Advertisement
E-Paper

টাকার গেরোয় মাটি হল জগদ্ধাত্রী পুজোর মেজাজ

জগজ্জননীর সংসারেও যে এমন হবে, কে জানত!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৩
কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে চলছে পুজো। — সুদীপ ভট্টাচার্য

কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে চলছে পুজো। — সুদীপ ভট্টাচার্য

জগজ্জননীর সংসারেও যে এমন হবে, কে জানত!

কে জানত, পুজোর জন্য যত্ন করে রেখে দেওয়া পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোটগুলো দুম করে অচল হয়ে যাবে!

পকেটে টাকা থাকা সত্ত্বেও বচ্ছরকার দিনে ঠাকুর দেখতে এসে সন্তানের বায়না পূরণ করা যাবে না, কে জানত!

অথচ তাই হল। ভার হয়ে থাকল কচি মুখ। বাবার গলায় নোনতা স্বাদ। মা বললেন, ‘‘চল না, আরও দু’টো ঠাকুর দেখব। ও পাড়ার মণ্ডপটা আলো দিয়ে যা সাজিয়েছে না। তাক লেগে যাবে।’’

বছর চারেকের বিতনুর কিচ্ছু ভাল লাগেনি। লাগবে কী করে? সে তো ভাল করে কিছু দেখতেই পায়নি। চোখের জলে সব ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল যে। বাড়ি ফিরেও সে সমানে বলে গিয়েছে, ‘‘ব্যাটারি দেওয়া বন্দুকটা কী ভাল ছিল।’’

কৃষ্ণননগরের বাসু ঘোষের গলায় আক্ষেপ, ‘‘মধ্যবিত্তের সংসারে দিনরাত শুধু আপস আর আপস। তাই বলে পুজোর সময়েও ছেলেটাকে ওর পছন্দের খেলনাটা কিনে দিতে পারলাম না!’’

বুধবার সন্ধ্যায় সপরিবার ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন বাসু। পকেটে একটি একশো ও বেশ কয়েকটি পাঁচশো টাকার নোট ছিল। ছেলের যে খেলনা বন্দুকটি পছন্দ হয়েছিল তার দাম ছিল ১০০ টাকা। এ দিকে ওই খেলনাওয়ালা পাঁচশো টাকার নোট নেবেন না। আর বাসুবাবু একশো টাকা দিয়ে দিলে পরের দিন বাজারে যেতে পারবেন না। অগত্যা খেলনা বন্দুককে ছেড়ে রূঢ় বাস্তবের হাত ধরতে বাধ্য হয়েছেন বাসু।

কৃষ্ণনগরের ওই যুবক একা নন, নদিয়ার কৃষ্ণনগর, তেহট্ট, রানাঘাট ও মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, কান্দি, বহরমপুরের মতো এলাকাতেও পুজোর আনন্দ অনেকটাই মাটি করে দিয়েছে টাকার গেরো। পুজো দেখতে ভিড় মন্দ হয়নি। কিন্তু সেই ভিড় পুজো উপলক্ষে গজিয়ে ওঠা অস্থায়ী দোকান পর্যন্ত তেমন ভাবে আসেনি।

কেউ কেউ মেলার ভিড়ে চেষ্টা করেছিলেন পাঁচশো কিংবা হাজার টাকার নোট চালিয়ে দিতে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সে চেষ্টা সফল হয়নি। আর এমন আকালে একশো টাকা খরচ করার ঝুঁকিও সে ভাবে নেননি অনেকেই। আর তার যা ফল হওয়ার তাই হয়েছে।

চুপসে রয়েছে দোকানে সাজানো তেলেভাজা, মিষ্টি। মনমরা হয়ে ঘুরে চলেছে নাগরদোলা। ক্রেতার পথ চেয়ে বসে আছেন আশপাশের এলাকা থেকে উজিয়ে এসে মেলায় দোকান দেওয়া বিক্রেতারা। কিন্ত ক্রেতা কই!

সালারের কাগ্রামে জগদ্ধাত্রী পুজোর মেলাতে এসেছিলেন সমর দাস। বলছেন, ‘‘কী বিপদ বলুন তো। সেই সকাল থেকে সব্জি বাজার, মুদির দোকান ঘুরে তিনটে একশো টাকা শেষ। বাকি যে দু’টো আছে সেগুলো মেলায় খরচ করলে কাল কী হবে? ব্যাঙ্কে যা লাইন পড়বে তাতে এই টাকাটা বাঁচিয়ে না রাখতে তো মুশকিলে পড়তে হবে।’’

ধুবুলিয়ার শ্যামল বিশ্বাস কিংবা কৃষ্ণনগরের বাঘাডাঙার জিতেন্দ্র পাত্ররাও কবুল করছেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতের পর থেকে ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট নেওয়ার ঝুঁকি আমরাও নিচ্ছি না। আর সেই কারণেই এ
বারের পুজোর ব্যবসা একেবারে শিকেয় উঠল।’’

তবে উল্টো পথেও হেঁটেছেন কেউ কেউ। ঘূর্ণির ধর্মরাজ পাল কৃষ্ণনগরের হাইস্ট্রিটে পোড়ামাটির পুতুলের দোকান দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘‘আমি ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিয়েছি। কারণ সরকার তো ওই টাকা ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকদিন সময় দিয়েছে। ফলে অসুবিধা কোথায়?’’ বলাই বাহুল্য, অন্যদের থেকে তাঁর কেনাবেচা ভালই হয়েছে।

নোট বাতিলের জেরে সমস্যায় পড়েছে পুজো কমিটিগুলিও। চাঁদা থেকে পুরোহিতের দক্ষিণা, ঢাকির পাওনা থেকে ভোগের বাজার সবর্ত্রই সেই এক পোঁ, ‘‘একশো টাকা দিন।’’

বেকায়দায় পড়ে কেউ কেউ উগড়ে দিয়েছেন ক্ষোভ, ‘‘মোদীর উদ্যোগটা হয়তো ভাল। কিন্তু এটা তো জগদ্ধাত্রী পুজোর পরেও করা যেত! উৎসবের মেজাজটাই মাটি করে দিল।’’

500 and 1000 rs banned Unhappy Jagadhatri Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy