Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Migrant Workers

রেশন নয়, কাজ চাইছেন পরিযায়ীরা

কর্মসূত্রে পরিবার থেকে দূরে থাকা  শ্রমিকেরা দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে এই কার্ড দেখিয়ে রেশন পাবেন। শ্রমিকদের প্রশ্ন: শুধু রেশন সামগ্রী পেলেই কি চলে যাবে?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১৫
Share: Save:

কেন্দ্রীয় বাজেটে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আলাদা রেশন কার্ডের ঘোষণা নিয়ে নদিয়া জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিরোধীরা যেমন এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিজপিকে আক্রমণ করতে শুরু করেছেন, তেমনই হতাশ পরিযায়ী শ্রমিকেরাও। তাঁদের বক্তব্য, রেশনের চেয়েও বড় চাহিদা কর্মসংস্থান। যদিও এই রেশন কার্ডকেই হাতিয়ার করে প্রচারে নামতে চাইছে বিজেপি।

বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার সুয়োগ না দিয়ে আচমকাই দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে রাস্তাতেই মারা গিয়েছেন অনেক পরিযায়ী শ্রমিক। কেউ কেউ আবার চড়া সুদে মোটা টাকা ঋণ করে বাস ভাড়া করে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। অনেক পরে কেন্দ্র ট্রেনের ব্যবস্থা করলে রাজ্য সরকার তাদের ঘরে ফেরের ব্যবস্থা করে। কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরেও তাঁদের আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হয়। রেশন আর ত্রাণের চালই তাঁদের বাঁচিয়ে রেখেছিল। পরিস্থতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকায় অতিমারির ভ্রুকুটি অস্বীকার করে একে একে ফের ভিন্ রাজ্যে কাজে ফিরতে থাকেন পরিযায়ীরা। কিন্তু সকলেই কাজ ফিরে পাননি। অতিমারির কারণে যে মন্দা দেখা দিয়েছে তাতে কাজ গিয়েছে অনেকের। অনেকেই অন্য পেশা খুঁজে নিয়ে কোনও মতে পরিবারকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

কেন্দ্রীয় বাজেটে ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ প্রকল্প চালু করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কর্মসূত্রে পরিবার থেকে দূরে থাকা শ্রমিকেরা দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে এই কার্ড দেখিয়ে রেশন পাবেন। শ্রমিকদের প্রশ্ন: শুধু রেশন সামগ্রী পেলেই কি চলে যাবে? তেহট্টের বাসিন্দা, পুণের হোটেলে কর্মরত জয়ন্ত ঘোষ বলছেন, “আমরা চাইলাম এক আর দেওয়া হল আর এক। আমরা চাই কাজ। মহারাষ্ট্রে এখনও ২৮ হাজার হোটেল বন্ধ হয়ে আছে। ফলে সকলে কাজ ফিরে পাননি। যাঁদের কাজ নেই সেই সব লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কাজের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। সেটাও না পারলে ছোটখাটো ব্যবসা করার জন্য স্বল্প সুদে সহজ কিস্তিতে ঋণ দিতে পারত। সে সব না করে শুধু মাত্র রেশন দিলে কী লাভ হবে?”

লকডাউনের সময়ে কর্মক্ষেত্রে থেকে ফিরে এসেছিলেন বেথুয়াডহরির আলমগীর শেখ। কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। সেখানে কাজ না থাকায় কর্মস্থলে ফিরতে পারেনি। বাড়িতেই আছেন এখন। স্থানীয় ভাবে যখন যেমন কাজ পাচ্ছেন, সেটাই করছেন। সেই আয়ে সংসার যেন কিছুতেই চলছে না। তাঁর কথায়, “বাইরে কাজ পাব, সেখানে গিয়ে থাকব, তবেই না রেশনের প্রশ্ন। আমাকে যদি সরকার থেকে কিছু টাকা ঋণের ব্যবস্থা করে দিত, তা হলে বরং ভাল হত।”

সিপিএমের নদিআ জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র মতে, “এ সব নির্বাচনী চমক ছাড়া কিছু নয়। এই প্রকল্পের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। পরিযায়ী শ্রমিকরা স্থায়ী সমাধান চাইছেন। সেটা কোথায়?”জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায়ের দাবি, “বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য প্রকল্প নিলেও আমাদের রাজ্যের জন্য কিছুই দিল না নরেন্দ্র মোদীর সরকার। শ্রমিকেরা কাজ চাইছেন, কাজ।”

যা শুনে রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের দাবি, “কাজের ব্যবস্থা তো রাজ্য সরকারকেই করতে হবে। কেন নিজের রাজ্যে কাজ না পেয়ে ওঁদের ভিন্ রাজ্যে যেতে হচ্ছে, তার কৈফিয়ত তো রাজ্যকেই দিতে হবে। মোদী সরকার যে রেশনের ব্যবস্থা করল, সেটা তো উপরি পাওনা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE