Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ডোমকলে জুয়ার রমরমা, উদ্বেগ

বহু সংসার ভেঙেছে জুয়া। পঠন-পাঠন শিকেয় উঠেছে বহু বাড়ির পড়ুয়াদের। ডোমকলের বেশ কিছু জুয়ার ঠেক থেকে ধরা পড়ল স্কুল পড়ুয়ারা। ধরা পড়েছে ৬ জন মহিলাও। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই ডোমকল মহকুমা ও সংলগ্ন এলাকায় জুয়া ঠেকের রমরমা বাড়ছিল। তাই ঠেক ভাঙতে গত কয়েকদিন ধরে ডোমকল মহকুমার চার থানার উদ্যোগে অভিযান চালিয়ে মোট ৪৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:১৪
Share: Save:

বহু সংসার ভেঙেছে জুয়া। পঠন-পাঠন শিকেয় উঠেছে বহু বাড়ির পড়ুয়াদের। ডোমকলের বেশ কিছু জুয়ার ঠেক থেকে ধরা পড়ল স্কুল পড়ুয়ারা। ধরা পড়েছে ৬ জন মহিলাও।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই ডোমকল মহকুমা ও সংলগ্ন এলাকায় জুয়া ঠেকের রমরমা বাড়ছিল। তাই ঠেক ভাঙতে গত কয়েকদিন ধরে ডোমকল মহকুমার চার থানার উদ্যোগে অভিযান চালিয়ে মোট ৪৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তার মধ্যে যেমন ৬ জন মহিলা রয়েছেন, তেমনি ১৬ জন পড়ুয়াও রয়েছেন।

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে জলঙ্গি এলাকার এক ভাঙা মন্দিরের পিছন থেকে ওই মহিলাদের ধরা হয়। তাঁরাই ঠেক চালাতেন। তবে ঠেকে কোনও পুরুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই চলে ওই জুয়ার আসর। তবে ঠেকে কোনও পুরুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, কাজিপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই চলে ওই জুয়ার আসর। জলঙ্গির বিধায়ক সিপিএমের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “জলঙ্গি এলাকার ওই ওই মহিলাদের জুয়ার কারবার থেকে নিরস্ত করার জন্য বহু বার আমরা সচেতন করেছি। কিন্তু কোনও কিছুতেই পরিস্থিতি বদলায়নি।”

জুয়ার আসর ডোমকলে অন্যতম বড় সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরেই জুয়ার রমরমা ডোমকলের গ্রাম-গঞ্জে। সাধারণত দু’ধরনের জুয়ার ঠেক রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ ও স্থায়ী ঠেক। ভ্রাম্যমাণ ঠেকগুলি গ্রামগঞ্জের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, বিশেষ করে মেলা বা যাত্রার আসরের বাইরে বসে। স্থানীয় জুয়াড়িদের সাহায্য নিয়ে ওই ঠেক বসায় বড় জুয়া ব্যবসায়ীরা। আর স্থায়ী ঠেকগুলি বসে গ্রামের বাঁশবাগান, জঙ্গল কিংবা পরিত্যক্ত বাড়িতে। কিন্তু তাতে মেয়েদের জড়িয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক ঠেকছে প্রশাসনের কাছে। কিন্তু কেনই বা মহিলারা বা পড়ুয়ারা ক্রমশ জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে? স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দিনকে দিন সংসার খরচের পরিমাণ বাড়ছে। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও নিত্যদিনের খরচ উঠছে না। তাই বাড়তি পয়সার লোভে বাড়ির মেয়েরা জুয়ার দিকে পা বাড়াচ্ছেন।

ডোমকলের বাসিন্দা সালাম শেখ বলেন, “আগের দিনে দেখা যেত ভবঘুরে একটা শ্রেণির মানুষ এই জুয়ার আসরগুলিতে আসত। কিন্তু এখন অনেক অভিজাত পরিবারের ছেলেমেয়েরা, চাকুরিজীবী, ছাত্ররা জুয়ার আসরে আসছে। আর সেখান থেকে তৈরি হচ্ছে সামাজিক সমস্যা। আমাদের পাড়ার জুয়াড়ি পরিবারগুলিতে নিয়মিত পারিবারিক সমস্যা লেগেই রয়েছে।”

মহিলাদের পাশাপাশি জুয়ার আসরে পড়ুয়াদের উপস্থিতিও কপালে ভাঁজ ফেলেছে এলাকার প্রশাসন ও শিক্ষক মহলে। ডোমকল কলেজ বসন্তপুরের অধ্যক্ষ অনুরাধা সেনগুপ্ত বলেন, “এতদিন জানতাম ছাত্ররা বিভিন্ন রকমের নেশায় আসক্ত। এখন শুনছি তারা জুয়ার দিকেও পা বাড়িয়েছে। এমনটা চলতে থাকলে সেটা সত্যিই খুব উদ্বেগের বিষয়। আমরাও কলেজের তরফে চেষ্টা করছি পড়ুয়াদের এই বিষয়ে সচেতন করার।”

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মোসারফ হোসেন বলেন, “ডোমকলে পড়ুয়াদের একটা অংশ বিপথে চালিত হচ্ছে। নানা প্রলোভনে পা দিয়ে তাদের অনেকেই এমন কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে। আমরা এই বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে যৌথ ভাবে সচেতনতা শিবির করা যায় কি না তা নিয়েও ভাবনা চিন্তা শুরু করেছি।’’

ডোমকলের এসডিপিও অরিজিৎ সিংহ বলেন, “বেশ কিছুদিন থেকে আমরা জুয়া নিয়ে মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর পাচ্ছিলাম। তাছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনার তদন্তে নেমে দেখা গিয়েছে, ছোটখাটো অপরাধের উৎসও ওই জুয়া। ফলে আমরা একজন অফিসারের নেতৃত্বে গ্রামীণ পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারর্স নিয়ে ছোট ছোট দল গঠন করছি। যারা বিভিন্ন এলাকায় জুয়ার ঠেকের অনুসন্ধান ও সেগুলিতে নিয়মিত অভিযান চালাবে।”

তবে মহিলা নিয়ন্ত্রিত জুয়ার ঠেকের বিষয়ে অরিজিৎবাবু বলছেন, “খবরটা পেয়ে আমরাই চমকে উঠেছিলাম। পরে অবশ্য তাদের গ্রেফতার করে আরও বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। ডোমকলের আরও কোনও এলাকায় এরকম মহিলাদের জুয়ার ঠেক রয়েছে কি না তা-ও আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE