এলাকা বর্ষাকালে ডুকে থাকে। এলাকায় খাটা পায়খানা থাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

সাধন দে, চকবেড়ের পাড়া

ওই এলাকায় একটি নিকাশিনালা অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি হয়েছিল। ফলে সমস্যাটা প্রথম থেকেই রয়ে গিয়েছে। সমস্যার সমাধানের জন্য নতুন করে নালা তৈরির পরিকল্পনা আছে কিন্তু অর্থ বরাদ্দ বন্ধ। তার ফলে আমাদের এগোতে দেরি হচ্ছে।

•হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় একটি বিশ্রামাগার আছে। রোগীরা বাস থেকে নেমে বা বাসে ওঠার আগে সেখানে একটু আশ্রয় পেতেন। কিন্তু এখন সেখানে ব্যক্তিগত মালিকানার মতো ব্যবহার হচ্ছে। বাঁশ কাঠ খড়ি রাখা আছে সেখানে। আর পাশের জলের কলটিও স্থানীয় দোকানদারদের দখলে। গোটা বিষয়টি প্রশাসনিক বৈঠকে অনেকবার তুলেছি কোনও ফল হয়নি। পঞ্চায়েত কি ভাবছে?

কাবাতুল্লা শেখ, সেনপাড়া

মূলত স্থানীয় মানুষের সচেতনতার অভাবে এটি হচ্ছে। প্রশাসন কয়েকবার ওই অবস্থা মুক্ত করলেও পরে আবারও একই পরিণতি হয়েছে। আমরা আবারও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব।

•পাড়ার রাস্তা দখল নিয়েছে এক শ্রেণির মানুষ। তা ছাড়া মাতালদের উপদ্রবও চরমে। বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত উদ্যোগ নিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।

সরিফুল ইসলাম, নসিওয়াতপাড়া

পঞ্চায়েতের কোনও নিজস্ব জমি নেই। তরে সরকার খাস জমি দেখে উদ্যোগ নিলে আমরা সাহায্য করব। আর মাতালদের ব্যাপারে পুলিশ উদ্যোগ নিয়েছে ফলে তাদের দাপাদপিও কমেছে।

•গ্রামের রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। বর্ষাকালে গ্রামের রাস্তায় চলাচল করা সম্ভব হয় না। আর পানীয় জলের কোনও ব্যাবস্থা নেই।

আসমত আলি, নলবাটরা

আমরা কিছুটা ওই এলাকায় কাজ করেছি। আগামীতেও কাজ হবে। অর্থের কারণেই পিছিয়ে পড়ছি আমরা। স্থায়ী পঞ্চায়েত সমিতি না হলে আরও সমস্যা বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

problem district
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE