Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
গেরস্থ বাড়ি, হোটেল বা রেস্তোরাঁর অন্দরসজ্জার জন্য রয়েছে বিপুল চাহিদা

বিকল্প অর্কিড চাষে উৎসাহ বাড়ছে চাষিদের

সূক্ষ জালের আচ্ছাদনে ঢাকা কাঠা দুয়েকের খেত। যেন লখিন্দরের বাসর ঘর। ‘শেড নেটে’ ঢাকা ওই ঘরেই বড় হচ্ছে ঈশ্বরের নিজস্ব ফুল, অর্কিড। ঠান্ডা, স্যাঁতস্যাঁতে পাহাড়ি এলাকার গাছ হলেও অর্কিডের বিশেষ কিছু প্রজাতি উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে জন্মায়।

চাষ: শেডনেটের ছায়ায় ফুটেছে অর্কিড। নিজস্ব চিত্র

চাষ: শেডনেটের ছায়ায় ফুটেছে অর্কিড। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ১২:৩৬
Share: Save:

সূক্ষ জালের আচ্ছাদনে ঢাকা কাঠা দুয়েকের খেত। যেন লখিন্দরের বাসর ঘর। ‘শেড নেটে’ ঢাকা ওই ঘরেই বড় হচ্ছে ঈশ্বরের নিজস্ব ফুল, অর্কিড।

ঠান্ডা, স্যাঁতস্যাঁতে পাহাড়ি এলাকার গাছ হলেও অর্কিডের বিশেষ কিছু প্রজাতি উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে জন্মায়। সেই বিশেষ প্রজাতির অর্কিডের বাণিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু হয়েছে বর্ধমান ও নদিয়ায়। পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ শুরু করেছেন মুর্শিদাবাদের জনাকয়েক চাষিও।

উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে প্রধানত ডেনড্রোবিয়াম এবং ক্যাটালিয়া প্রজাতির অর্কিডের চাষ হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভাবে অর্কিড চাষে পথ দেখাচ্ছেন বর্ধমানের পূর্বস্থলীর শঙ্কর দত্ত বা গৌতম ভট্টাচার্যের মতো বাগিচা চাষিরা। পিছিয়ে নেই নদিয়ার রানাঘাট ও নাকাশিপাড়াও।

নদিয়ার উদ্যানপালন আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু ঘোড়ুই বলছেন, ‘‘নাকাশিপাড়ায় দেড় হাজার বর্গমিটার এলাকায় অর্কিডের জমি তৈরি করা হয়েছে।” পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ শুরু হয়েছে মুর্শিদাবাদেও। মুর্শিদাবাদের উদ্যান পালন আধিকারিক গৌতম রায় বলেন, “এখনও সংগঠিত ভাবে চাষ শুরু হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।’’

বর্ধমানের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, লোহার পাইপ দিয়ে তৈরি দু-আড়াই ফুট উঁচু বিশেষ টেবিলে টবে করে চাষ করা হয় অর্কিড। টবে মাটির বদলে থাকে নারকেলের ছোবড়া। শেডনেট দিয়ে ঘেরা ঘরের মতো দেখতে অর্কিড খেতে সরাসরি রোদের প্রবেশ নিষেধ। সারাদিনে বার বার জল দিয়ে ভিতরের স্যাঁতস্যাঁতে ভাবটা বজায় রাখতে হয়। কেউ আবার কাঠকয়লা বা ইটের টুকরো দিয়েও অর্কিডের জমি তৈরি করেন।

অর্কিড চাষি শঙ্কর দত্ত জানান, তিনি একটি সংস্থার মাধ্যমে তাইল্যান্ড থেকে অর্কিডের চারা সংগ্রহ করছেন। ছ’-সাত ইঞ্চির এক একটি চারার দাম পড়ছে আশি থেকে একশো টাকার মধ্যে। দেড় বছর পরিচর্যার পরে সেই গাছ থেকে নতুন গাছ এবং ফুল দুই-ই পাওয়া যাচ্ছে। একটি অর্কিড পরিণত হতে পনেরো মাস থেকে দেড় বছর সময় নেয়। তারপর তা থেকে দীর্ঘ দিন ধরে ফুল এবং নতুন চারা পাওয়া যায়।

চাষিরা জানাচ্ছেন, একটি অর্কিড ফুলের দাম চল্লিশ বা পঞ্চাশ টাকা। ফুলের পাশাপাশি টব-সহ একটি অর্কিডের দাম আড়াইশো টাকা থেকে শুরু। কিন্তু এত দামী ফুল কিনবে কে? অর্কিড চাষি গৌতম ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘অর্কিডের ফুল দীর্ঘ দিন অবিকৃত থাকে। ফলে গৃহস্থবাড়ি থেকে দামী হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁর অন্দরসজ্জার জন্য অর্কিডের বিপুল চাহিদা রয়েছে।’’

ফ্ল্যাটবাড়ির রোদ্দুরহীন বারান্দায় অর্কিডের ঝুলন্ত টবে সময় করে একটু জল। তাহলে পুষ্পপ্রেমীদের আদরের ‘গড’স ওন ফ্লাওয়ার’ ফুটে ওঠা কেবল সময়ের অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Orchid Cultivation Farmers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE