Advertisement
E-Paper

মাঠে ভাসছে নৌকো, নবদ্বীপে ফুটবল এখন বিশ বাঁও জলে

গঙ্গার ঘোলা জলে ধুয়ে মুছে একাকার নদী আর মাঠের সীমানা। বানভাসি প্রান্তরে এলাকার মানুষও ঠাহর করতে পারছেন না মাঠের শেষ কিংবা নদীর শুরু। দূরের গোলপোস্টকে নিশানা করে মাঝ মাঠ বরাবর কোনাকুনি নৌকা বেয়ে পানীয় জল নিতে আসছেন মাঠপাড়ার বাসিন্দারা। শহরে বন্যার জল ঢোকার পনেরো দিন পেরিয়ে গেলেও নবদ্বীপের বিভিন্ন ফুটবল মাঠের জলছবি এখন এমনই।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৫ ০০:১৪
পুকুর নয়, ফুটবল মাঠ। নিজস্ব চিত্র।

পুকুর নয়, ফুটবল মাঠ। নিজস্ব চিত্র।

গঙ্গার ঘোলা জলে ধুয়ে মুছে একাকার নদী আর মাঠের সীমানা। বানভাসি প্রান্তরে এলাকার মানুষও ঠাহর করতে পারছেন না মাঠের শেষ কিংবা নদীর শুরু। দূরের গোলপোস্টকে নিশানা করে মাঝ মাঠ বরাবর কোনাকুনি নৌকা বেয়ে পানীয় জল নিতে আসছেন মাঠপাড়ার বাসিন্দারা। শহরে বন্যার জল ঢোকার পনেরো দিন পেরিয়ে গেলেও নবদ্বীপের বিভিন্ন ফুটবল মাঠের জলছবি এখন এমনই।
নবদ্বীপে ফুটবলের অন্যতম সেরা প্যাক কোম্পানির মাঠে বুধবার দুপুরেও বুক সমান জল। মাঠের একদিকে জেগে ওঠা বড় রাস্তার পাশে সার বেঁধে ছিপ নিয়ে বসে পড়েছেন এলাকার মানুষ। কে বলবে মাত্র সাত মাস আগে, জানুয়ারিতে সকার কাপের ফাইনালে এই মাঠেই খেলা দেখতে হাজির হয়েছিলেন দশ হাজার মানুষ। দু’পা এগোলেই পাশাপাশি দুটি মাঠ। নবদ্বীপের উত্তরে গঙ্গার পরিত্যক্ত খাত ‘ছাড়া গঙ্গার’ লাগোয়া নবদ্বীপ উদয়ন সঙ্ঘের মাঠ এখন ফুলেফেঁপে ওঠা গঙ্গারই অংশ হয়ে গিয়েছে। ঠিক উল্টো দিকে অ্যাথলেটিক ক্লাবের মাঠ যেন যেন অকুল পাথার। এখানেই প্রতি বছর বসে নবদ্বীপ পুরসভা আয়োজিত শ্রীচৈতন্য বইমেলা। এখন সেখানে নৌকা ভাসছে। দু’পাশে দুই মাঠের মাঝে সবে জেগে উঠছে প্রাচীন মায়াপুর রোড। চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমে যাওয়ার প্রধান রাস্তা। শহরের মধ্যাঞ্চলে নির্ভীক সমিতির মাঠে হাঁটুজল। দক্ষিণেও ছবিটা কমবেশি একই রকম। নবদ্বীপ শ্মশান লাগোয়া কর্মমন্দির ক্লাবের মাঠে জল হাঁটুর উপরে। তুলনায় ভাল নদিয়া ক্লাবের মাঠের অবস্থা।
এই অবস্থায় চরম অনিশ্চয়তার মুখে নবদ্বীপ ফুটবল লিগ। যে সব মাঠে খেলা হয় তার প্রায় সব কটি মাঠই এখনও গভীর জলের তলায় থাকায় আক্ষরিক অর্থেই বানে ভেসে যেতে বসেছে লিগ। বিভিন্ন ক্লাব, নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থা এবং রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের প্রশ্ন, চলতি বছরের ফুটবল লিগ আদৌ হবে তো? নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমরা নবদ্বীপের ফুটবল লিগ অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে দিতে বাধ্য হয়েছি। সামনের সপ্তাহে আবার আমরা সমস্ত ক্লাবগুলিকে নিয়ে আলোচনায় বসব। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এই মুহূর্তে মাঠগুলির যা অবস্থা তাতে আশার আলো দেখছি না।” নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থায় নথিভুক্ত ক্লাবের সংখ্যা এখন ৫৩টি।

নবদ্বীপ রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মনোজ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সাব জুনিয়র, জুনিয়র, সিনিয়র সব মিলিয়ে এক মরসুমের লিগে যতগুলি ম্যাচ খেলতে হয় তাতে এ বছর আর সেই সময় নেই। তারপর সামনে উৎসবের মরসুম শুরু হবে। তার পরেই চলে আসবে ক্রিকেট মরসুম। মনে হয় না এ বারে লিগ সম্ভব হবে।” নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল সম্পাদক লাল্টু ভুঁইয়া জানান, গত বছরে লিগ শুরু হয়েছিল ১৭ জুলাই থেকে। সাব জুনিয়র লিগ শেষ হয়ে অগস্টের ১৬ তারিখে জুনিয়র লিগ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বন্যার জন্য মাঠের যা অবস্থা তাতে এবার সবটাই অনিশ্চিত।

এমন অবস্থায় সবচেয়ে দিশাহারা নবদ্বীপের ক্লাবগুলি। পুরসভার উদ্যোগে চালু হওয়া সকার কাপের তুমুল জনপ্রিয়তার পর থেকে নবদ্বীপের ক্লাবগুলির ফুটবল ভাবনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। সকার কাপের পরে পুলিশের উদ্যোগে উত্তরণ কাপ এবং নদিয়া জেলার অন্যতম প্রাচীন ফুটবল টুর্নামেন্ট বৈদ্যনাথ শিল্ডের কথা মাথায় রেখে এ বারে প্রতিটি ক্লাবই রীতিমতো গুছিয়ে টিম করেছে। স্থানীয় লিগের জন্য তিরিশ চল্লিশ হাজার টাকা খরচ করে টিম করেছে বেশির ভাগ ক্লাব। লিগের খেলা তাই এ বার সকার কাপের জন্য মহড়া বলেই ধরে নিয়ে এগোচ্ছিলেন ক্লাব কর্তারা। লিগে দলের পারফর্মান্স দেখে মরসুম শেষের সকার কাপের জন্য পরবর্তী পরিকল্পনা ছকে নেবেন ভেবেছিলেন সকলেই। কিন্তু সেই সব পরিকল্পনা আপাতত বিশ বাঁও জলে।

প্রস্তুতি প্রসঙ্গে নবদ্বীপ কর্মমন্দিরের জগবন্ধু ভট্টাচার্য জানান, মাঠে এখনও হাঁটু জল। নবদ্বীপের ফুটবল লিগ এবার আদৌ হবে কিনা সন্দেহ। অথচ প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে এবারের ফুটবল টিম তৈরি করেছি। ছেলেরা বসে আছে। অনুশীলন করার উপায় নেই। এখন বিএম শিল্ড আর সকার কাপের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই। উদয়ন সঙ্ঘের মনোজ চট্টোপাধ্যায় জানান, স্থানীয় লিগের সাব জুনিয়র, জুনিয়র এবং ফার্স্ট ডিভিশন পর্যায়ের জন্য তাঁদের ইতিমধ্যেই দল গড়া শেষ হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে এ বারের বাজেট প্রায় পঁচিশ হাজার টাকা। ক্লাবের প্রশিক্ষক তথা খেলোয়ার মনোজবাবু বলেন, “এখন আর আগের মুখের কথায় কেউ খেলে না। প্রতি ম্যাচে খেলোয়াড় পিছু কমপক্ষে আড়াই’শো থেকে তিনশো টাকা খরচ হয়। মরসুম শুরুর আগেই বেশ কিছু টাকা অগ্রিম হিসাবে দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এই জলের কারণে সব পরিকল্পনাই বোধহয় মাঠে মারা গেল।’’

বানভাসি নবদ্বীপের ছোট বড় মিলিয়ে ডজনখানেক মাঠের মধ্যে এই মুহূর্তে সবে জল থেকে মাথা তুলেছে নদিয়া ক্লাবের মাঠ। যদিও মাঠের এক দিকে এখনও জল জমে আছে। তা বের করার জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষ নালা কেটে দিয়েছেন। নদিয়া ক্লাবের সম্পাদক গোবিন্দ বাগ জানান, মাঠ হয়তো অল্প দিনের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু একটা মাঠ দিয়ে তো আর গোটা নবদ্বীপের লিগ চলবে না।

নবদ্বীপ আজাদ হিন্দ ক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক সুব্রত দত্ত বলেন, ‘‘এ বছর আমরা চল্লিশ হাজার টাকা বাজেট রেখেছি ফুটবল টিমের জন্য। ইতিমধ্যে বাইশ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে খেলোয়াড়দের অগ্রিম এবং সাজসরঞ্জাম বাবদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ বারের ফুটবল লিগটাই হবে কি না তাই তো বুঝতে পারছি না।”

সত্যিই কি তাহলে এ বার নবদ্বীপ ফুটবল লিগ হবে না? প্রস্তুতি সব জলে যাবে? এখনও আশা ছাড়তে নারাজ নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক লাল্টু ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘‘যদি নবদ্বীপের ক্লাবগুলি রাজি থাকে তাহলে আমরা নবদ্বীপ ফুটবল লিগ অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আগামী সপ্তাহে সব ক্লাবকে নিয়ে অলোচনায় বসছি। ক্লাবগুলি এই প্রস্তাবে রাজি হলে লিগ হতে পারে।’’

Nabadwip Flood rain river
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy