এক চিঠিতেই ‘বিদ্রোহ’ শেষ!
হরিণঘাটা পুরসভার বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের কয়েক জন কাউন্সিলর। দল তাঁদের শো-কজ করে। পরে কাউন্সিলররা নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় দল তাঁদের ক্ষমা করে দিয়েছে। তবে জেলা নেতাদের একাংশ মনে করছেন, বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই দু’তরফই কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি।
দলনেত্রীর নির্দেশ অমান্য করে সম্প্রতি হরিণঘাটা পুরসভা নির্বাচনে ভোটাভুটিতে গিয়েছিল তৃণমূলের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের একটা অংশ। এমনটা যে ঘটতে পারে আগে থেকে অনুমান করে বোর্ড গঠনের দিন সকাল থেকেই হরিণঘাটায় ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সমস্ত কাউন্সিলরকে ডেকে তিনি দলনেত্রীর নির্দেশও জানিয়ে দিয়েছিলেন। পার্থবাবু পুরপ্রধান হিসাবে রাজীব দালালের নাম ঘোষণা করেছিলেন। সেই সময় কেউই পার্থবাবুর সামনে কোনও বিরোধিতা করেননি। কিন্তু বোর্ড গঠনের সময় ঘরের ভিতরে রীতিমতো বিদ্রোহ করে রাজীব দালালের বিরুদ্ধে আর এক কাউন্সিলর মানিক ভট্টের নাম প্রস্তাব করেন সঞ্জীব রাম। আর সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন আর এক কাউন্সিলর তপন হালদার। আচমকা এমন ঘটনায় বিস্মিত হন পার্থবাবু-সহ জেলা নেতারাও। কিন্তু বাইরে থেকে কোনও ভাবেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। বিদ্রোহী কাউন্সিলরদের জেদে ভোটাভুটির রাস্তাতেই যেতে হয় দলকে। কিম্তু শেষরক্ষা হয়নি। মোট ১৭ জন কাউন্সিলরদের মধ্যে ৯ জনই সমর্থন করেন রাজীব দালালকে। পুরপ্রধান হন স্থানীয় ব্লক সভাপতি চঞ্চল দেবনাথ ও বিধায়ক নীলিমা নাগদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজীববাবুই।
দলের অনেকেই সেই সময় আশঙ্কা করেছিলেন যে, এই বিদ্রোহ এখানেই থেমে থাকবে না। আগামী বিধানসভার ভোট পর্যন্ত এর রেশ থাকবে। সরাসরি দলের হুইপের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহ করার ফলও ভাল হবে না। কিন্তু বাস্তবে ঘটল ঠিক তার উল্টোটাই। এক শো কজের ধাক্কায় বিদ্রোহীরা ক্ষমা চাইলেন। দলও ক্ষমা করে দিল। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরবোর্ড গঠন হওয়ার পরে জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ অমান্য করে ভোটাভুটিতে যাওয়ায় মানিক ভট্ট, সঞ্জীব রাম ও তপন হালদারকে শো-কজ করে সাত দিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলেন।
মানিকবাবু বলেন, ‘‘দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। সব কিছু মিটমাটও হয়ে গিয়েছে।’’ তা হলে সেদিন কেন বিদ্রোহ করতে গেলেন? মানিকবাবু জানান, তাঁরা কেউই দলের বিরুদ্ধে যেতে চাননি। কিন্তু আবেগের বশে কেউ কেউ তাঁর নাম প্রস্তাব করে ফেলেছিল। গোটা ঘটনার জন্য তাঁরা অনুতপ্ত। গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘শৃঙ্খলা না মানলে দলে কারও ঠাঁই নেই। সে ক্ষেত্রে দল কঠোর অবস্থান নেবে।’’ তাহলে বিদ্রোহীদের এত সহজে ক্ষমা করে দেওয়া হল কেন? গৌরীবাবুর ব্যাখ্যা, ওই কাউন্সিলররা নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় ও অনুতাপ প্রকাশ করায় দলের মহাসচিব তাঁদের ক্ষমা করে দিয়েছেন।
কিন্তু বিষয়টি যে এত সহজ নয় তা মানছেন দলের জেলা নেতারাও। বরং এর পিছনে তাঁরা রাজনীতির অন্য অঙ্ক দেখতে পাচ্ছেন। কী রকম? তৃণমূলের এক জেলা নেতা জানান, বনগাঁ লোকসভা উপ-নির্বাচনে হরিণঘাটায় তৃণমূলের ভাল ফল হয়নি। তার উপরে এ বারের পুরভোটে দল কী ভাবে ১৭টি আসনেই জয়ী হয়েছে তা নেতারা খুব ভাল করেই জানেন। আর সেই হিসাবে সামনের বিধানসভা নির্বাচনে হরিণঘাটায় লড়াই যে খুব একটা সহজ হবে না সেটাও কারও অজানা নয়। তাই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে পারল না।
বিদ্রোহীরাই বা কেন এত তাড়াতাড়ি নিজেদের গুটিয়ে নিলেন? দলের একংশের ব্যাখ্যা, বিদ্রোহীরা চাকদহের বিধায়ক রত্না ঘোষের অনুগামী বলে পরিচিত। তাঁরা বিদ্রোহ চালিয়ে গেলে তার কোপ পড়তে পারত একদা মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ ওই বিধায়কের উপর। সামনেই তো বিধানসভা নির্বাচন। সব দিক বিবেচনা করেই করে উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে থেকে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে।
তা হলে কি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটে গেল? স্থানীয় এক নেতা বলছেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচন আগে আসতে দিন। তারপর দেখুন কী হয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy