Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাম ডেরায় রামের থাবা

সে বার বামেদের এই দুর্গে ফেরাতে সব থেকে বড় ভুমিকা নিয়েছিল করিমপুর ও জলঙ্গি বিধানসভা। কিন্তু এ বার আক্ষরিক অর্থেই ফিকে হল লাল।

বদরুদ্দোজা খান। নিজস্ব চিত্র

বদরুদ্দোজা খান। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুর্শিদাবাদ শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০৫:২৯
Share: Save:

রক্তক্ষরণটা শুরু হয়েছিল বাম আমলে। সিপিএম প্রার্থী মইনুল হাসান ও আনিসুর রহমানকে বড় ব্যাবধানে হারিয়ে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে দু'দুবারের সাংসদ হয়েছিলেন কংগ্রেসের মান্নান হোসেন। তবে পরপর দু’বার মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখলেও ২০১৪ সালে আবারও নিজেদের দুর্গে ফিরেছিল বামেরা। আঠারো হাজারের কিছু বেশি ভোটে মান্নান হোসেনকে হারিয়ে সে বার জিতেছিলেন একেবারে আনকোরা বামপ্রার্থী, বদরুদ্দোজা খান।

সে বার বামেদের এই দুর্গে ফেরাতে সব থেকে বড় ভুমিকা নিয়েছিল করিমপুর ও জলঙ্গি বিধানসভা। কিন্তু এ বার আক্ষরিক অর্থেই ফিকে হল লাল। কেবল শেষ রক্ষা নয়, এক নম্বর থেকে একেবারে চার নম্বরে নেমে গিয়েছে তারা। শাসক তৃণমূল প্রায় আড়াই লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতে গিয়েছে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে। আর বামেরা সংখ্যালঘু প্রভাবিত এলাকায় একেবারে বিজেপির-ও পিছনে। মুর্শিদাবাদের সীমান্ত এলাকা জুড়ে এই লোকসভা কেন্দ্রে এ বার ফার্স্ট বয় থেকে একেবারে পিছনের বেঞ্চে কেন? বামেদের সরল দাবি, এক দিকে সংখ্যালঘু ভোট গিয়েছে তৃণমূলে আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোট বিজেপিতে। মেরুকরণের এই রাজনীতিই ঘায়েল করেছে তাগের। এ যদি তাদের দাবি হয়, তা হলে বাম নেতাদের একাংশ স্বীকার করে নিচ্ছেন, সাংগঠনিক দুর্বলতাও তাদের পরাজয়ের একটা বড় কারণ।

জেলার এক বাম নেতা বলছেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকাটাই আমাদের কাল হয়েছে। রাজ্যের ক্ষমতা থেকে আমরা সরে যেতেই আমাদের নিচুতলার কর্মীরাও সরে গিয়েছে আমাদের কাছ থেকে। তা ছাড়া আমাদের সঙ্গে থাকা সীমান্তের প্রান্তিক মানুষ ধর্মীয় মেরুকরণের কারণে পা রেখেছে বিজেপি’র ঘরে। ফলে এক লাফে আমাদের ভোট কমে দাঁড়িয়েছে সাত শতাংশে।’’

গত লোকসভাতে এই কেন্দ্রে বাম প্রার্থী ছিল একেবারে নতুন মুখ। শিক্ষক সংগঠন থেকে সরাসরি মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছিলেন বদরুদ্দোজা খান। নিপাট ভদ্রলোক বলে পরিচিত বদরুদ্দোজাকে বেছে সে যাত্রা তৃণমূল আর কংগ্রেসের মধ্যে ভোট ভাগাভাগির ফয়দা লুটে জয় ছিনিয়ে নিলেও বামেদের মার্জিন ছিল বেশ কম। আর সে কাজে সাহায্য করেছিল করিমপুর বিধানসভা। কিন্তু গত বিধানসভায় সেখানে থাবা বসায় শাসক দল। তাদের প্রার্থী মহুয়া মৈত্র জিতে যাওয়ায় এ বার আর ‘করিমপুর ফ্যাক্টর’ কাজ করেনি।

মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খান করছেন, ‘‘হার প্রায় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু একেবারে চার নম্বরে চলে যাবে! বাম কে যে রাম ছাপিয়ে যাবে সত্যি ভাবিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE