Advertisement
০৫ মে ২০২৪
বানভাসি-১

নালা বুজিয়ে ঘর, জলমগ্ন তাহেরপুর

কোথাও হাঁটু জল। আবার কোথাও কোমর অবধি। সেই জলের মধ্যেই সংসার। বর্ষার সেই জমা জলে মানুষ-গবাদি পশু ও মশার যৌথ সংসার। তার উপর সাপের ভয় তো রয়েছেই।

উঠোনে থইথই জল। — নিজস্ব চিত্র

উঠোনে থইথই জল। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তাহেরপুর শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৯
Share: Save:

কোথাও হাঁটু জল। আবার কোথাও কোমর অবধি। সেই জলের মধ্যেই সংসার। বর্ষার সেই জমা জলে মানুষ-গবাদি পশু ও মশার যৌথ সংসার। তার উপর সাপের ভয় তো রয়েছেই। উঠোন পেরিয়ে জল উঠে এসেছে বারান্দায়। ফলে অনেকেই ঘর-ছাড়া। নিরাপদ দূরত্বে কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। দিন দুয়েকের টানা বর্ষণে এমনই হাল হয়েছে তাহেরপুরের বারাসাত গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রামে।

স্বল্প বৃষ্টিতেই কেন এই হাল? রেল লাইনের ধারের ওই এলাকায় অনেকদিন আগে একটি নালা ছিল। এলাকার লোকজন জানাচ্ছেন, ওই নালার মাধ্যমে এলাকার জল গিয়ে পড়ত কিলোমিটার দু’য়েক দূরের বীরনগর খালে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, “বছর কয়েক আগে ওই নালায় দখল নিয়েছে এলাকার কিছু লোকজন। নালা বুজিয়ে তৈরি হয়েছে ঘর-বাড়ি। ফলে নালা বুজে গিয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু কেউ কোনও পদক্ষেপ করেনি।’’আর দখলদারদের গা-জোয়ারি ও প্রশাসনের ঢিলেমির ফলে অকাল বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।মুলি বাঁশের বেড়া ও ত্রিপল ঘেরা ঘরে স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে দিন কাটান পেশায় দিনমজুর উজ্জ্বল দাস। তাঁর ঘরের সামনে হাঁটু সমান জল। জলে দাঁড়িয়েই উজ্জ্বলবাবু বলেন, “আমাদের কি অবস্থা দেখেছেন। তিন দিন ধরে এ ভাবেই ভয়ে-আতঙ্কে কাটছে। বাধ্য হয়ে ছেলেদের এক আত্মীয় বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।” একই কথা শুনিয়ে আর এক বাসিন্দা সবিতা মণ্ডল বলেন, “একদিকে মশার কামড়। তার উপর সাপের ভয়। মেয়েকে বাপের বাড়িতে রেখে এসেছি। জানি না কবে এই জল সরবে।’’

বারাসাত গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর ও দক্ষিণ ভাদুরি, রেলগেটপাড়া, বারাসাত সার্কুলার রোড সহ আশপাশ এলাকার কমবেশি দু’শো পরিবার জলমগ্ন। হাজার বিঘার বেশি চাষের জমি জলের তলায়। রঞ্জিত কুমার দাস বলেন, “বিঘা আটেক জমিতে কলা চালকুমড়ো, পেপে, লাউ, কলা, পটল চাষ করেছিলাম। তিন দিন
গাছের গোড়ায় জমে থাকায় সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

এই অবস্থায় জমা জল বার করে দেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তাহেরপুর রেলেগেটের কাছে রেল অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর ফলে রানাঘাট-কৃষ্ণনগর বাইপাস রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার দু’ধারে সারি দিয়ে বাস লরি দাঁড়িয়ে যায়। অবরোধের খবর পেয়ে ছুটে আসেন রানাঘাট-১ এর বিডিও অনুপম চক্রবর্তী, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস ঘোষ, বারাসাত গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান শেফালি বিশ্বাস। নতুন নালা কেটে জল বার করে দেওয়ার আশ্বাস পেয়ে ঘণ্টা দেড়েক পরে অবরোধ তুলে নেন বাসিন্দারা। কিছুক্ষনের মধ্যে নালা তৈরির কাজও শুরু হয়ে যায়।

বিডিও অনুপমবাবু অবশ্য নালা বুজিয়ে দেওয়ার বিষয়টি জানেন না। তিনি বলেন, “ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে একটা নালা কেটে জল বার করে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তবে ওই এলাকায় কোনও নালা ছিল বলে আমার জানা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drainage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE