ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই কলসি-ঘড়া নিয়ে মহিলারা কল পাড়ের লাইনে দাঁড়ান। পাছে, পানীয় জল ফস্কে যায়। তারপর ঘণ্টা খানেক পর জল আসে। তাও আবার সাকুল্যে আধ ঘণ্টার জন্য। কারও ভাগ্যে জল জোটে, আবার অনেকেই বিফল মনোরথে খালি কলসি নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন। প্রতি বছরের মতো এ বারও গরম প়ড়তেই শুরু হয়েছে পানীয় জলের সঙ্কট। চাকদহের মানুষ হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে রয়েছেন, কবে বন্ধ হবে এই নিদারুণ জলকষ্ট। চাকদহ ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চয়েতের মানুষ গরমে চরম জলকষ্টে ভুগছেন।
জল সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বিদ্যুৎ সঙ্কট। বৈশাখের প্রথম থেকে সকাল-সন্ধ্যায় নিয়ম করে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। কখন আধ ঘণ্টা তো কখনও এক ঘণ্টা পরে আসছে বিদ্যুৎ। আর বিদ্যুৎ চলে গেলে পিএইচই পরিচালিত পানীয় জলের নলকূপগুলিতে জল পড়াও বন্ধ হয়ে যায়। শিমুরালির এক গৃহবধূ বলেন, ‘‘আমরা কি সাধে ভোর বেলা থেকে জলের জন্য লাইন দিয়ে থাকি? আগে ভাগে জল না পেলে, হয়ত আর জলই পাওয়া যাবে না। তারপর যদি বিদ্যুৎ না থাকে, তাহলে তো আর রক্ষা নেই। আবার অনেক সময় জল সরবরাহ হতে হতে বিদ্যুৎ চলে যায়। আর জল পাওয়া যাবে না। তাই, বাধ্য হয়ে ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে ঘরের অন্য কাজ ফেলে জলের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়।’’ একই কথা শুনিয়ে আর এক গৃহবধূ বলেন, ‘‘আমাদের সমস্যার কথা সবাই জানে। কিন্তু, কেউ কিছু করে না। প্রায় দু’বছর আগে বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়া হবে বলে প্রশাসনের লোকজন প্রচার করেছিলেন। সে সবের জন্য বাড়িতে জলের পাইপও পোঁতা হয়। কিন্তু তারপর থেকে প্রশাসনের আর কোনও কর্তার হেলদোল নেই। মাটির নীচে পাইপগুলি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।’’ শুধু শিমুরালি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাই নয়, চাকদহ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যা রয়ে গিয়েছে।
সমস্যা সমাধানের জন্য ভাগীরথী নদী থেকে জল তুলে তা চাকদহের পলাগাছায় পরিশোধন করে ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি ও রাস্তার মোড়ে সরবরাহ করা হবে। এমনটাই ঠিক হয়েছিল বছর খানেক আগে। কিন্তু সে পরিকল্পনা আজও বাস্তবায়িত হল না। সে জল অবশ্য আজও বাড়ি বাড়ি পৌঁছল না। তাতে অবশ্য কী এসে যাই!
বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে গত ১২ ডিসেম্বর চাকদহের প্রগতি সঙ্ঘের ময়দানে ঢাকঢোল পিটিয়ে ওই পানীয় জল প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন পঞ্চায়েত এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। উদ্বোধনের পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও ওই প্রকল্পের জল পাচ্ছেন না ব্লকের সিংহভাগ মানুষ।
চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের মধুচ্ছন্দা গুহ বলেন, ‘‘এখনও পরিস্রুত পানীয় জল অনেক জায়গায় পৌঁছয়নি। কারণ, প্রকল্প কাজ চলছে শম্বুকগতিতে। অথচ ভোটের লোভে শাসকদলের মন্ত্রীরা তখন প্রকল্পের উদ্বোধন করে দিয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড মিটিং নিয়মিত হয় না। ফলে কোথায় কী হচ্ছে, তা আমাদের গোচরে থাকে না। তৃণমূল জল নিয়েও রাজনীতি করছে।’’
চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের হরপ্রসাদ হালদার বলেন, ‘‘৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ করতে গিয়ে পাইপ ফেটে গিয়ে কাজের সমস্যা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনের জন্য কাজ খানিকটা ব্যাহত হয়েছে।’’
চাকদহের বিডিও নিশীথ ভাস্কর পাল বলেন, ‘‘পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। তবে এ পর্যন্ত শতকরা পঞ্চাশ ভাগ জায়গায় জল পৌছেছে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণের কারণে অনেক জায়গায় জলের পাইপ বসাতে সমস্যা হয়েছে। ফলে এত বিলম্ব হচ্ছে। পানীয় জলের জন্য হাহাকার অবস্থায় কিন্তু তৈরি হয়নি।’’ রাজনৈতিক দলগুলির তরজা-পাল্টা তরজা ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের ঘন ঘন আশ্বাস চলছেই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। মানুষের কষ্ট অবশ্য মেটে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy