বিএসএফ সতর্ক। তক্কে তক্কে থাকে পাচারকারীরা। শীত-সকালে কুয়াশা দেখে হোগলবেড়িয়ার এক পাচারকারী আন্দাজ করতে পারে রাতের কুয়াশার বহর। সে বলছে, ‘‘এ লাইনে তো বহু দিন হল। ফলে আন্দাজ একটা তৈরি হয়েই যায়।’’ আর সে আন্দাজ যদি ভুল হয়? হাসছে বছর চল্লিশের ওই যুবক, ‘‘তা হলে দ্বিতীয় পথ ধরতে হবে।’’ সে পথ কেমন?
ওই যুবক জানাচ্ছে, ধরুন, মেঘনা বর্ডার দিয়ে কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু সন্ধ্যার পরে দেখা গেল, কুয়াশা তেমন জমেনি। বিএসএফও বেশ সক্রিয়। তখন চোখ রাখতে হয় উপরের দিকে। জোরালো টর্চের আলো শূন্যে ঘুরবে। তা দেখেই বুঝে নিতে হবে, পরিকল্পনা বদলে গিয়েছে। কিংবা কোন পথ নিরাপদ। তখন হয়তো মেঘনা থেকে সরে এসে কাজ হবে বালিয়া-শিশাতে। না হলে সে দিনের মতো কাজ বন্ধ!
নদিয়া সীমান্তে বিএসএফের এক কর্তা জানাচ্ছেন, শীতের কুয়াশা বড় বিপদের। নাইট-ভিশন ক্যামেরাও খুব কাজে আসে না। আর সেই কারণেই এই কুয়াশাকে কাজে লাগাতে চায় পাচারকারীরা। পাচারের জন্য অবশ্য সবসময় সীমান্ত পেরনোরও দরকার পড়ে না। এ পার থেকে ছুড়ে দেওয়া হয় গাঁজা বা কাশির সিরাপ। ও পার থেকে উড়ে আসে প্লাস্টিকে মোড়ানো টাকা। কাঁটাতার ডিঙিয়ে সে প্লাস্টিক জলে পড়লে ঝপাং করে শব্দ হবে। কিন্তু ভিতরের জিনিস ভিজবে না।
সে টাকা যে সব সময় আসল হবে তারও মানে নেই। এখন যেমন মুর্শিদাবাদের কিছু সীমান্ত দিয়ে ও পারে যাচ্ছে মাদক। আসছে জাল টাকা। ফরাক্কা থেকে নিমতিতা প্রায় ৩০ কিলোমিটার গঙ্গাপাড়ের এলাকা মুর্শিদাবাদে পড়লেও সেখানকার সীমান্ত এলাকা পড়েছে মালদহে। দৌলতপুর, শোভাপুর সীমান্ত জাল টাকার কারবারের সবচেয়ে বড় রাস্তা।
বিএসএফের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, আগে ছিল পাঁচশো ও এক হাজার টাকার জাল নোট। এখন তা দু’হাজার টাকার। একটা ছোট ব্যাগে ৫-৭ লক্ষ টাকা অনায়াসেই কাঁটাতার টপকে এ পারে চলে আসছে।
মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান লাগোয়া গঙ্গার অন্য পাড়ে বৈষ্ণবনগর থানার একাধিক চরের গ্রাম। সেই চর দিয়েই ধুলিয়ানে ফেরিঘাট পেরিয়ে মুর্শিদাবাদে ঢুকছে সেই সব জাল নোট। জাল নোটের কারবারে বারবার উঠে এসেছে মহব্বতপুর, চর অনন্তপুর, শোভাপুর, হাজিনগর, পার দেওনাপুরের মতো গ্রামের নাম।
মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ধরপাকড় কম হচ্ছে না। কিন্তু পাচারে রাশ টানতে সচেতন হতে হবে সীমান্তের বাসিন্দাদেরও। না হলে বিপদ আরও বাড়বে।
তথ্য সহায়তা: কল্লোল প্রামাণিক ও বিমান হাজরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy