Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
বিপ্রশিখর গ্রাম পঞ্চায়েত

নিয়মের গেরোয় অচল পঞ্চায়েত

দিন পাঁচেক ধরে তালাবন্দি বড়ঞার বিপ্রশিখর পঞ্চায়েত। গত সোমবার স্থানীয় বাসিন্দারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়ে দেন। প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা বার বার চেষ্টা করেও ওই প়়ঞ্চায়েতের তালা খুলতে পারেননি। গ্রামবাসীদের দাবি, পঞ্চায়েত থাকার চেয়ে না থাকায় ভাল।

পঞ্চায়েত ভবনের সামনে বিক্ষোভ বাসিন্দাদের।—নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েত ভবনের সামনে বিক্ষোভ বাসিন্দাদের।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বড়ঞা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৬ ০১:১৩
Share: Save:

দিন পাঁচেক ধরে তালাবন্দি বড়ঞার বিপ্রশিখর পঞ্চায়েত। গত সোমবার স্থানীয় বাসিন্দারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়ে দেন। প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা বার বার চেষ্টা করেও ওই প়়ঞ্চায়েতের তালা খুলতে পারেননি। গ্রামবাসীদের দাবি, পঞ্চায়েত থাকার চেয়ে না থাকায় ভাল। প়়ঞ্চায়েতের মাধ্যমে এলাকার কোনও উন্নয়নই হচ্ছে না।

মঙ্গলবার সকালে বড়ঞার বিডিও রুডেন শেরিং লামা ও বড়ঞা থানার পুলিশ গিয়ে ওই পঞ্চায়েতের তালা খোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তাঁরা ফিরে আসেন। বিডিও বলেন, “প্রধানের পদ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। তাই উপ-প্রধান ওই পঞ্চায়েতের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর হাতে কোনও আর্থিক ক্ষমতা নেই। ফলে উন্নয়ন মার খাচ্ছে। এতেই বোধবয় ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকার লোকজন পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়েছেন।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত এক বছর ধরে ওই পঞ্চায়েত এলাকায় রাস্তাঘাট থেকে নলকূপ কোন কিছুই নতুন করে তৈরি তো দূরের কথা। বিকল হলে সারানো অবধি হয় না। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কেউ কাজ পাননি।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পঞ্চায়েত ১৫টি আসনের মধ্যে সিপিএম ৫টি, আরএসপি ৩টি, কংগ্রেস ৬টি ও নির্দল একটি আসনে জয়ী হয়। নির্দল সদস্যের সমর্থনে বামেরা পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখল করে। সিপিএমের শাহাজামাল মল্লিক প্রধান হন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই প্রধানের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অনাস্থা আনে কংগ্রেস। ওই অনাস্থায় পক্ষে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ায় সিপিএমের দু’জন একজন নির্দল সদস্য। কংগ্রেস পঞ্চায়েতের দখল নেয়। প্রধান হন কংগ্রেসের বানী পাল ও উপ-প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন নির্দল সদস্য কৃষ্ণা দে।

এর পরেই শুরু হয় পঞ্চায়েতে অচলাবস্থা। পদচ্যূত শাহাজামাল মল্লিক আর্থিক দুর্নীতির প্রমাণ চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্ট কংগ্রেসের প্রধানকে কাজকর্ম করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে উপ-প্রধানকে প্রধানের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়। জানানো হয়, উপ-প্রধানের হাতে কোনও আর্থিক ক্ষমতা থাকবে না। তারপর থেকেই পঞ্চায়েতে সব রকম উন্নয়নমূলক কাজকর্ম থমকে গিয়েছে। বছর খনেক ধরে ওই পঞ্চায়েত জন্ম ও মৃত্যু শংসাপত্র প্রদান ছাড়া অন্য কোনও কাজ করছে না। শাহাজামাল মল্লিক বলেন, “আর্থিক দুর্নীতির প্রমাণ চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।’’

আর এ সবে নিত্যদিন পরিষেবা না পেয়ে ভুগছেন এলাকার বাসিন্দারা। ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিপ্রশিখর, ফুলশিখর, সৈয়দপাড়া, বাওগ্রাম, দেবগ্রামের মতো ২২টি গ্রামে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসবাস। পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ১৫৫টি নলকূপ রয়েছে। তারমধ্যে ১৪৮টি নলকূপই বিকল হয়ে পরে আছে। সৈয়দপাড়াতে ১৭টি নলকূপের মধ্যে ১৪টি এক বছর ধরে বিকল হয়ে পরে রয়েছে। একই ভাবে সংস্কারহীন খানাখন্দে ভরপুর রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাওগ্রামের বাসিন্দা মির্জা রাজু ও তাপস দাসরা বলেন, “পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কোন কাজই হচ্ছে না। ভাঙা রাস্তা দিয়ে হাঁটাই দায় পড়ে পড়ছে। পঞ্চায়েত থেকে কোনও লাভ হচ্ছে না।’’

উপ-প্রধান কৃষ্ণাদেবী অসহায় সুরে বলছেন, “আমার হাতে আর্থিক ক্ষমতা নেই। ফলে কিছুই করতে পারছি না। উন্নয়ন খাতের ৫২ লক্ষ টাকা পরে রয়েছে। কিন্তু তা খরচ করতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Dwellers Extortion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE