Advertisement
১৩ অক্টোবর ২০২৪

নাছোড়বান্দা মাফুজা খাতুন

দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা, সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক মাফুজা খাতুনের মনোনয়নে সে দিন অবাক হয়েছিলেন দলের কর্মীরা।

মাফুজা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

মাফুজা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০২:৩৮
Share: Save:

তিনি এলেন। তিনি দেখলেন। এবং তিনি জয় না করলেও বুঝিয়ে দিলেন, ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী তিনি নন। আর দলের নেতা থেকে কর্মীরাও মেনে নিচ্ছেন, মাফুজা খাতুনের এই নাছোড়বান্দা মনোভাবটাই তাঁর সবথেকে বড় ‘প্লাস পয়েন্ট’।

দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা, সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক মাফুজা খাতুনের মনোনয়নে সে দিন অবাক হয়েছিলেন দলের কর্মীরা। এক ‘অপরিচিত মহিলা’ মুখকে এ ভাবে উপর থেকে তাঁদের উপর চাপিয়ে দেওয়ায় আড়ালে ক্ষোভপ্রকাশও করেছিলেন বিজেপি কর্মীদের অনেকেই। নির্বাচন শেষে তৃণমূলের কাছে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে হারের পরেও জঙ্গিপুরের সেই কর্মীরাই উচ্ছ্বসিত। সেই উচ্ছ্বাসের কারণ যেমন জঙ্গিপুরের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় ৩.১৭ লক্ষের রেকর্ড ভোট পাওয়া, তেমনই কংগ্রেসের প্রভাবশালী বিদায়ী সাংসদকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা।

কংগ্রেসের বিদায়ী সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় অবশ্য নিজে হেরে যাওয়ার থেকেও বেশি উদ্বিগ্ন ভোটের এই মেরুকরণে। তবে সেই মেরুকরণের বাইরেও কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে তিনি যে ২.৫৫ লক্ষ মানুষের সমর্থন পেয়েছেন সেটাও উল্লেখযোগ্য। অভিজিতের দাবি, এদের মধ্যে বহু সংখ্যালঘু ভোটও রয়েছে।

জঙ্গিপুরে সিপিএমের অবস্থা আরও করুণ। গত লোকসভায় ৩.৭০ লক্ষ ভোট পেয়েছিল তারা। এমনকি জঙ্গিপুরের তাদের ভোট কখনও ৩৩ শতাংশের নীচে নামেনি। সিপিএম প্রার্থী জুলফিকার আলি বলছেন, “যে পথে ভোটের মেরুকরণ এগোচ্ছে তাতে ক্ষতি হবে দেশের। নৈরাজ্য বাড়বে। অভিজিৎবাবু দু’বারের সাংসদ এবং প্রভাবশালী। তাই ২.৫৫ লক্ষ ভোট পেয়েছেন। পরবর্তী ভোটে তার অর্ধেকও ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে হয় না।”

জঙ্গিপুরে বিজেপির বরাবরই নিজস্ব ভোট রয়েছে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ। যিনি যখন দাঁড়িয়েছেন প্রাপ্ত ভোট ঘোরাফেরা করেছে এর মধ্যেই। স্বভাবতই বিজেপিকে নিয়ে বাড়তি উৎসাহ দেখা যায়নি। দলের নেতারাও জানেন, মুর্শিদাবাদের কোনও আসন বিজেপির পক্ষে দখল করা সম্ভব নয়। সেই আবহে মাফুজার এই বিপুল অঙ্কের ভোট পাওয়া চমকে দিয়েছে সব দলকেই। এমনকি তৃণমূলের নেতারাও শঙ্কিত জঙ্গিপুরে বিজেপির বাড়বাড়ন্তে। সুতি বিধানসভা এলাকায় ৫০৯৫৭ ভোট পেয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস পেয়েছে ২৯২৯০। অথচ ওই কেন্দ্রে বিধায়ক কংগ্রেসের। জঙ্গিপুর অর্থাৎ মন্ত্রী জাকির হোসেনের কেন্দ্রে বিজেপির ভোট ৬৬১৯৩। অথচ ভোটের দিন অর্ধেকের বেশি বুথে দেখা মেলেনি বিজেপি এজেন্টের।

মাফুজা বলছেন, “মানুষ এখন সচেতন। দীর্ঘ দিন ধরে একশ্রেণির মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে। তাই বহু আগে থেকেই তারা মনঃস্থির করে নিয়েছিলেন কাকে ভোট দেবেন। এটা কারও ব্যক্তিগত ভোট নয়। দলের ভোট। বিধানসভায় এই ভোট অনেক বাড়বে। কংগ্রেস ও বামের উপর ভরসা রাখতে পারছে না মানুষ। তাই বিধানসভায় বিজেপিও যে এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারে তা ইতিমধ্যেই ভাবতে শুরু করেছে মানুষ।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE