Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দ্বন্দ্বে আটকে ভবন হস্তান্তর 

এর আগেও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে পূর্ত দফতর ও খাদ্য দফতরের কর্তারা বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি।

খাদ্য দফতরের সেই ভবন। নিজস্ব চিত্র

খাদ্য দফতরের সেই ভবন। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার  
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪২
Share: Save:

ভবন তৈরি হয়ে গিয়েছে আগেই। কিন্তু দুই দফতরের টানাপোড়েনে এখনও পর্যন্ত তার হস্তান্তর সম্ভব হয়নি। ফলে এখনও পর্যন্ত পুরনো বাড়িতেই অপরিসর জায়গায় রয়ে গিয়েছে জেলার খাদ্য দফতরের কার্যালয়।

এর আগেও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে পূর্ত দফতর ও খাদ্য দফতরের কর্তারা বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। মঙ্গলবারও এই বিষয়ে বৈঠক হয় জেলা প্রশাসনিক ভবনে। সেখানে সিন্ধান্ত হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব ভবনটি পূর্ত দফতর খাদ্য দফতরকে হস্তান্তর করবে। তবে সেটা কবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না দুই দফতরের কর্তারা।

জেলা প্রশসনিক ভবন চত্বরে একটি ভবনের দোতলায় খাদ্য দফতরের কার্যালয়। অপরিসর জায়গায় জেলা ও মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের দফতর। কর্মীদের বসা বা টেবিল চেয়ার রখার জায়গা পর্যাপ্ত নয়। তার উপরে আছে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ভিড়। এই পরিস্থিতে থেকে মুক্তি পাওয়ায় জন্য কৃষ্ণনগর শহরের পাত্রবাজার এলাকায় একটি নতুন ‘খাদ্য ভবন’ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মত গত বছর ১৮ জুন দোতলা ভবন তৈরির কাজ শুরু করে পূর্ত দফতরের নদিয়া ডিভিশন। খরচ ধরা হয় ১ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা। দু’টি তলায় মোট ২৬টি ঘর আছে। চলতি বছর ২৯ সেপ্টেম্বর কাজ শেষ হয়ে যায় বলে পূর্ত দফতরের নদিয়া ডিভিশনের দাবি। তার পর থেকে শুরু হয়েছে ভবন হস্তান্তর নিয়ে টানাপড়েন।

জেলা প্রশসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ত দফতর ভবনটি হস্তান্তর করতে চাইলেও তা নিতে চাইছে না খাদ্য দফতর। তারা দাবি করছে, যেহেতু ভবনের চার দিকে কোনও পাঁচিল দেওয়া নেই তাই ভবনটি নিরাপদ নয়। এখনও ওখানে গাড়ি পার্কিং করা হয়। যে কোনও মুহূর্তে বাইরের লোক জন সেখানে ঢুকে পড়তে পারে। তা ছাড়া, এখনও পর্যন্ত সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এই রকম অসম্পূর্ণ ভবন তারা হাতে নেবে না। পাশাপাশি খাদ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, এখনও পর্যন্ত পূর্ত দফতর থেকে চিঠি দিয়ে হস্তান্তরের বিষয়টি জানানো হয়নি।

যদিও পূর্ত দফতরের নদিয়া ডিভিশনের কর্তাদের দাবি, প্রকল্পটির মধ্যে পাঁচিলের খরচ ধরা ছিল না। তাই তাঁরা ইচ্ছা থাকলেও পাঁচিল করতে পারছেন না। পাঁচিলের জন্য নতুন করে খরচের হিসাব দিয়ে প্রকল্প তৈরি করে খাদ্য দফতরকে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু খাদ্য দফতর পাঁচিল তৈরির টাকা দিলেই তাঁরা পাঁচিল করে দেবেন। তাঁদের আরও দাবি, প্রকল্প অনুযায়ী বাড়ির পাশাপাশি বিদ্যুতের সমস্ত পরিকাঠামো তাঁরা তৈরি করে দিয়েছেন। তাঁদের দিক থেকে কোনও কিছুই আর বাকি নেই।

পূর্ত দফতরের এক কর্তারা কথায়, ‘‘ওই জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ করার জন্য কিছু পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। সেটা করবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা। কিন্তু তাতে আপত্তি জানিয়েছে খাদ্য দফতর। যদিও খাদ্য দফতরের কর্তারা দাবি করছেন, ‘‘এই পরিকাঠামো যদি শুধু আমাদের দফতরের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তৈরি করা হত তা হলে আমাদের কোনও আপত্তি থাকত না। আমরা জানতে পারছি যে, ওই পরিকাঠামো থেকে তারা অন্য জায়গায়ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। সেটা জানার পরই আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কী করনীয় জানতে চেয়েছি। উত্তরের অপেক্ষায় আছি।” বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আবার দাবি. পরিকাঠামো যার জমিতেই তৈরি হোক না কেন তাকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার পরে অন্য ক্ষেত্রেও তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। তেমনই নির্দেশিকা আছে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

প্রশ্ন উঠছে, এই জটিলতায় ভবন হস্তান্তর প্রক্রিয়া কত দিন আটকে থাকবে? আগে একাধিক বার বৈঠক হয়েছে। লাভ হয়নি। মঙ্গলবারও বৈঠকে বিষয়টি আবার ওঠে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, বিষয়টি আর ফেলে রাখা যাবে না। পূর্ত দফতরের নদিয়া ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “আমাদের দিক থেকে গোটা পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে। এত দিন বৈঠকে খাদ্য দফতর হস্তান্তরের বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল বলে আমরা চিঠি দিইনি। এক সপ্তাহের মধ্যে হস্তান্তর বিষয়ে চিঠি দেব। আমরা প্রস্তুত।” আর জেলার খাদ্য নিয়ামক লথিফুদ্দিন শেখের কথায়, “পূর্ত দফতর থেকে চিঠি দিলেই আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে শুরু করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Food Department Building Krishnanagar PWD
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE