Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্বস্তির বৃষ্টিতে ভরসা খুঁজছে চাষি

দিনভর ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস। বাতাসে আদ্রতার বাড়বাড়ন্তে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। কুলকুলে ঘাম। বিকেলে পর থেকেই ঘোলাটে মেঘ। সন্ধ্যায় কিম্বা শেষরাতে প্রবল ঝড়বৃষ্টি। সঙ্গে ঘনঘন বজ্রপাত। কখনও আবার শিলাবৃষ্টি।

বৃষ্টির পরে নতুন উদ্যমে খেতে নেমেছেন চাষি। করিমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

বৃষ্টির পরে নতুন উদ্যমে খেতে নেমেছেন চাষি। করিমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০২:৩৫
Share: Save:

দিনভর ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস। বাতাসে আদ্রতার বাড়বাড়ন্তে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। কুলকুলে ঘাম। বিকেলে পর থেকেই ঘোলাটে মেঘ। সন্ধ্যায় কিম্বা শেষরাতে প্রবল ঝড়বৃষ্টি। সঙ্গে ঘনঘন বজ্রপাত। কখনও আবার শিলাবৃষ্টি।

বৈশাখ-জষ্টি ঝড়জলের মাস। সেই সঙ্গে কালবৈশাখীরও বটে। কিন্তু নিম্নচাপের পিঠে চড়ে ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসের’ ঢের আগেই রাজ্যে ঢুকে পড়া মেঘদূতের ছোঁয়ায় তাপমাত্রার পারদপতন ৪১ থেকে একেবারে ৩২ ডিগ্রিতে। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে দফায় দফায় ঝরা স্বস্তির বৃষ্টিতে সবচেয়ে খুশি রাজ্যের চাষিরা। কৃষি বিশেষজ্ঞরাও জানাচ্ছেন প্রাক-বর্ষার বৃষ্টিভেজা আকাশ সত্যিই সুখবর বয়ে এনেছে কৃষকদের কাছে।

কৃষি বিশ্লেষকদের মতে গত কয়েক বছর ধরে অস্বাভাবিক আবহাওয়ার মধ্যে দিয়েই চলেছে চাষাবাদ। প্রকৃতির এই খাম-খেয়ালিপনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন জেলায় জেলায় চাষিরা। আম, লিচু, কলা থেকে শুরু করে ধান,পাট, তিল, মরশুমি শাকসব্জি, পটল থেকে পান কিছুই বাদ পড়েনি প্রকৃতির কোপ থেকে। কোথাও কোথাও কাটার ঠিক আগে মাঠেই ক্ষতিগ্রস্ত বোরোধান।

কখনও ঝড়, কখনও শিলাবৃষ্টি। আবার কখনও মানুষেরই মতো জীবানুঘটিত সংক্রমণে বিপর্যস্ত ফসল। নদিয়ায় পান, লিচু, কলা,পটল কিম্বা বর্ধমানে কিছু এলাকায় ধান, পাট, তিল আবহাওয়ার খেয়াল খুশির শিকার হয়েছে।

২০১৪ সালের শীতকাল থেকেই এক দীর্ঘমেয়াদি অনাবৃষ্টির মরসুম শুরু হয়েছিল। জলের অভাবে মাঠে মাঠে বাড়বৃদ্ধি থেমে গিয়েছিল শাকসব্জির। লাগাতর বৃষ্টিহীনতার কারনে জলের অভাবে শুকিয়ে মরতে বসেছিল পাট। রাজ্যের প্রধান অর্থকরী ফসলের হাল দেখে শিউরে উঠে ছিলেন পাটচাষি থেকে ব্যবসায়ি সকলেই। খারিফ মরসুম পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে গিয়েছিল আমন চাষি। ঠিক তখনই বৃষ্টির অপ্রত্যাশিত আগমনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন কৃষি বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারন কৃষক সকলেই। নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছিল চাষের কাজ।

কিন্তু ২০১৫ সালের ঠিক এই মে-জুন মাস থেকেই শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। অনাবৃষ্টি রাতারাতি বদলে গিয়েছিল অতিবৃষ্টিতে। লাগামছাড়া সেই বৃষ্টিতে মাঠেই নষ্ট হয়েছিল বোরোধান। তারপরই অসময়ের প্রবল বন্যায় ভেসে গিয়েছিল গোটা রাজ্য। কেবল মাত্র পাটচাষি ছাড়া গত বছর কোন চাষ থেকেই লাভের মুখ দেখেনি রাজ্যের চাষিরা।

গতবারের এই তিক্ত স্মৃতি নিয়েই এ বছর মরসুম শুরু করেছেন চাষিরা। কিন্তু এ বছর এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া দেখে তাঁদের মুখে চওড়া হাসি। চাষিদের অভিজ্ঞ চোখ বলছে এমন আবহাওয়া থাকলে এ বারে আমন থেকে আম সবেতেই ভালো ফসল হবে।

কৃষি বিশ্লেষক তথা রাজ্যের প্রাক্তন কৃষি আধিকারিক নিশীথ কুমার দে বলেন, “ এই বছর এখনও পর্যন্ত যে ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাপমাত্রা এবং সূর্যালোক সবই আদর্শ চাষের অনুকুল। সুতরাং পাট থেকে সব্জি, ধান সবই ভালো হওয়ার কথা।” চাষিরাও অনেক দিন পরে অনুকুল আবহাওয়া পেয়ে লেগে পড়েছেন মাঠের কাজে।

বর্ধমানের সহকারী কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “প্রথম দিকে এবারও একটা খরার আশঙ্কা তৈরি হয়ে ছিল। কিন্তু এখন আর কোন সমস্যা নেই। মাঠে পাটের চমৎকার বৃদ্ধি হয়েছে। প্রায় দু ফুট উচ্চতায় পৌছে গিয়েছে গাছ। অন্য দিকে সঠিক সময়ে বৃষ্টি পেয়ে চাষিরা আমনের বীজতলা তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। সবচেয়ে ভালো শাকসব্জির জন্য। বাজারে সব্জির দামে ইতিমধ্যেই প্রভাব পড়েছে। এমন চলতে থাকলে সব্জির দাম কমে যাবে। ”

পাশাপাশি এবার আমের মরা-মরসুম হলেও এপ্রিলে যেমন গরমে আম বা লিচু ফেটে যাচ্ছিল পরের দিকে সেই সমস্যা কেটে গিয়েছে। নদিয়ার লিচু ব্যবসায়ি প্রভাস হালদার বলেন “এ বার লিচুর ফলন বেশ ভালো। প্রথম দিকে কিছু সমস্যা হলেও এখন বাজারে খুব ভালো জাতের লিচু উঠছে।”

হিমসাগর আমের আমদানী শুরু হয়েছে। গোলাপখাসের মতো মরশুমের শুরুর দিকের আম ইতিমধ্যেই বাজারে জমিয়ে বসেছে। তবে দাম ৪০ টাকার নিচে নামে নি। হিমসাগরও বাজারে আসতে শুরু করেছে। পঞ্চাশ টাকার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে দাম। চাষিরা বলছেন জামাইষ্ঠীর আগেই ভালো জাতের হিমসাগরে বাজার ছেয়ে যাবে।

নিয়মিত ব্যবধানে সামঞ্জস্য পূর্ণ বৃষ্টি সঙ্গে মানানসই তাপমাত্রার যুগলবন্দীতে আপাতত খুশির মেজাজেই আছেন চাষিরা। নদিয়ার তপন বিশ্বাস কিম্বা পূর্বস্থলীর সুদেব দাঁ মনে করেন, গত বছর পাটে ভালো পয়সা দিয়েছিল বলে এবার অনেক বেশি মানুষ পাট চাষে ঝুঁকেছেন। কিন্তু যদি এভাবেই আবহাওয়া সঙ্গত করে, তাহলে আম থেকে আমন, শাক থেকে শসা সবেতেই পয়সা পাবেন চাষিরা। সেই ভরসাতে জমির আলে দাঁড়িয়ে কেবলই আকাশ দেখছেন ওঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cultivation Monsoon Rain Farmers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE