Advertisement
E-Paper

ওষুধ বাজারে দাওয়াই নেই আগুনের

পুরনো বটের মতো ঝুলে রয়েছে বিদ্যুতের তার, সরু গলির আড়ালে কবেকার পুরনো বাড়ি— বাজার। যেখানে মিটার বক্সের গায়েই গনগন করছে গ্যাস ওভেন, প্লাস্টিকের পসরার পাশে থেকে থেকেই ঝলসে উঠছে ছেঁড়া বিদ্যুতের তার। আস্ত জতুগৃহে পা রাখল আনন্দবাজার। ঘড়িতে তখন রাত ৮টা হবে। একটু আগেই দোকানের ঝাঁপ ফেলে বাড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছিলেন ওষুধের দোকানের মালিক। খানিক পরেই খবর এল। দোকানের সাটারের ফাঁক দিয়ে নাকি গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে দেখা গিয়েছে।

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০১:৩১
আগুন লাগলে পালানোর পথ নেই।— গৌতম প্রমাণিক

আগুন লাগলে পালানোর পথ নেই।— গৌতম প্রমাণিক

ঘড়িতে তখন রাত ৮টা হবে। একটু আগেই দোকানের ঝাঁপ ফেলে বাড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছিলেন ওষুধের দোকানের মালিক। খানিক পরেই খবর এল। দোকানের সাটারের ফাঁক দিয়ে নাকি গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে দেখা গিয়েছে।

মাস চারেক আগের ঘটনা। সে দিন বহরমপুরের ওষুধ মার্কেটে ওই দোকান খুলিয়ে কোনও মতে আগুন নেভান ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আতঙ্ক তাড়া করে বেরাচ্ছে এখনও। সেই ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে ‘বিসিডিএ’ ভবনের ওষুধ কারবারিদের।

কিন্তু এ হেন ঘটনার পরেও ‘অগ্নিনিরাপত্তা’ নিয়ে হুঁশ ফেরেনি ব্যবসায়ীদের। চারতলা ওই বাজারের নীচের তলা যেন আক্ষরিক অর্থেই জতুগৃহ। বিদ্যুতের মিটারের পাশেই ডাঁই করে সাজানো রয়েছে গুচ্ছের দাহ্য পদার্থ। ফলে কোনও কারণে আগুন লাগলে তা দাবানলের আকার নেবে এক নিমেষেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা শুধুই চিন্তিত কারবারের হালহকিকত নিয়ে। ‘‘আগুন লাগলে দেখা যাবে,’’ ভাবগতিক এমনটাই।

চিন্তা নেই প্রশাসনেরও। ব্যবসায়ীদের অগ্নিবিধির পাঠ দেওয়া তো দূরঅস্ত, কোনও পদক্ষেপই করেনি তারা। ব্যবসায়ী সংগঠনও এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগ। অবশ্য সংগঠনেরও বড় নড়বড়ে দশা। আসলে বছর দেড়েক আগে সংগঠনের জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে ‘অভিভাবকহীন’ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’—এর চার তলা ভবনটি। রাজ্য স্তরের যে নেতারা দেখভাল করছেন ওষুধ বাজারের, তাঁরাও থাকেন কলকাতায়। ফলে বহরমপুরের মতো মফস্সল শহরের নতুনবাজার এলাকার ওই ভবন যে তিলে তিলে জতুগৃহে পরিণত হয়েছে, তা কলকাতায় বসে টের পাচ্ছেন না সংগঠনের কর্মকর্তারা।

এই সুযোগে বাজারের বিভিন্ন দোকানে মজুত রয়েছে স্পিরিট, তুলো, গজ, ব্যান্ডেজের মত দাহ্য পদার্থ। ওই সব দাহ্য পদার্থ কোনও ভাবে আগুনের সংস্পর্শে এলে নিমেষে পুড়ে খাক হয়ে যাবে গোটা ভবন। এ দিকে ভবনের ভিতরে দমকলের গাড়ি ঢোকার কোনও ব্যবস্থাও নেই। ফলে আগুন লাগলে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও উপায় থাকবে না, আশঙ্কা দোকান মালিকদের একাংশের।

এ সব কথাই মানছেন বিসিডিএ-এর প্রাক্তন জেলা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। তাঁর আরও বক্তব্য, পাশের প্রাঙ্গন মার্কেটের থেকেও ওষুধ বাজারের হাল খারাপ। তাঁর বক্তব্য, প্রাঙ্গন মার্কেটে তা-ও দমকলের গাড়ি ঢোকার সংস্থান রয়েছে, কিন্তু এখানে তা-ও নেই। আগুন লাগলে জনবহুল ঘিঞ্জি রাস্তা পেরিয়ে দমকলের গাড়ি আসতেই অনেকটা লেগে যাবে। ততক্ষণে সব পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

১৯৮৪ সালে কাঠা পাঁচেক জমির উপর তৈরি হয় বিসিডিএ ভবন। চারতলা ভবনে ২৭টি দোকান রয়েছে। বিসিডিএ ভবনকে ঘিরে আশপাশে কয়েকশো ওষুধের দোকান তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে ওষুধ মার্কেটে এখন শ’চারেক দোকান। বাজারের পূর্ব দিকে খাগড়াগামী বড় রাস্তা ও পশ্চিমে নতুনবাজারের বড় রাস্তা। মাঝে তিন ফুট চওড়া ঢালাইয়ের সরু গলি পূর্ব ও পশ্চিমের বড় রাস্তার সংযোগ রক্ষা করেছে। ওই গলি রাস্তার দু’দিকে পর পর ওষুধের দোকান গজিয়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো। সংকীর্ণ ওই গলি রাস্তার উপরেই ফেলা হচ্ছে ওষুধ বোঝাই পিচবোর্ডের বাক্স। তার মধ্যেই আবার সার দিয়ে রাখা মোটরবাইক ও সাইকেল। হয় দোকান মালিকের নয়তো খদ্দেরদের।

একই অবস্থা বিসিডিএ ভবনের ভেতরেও। দোকানের সামনে যাতায়াতের রাস্তার উপরেই স্তুপাকারে পিচবোর্ডের বাক্স, নাইলনের বস্তা। কোনও কোনও দোকান মালিক পিচবোর্ডের বাক্সগুলি এমন উঁচু করে ডাঁই করে রেখেছেন, তার আড়ালে যে দোকান রয়েছে, মালুম হওয়াই মুশকিল। এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘ওষুধ মার্কেটে আগুন লাগলে মানুষের ছুটে পালানোরও জায়গা থাকবে না। ছুটতে গেলেই ডাঁই করা বাক্সের নিশ্চিত হোঁচট খেতে হবে।’’

এর সঙ্গেই বাজারের অলিতে-গলিতে মাকড়সার জালের মতো বিদ্যুতের তারগুলি ছড়িয়ে রয়েছে। সেই তার জড়িয়ে রয়েছে দোকানের গায়েও। কিন্তু সে সবের দিকে কারও কোনও নজর নেই। একের পর এক দোকান গজিয়ে উঠেছে। আর আবেদন করলেই মিলেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ওই বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘এখানে সুরক্ষার পাঠ দেওয়ার কেউ নেই। জতুগৃহে আমরা সবাই রাজা।’’

Fire Drug Market Berhampur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy