Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Heatwave

গরমে সকালে স্কুলের দাবি প্রাথমিকে

শিক্ষকেরাই জানাচ্ছেন, প্রচণ্ড গরমে স্কুলে গিয়ে হাঁসফাঁস করছে পড়ুয়ারা। অসুস্থও হয়ে পড়ছে অনেকে। কোথাও কোথাও স্কুল চলাকালীন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে বলেও অভিযোগ। সেই সময়ে পরিস্থিতি অবর্ণনীয় হয়ে উঠছে।

সকাল যেন তপ্ত দুপুর। চড়া রোদে স্কুলের পথে খুদেরা মঙ্গলবার রানাঘাটে। ছবি: সুদেব দাস

সকাল যেন তপ্ত দুপুর। চড়া রোদে স্কুলের পথে খুদেরা মঙ্গলবার রানাঘাটে। ছবি: সুদেব দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩০
Share: Save:

রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে তাপমাত্রার পারদ। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও বাড়বে। একাধিক জেলায় হলুদ সর্তকতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। তপ্ত দুপুরে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের গরমের হাত থেকে রেহাই দিতে ইতিমধ্যেই স্কুলের সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। একাধিক জেলায় প্রাথমিক স্কুলের সময় সকাল ১০টা ৫০-এর পরিবর্তে সকাল ছ’টা বা সাড়ে ছ’টায় করা হয়েছে। সেই তালিকায় পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদের নাম থাকলেও ব্যতিক্রম নদিয়া জেলা। ফলে, পার্শ্ববর্তী জেলার প্রাথমিকের পড়ুয়ারা বেলার মধ্যেই স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে পারলেও নদিয়া জেলার পড়ুয়াদের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। গরমের মধ্যেই তাদের স্কুলে যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাই নদিয়াতেও প্রাথমিকে সকালে স্কুল চালুর দাবি তুলেছে অভিভাবক ও শিক্ষকদের একাংশ।

শিক্ষকেরাই জানাচ্ছেন, প্রচণ্ড গরমে স্কুলে গিয়ে হাঁসফাঁস করছে পড়ুয়ারা। অসুস্থও হয়ে পড়ছে অনেকে। কোথাও কোথাও স্কুল চলাকালীন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে বলেও অভিযোগ। সেই সময়ে পরিস্থিতি অবর্ণনীয় হয়ে উঠছে। দুঃসহ গরমে শরীরে জল কমে গিয়ে দেখা দিচ্ছে ‘ডিহাইড্রেশন’ সমস্যাও। নদিয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি ভাবে কাগজে-কলমে গ্রীষ্মকালীন ছুটি আগামী ৬ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত নির্দিষ্ট করা রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে আবার লোকসভা নির্বাচন। সূত্রের খবর, ১৯ এপ্রিল রাজ্যের যে সকল জেলায় প্রথম দফা নির্বাচন রয়েছে, সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়তি ছুটি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ভোট থাকা জেলাগুলিতেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৪ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত অতিরিক্ত ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে নদিয়া জেলার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনও অতিরিক্ত ছুটির কথা ঘোষণা হয়নি।

অন্য দিকে, গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে খুদে পড়ুয়াদের বাঁচাতে একাধিক জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সকালে স্কুল চালু করেছে। কিন্তু নদিয়া জেলার ক্ষেত্রে তা হয়নি। জানা গিয়েছে, নদিয়া জেলায় তিন হাজারের বেশি থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় চার লক্ষের বেশি পড়ুয়া রয়েছে। মঙ্গলবারও প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তাদের সকাল ১০টা ৫০ মিনিট থেকে দুপুর সাড়ে তিনটে পর্যন্ত স্কুলে ক্লাস করতে হয়েছে।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, এই গরমে পড়ুয়াদের নাজেহাল অবস্থা। ক্লাস চলাকালীন কেউ ব্যাগ থেকে খাতা বার করে হাওয়া করছে। কেউ আবার ঘন ঘন জল খাচ্ছে। একাধিক জেলায় তাপপ্রবাহের হলুদ সর্তকতা জারি করা হয়েছে। সেই তালিকায় নদিয়া জেলারও নাম রয়েছে। অথচ, ওই তাপপ্রবাহের মধ্যেই ভরদুপুরে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কী ভাবে স্কুলে ক্লাস করবে, সে ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। মঙ্গলবার স্কুল শুরুর আগে রানাঘাটের আনুলিয়া বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল অভিভাবক বিশ্বজিৎ ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের সময় সকালের দিকে এগিয়ে নিয়ে এলে খুবই ভাল হয়। তাতে অন্তত দুপুর বারোটার মধ্যে ছেলেমেয়েরা বাড়ি ফিরতে পারবে।’’ ওই এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ শেখ বলেন, ‘‘নাতনি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ওকে স্কুলে নিয়ে আসা ও বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কাজ আমি করি। সকাল দশটা বাজলেই রোদের যা তেজ, ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় থাকে না। এই গরমে ওদের দুপুরে স্কুল চালু রাখার কোনও যুক্তি নেই।’’ ইতিমধ্যেই উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার অ্যাসোসিয়েশন ও নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি নদিয়া জেলার তরফে প্রাথমিকে স্কুলের সময়সূচি এগিয়ে আনার দাবিতে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিকের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সুকুমার পসারি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমরাও আলোচনা করছি। দ্রুত যাতে মর্নিং স্কুল চালু করা যায় সেই
চেষ্টাই চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Heatwave Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE