Advertisement
E-Paper

পথের ধারে বন্ধ দোকান

কোনও সরকারি নির্দেশ আবগারি দফতরে এসে পৌঁছয়নি। তবু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মাথায় রেখে শনিবার, ১ এপ্রিল থেকেই জাতীয় এবং রাজ্য সড়কের ধারে মদের দোকান ও পানশালা বন্ধ করে দিলেন মালিকেরা। মাথায় হাত পড়ল কর্মীদের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫০
অনিশ্চিত: কৃষ্ণনগরের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বন্ধ একটি পানশালায়। রুটিরুজির নিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তায় কর্মীরা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

অনিশ্চিত: কৃষ্ণনগরের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বন্ধ একটি পানশালায়। রুটিরুজির নিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তায় কর্মীরা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

কোনও সরকারি নির্দেশ আবগারি দফতরে এসে পৌঁছয়নি। তবু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মাথায় রেখে শনিবার, ১ এপ্রিল থেকেই জাতীয় এবং রাজ্য সড়কের ধারে মদের দোকান ও পানশালা বন্ধ করে দিলেন মালিকেরা। মাথায় হাত পড়ল কর্মীদের।

সকালে কৃষ্ণনগরে নবদ্বীপ মোড়ে দোকানের সামনে এসে ফুটপাথে বসে পড়েন প্রশান্ত হালদার। সাটার বন্ধ। মালিককে জিজ্ঞাসা করে শোনেন, ওই দোকান আর কোনও দিন খুলবে না। অথচ এই দোকানে কাজ করেই এত দিন সংসার চালিয়ে এসেছেন তিনি। আতঙ্কিত গলায় প্রশান্ত বলেন, “এই বাজারে কোথায় ফের চাকরি পাব?”

জাতীয় ও রাজ্য সড়ক থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে মদের দোকান বা বার রাখা চলবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার জেরে প্রশান্তের মতোই জলে পড়েছেন নদিয়ার হাজার দেড়েক কর্মী ও তাঁদের পরিবার। নদিয়া জেলায় ১৭০টি মদের দোকান ছিল। বিক্রেতাদের দাবি, তার মধ্যে ৮৯টি এ দিন বন্ধ হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের হিসাবে সংখ্যাটা ৭৬। মুর্শিদাবাদেও ৩৫ শতাংশ দোকান ও বার এ দিন বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

ওই সব মদের দোকান ও বার বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের তরফে কি কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?

নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে আমরা প্রস্তুত আছি। তবে এখনও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশিকা পাইনি।” মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও বলেন, ‘‘রায়ের প্রতিলিপি এখনও জেলায় পৌঁছয়নি। সম্ভবত দু’এক দিনের মধ্যে এসে যাবে। তার পরেই আমরা অভিযানে নামব।’’ দুই জেলার আবগারি দফতর সূত্রেও একই কথা জানানো হয়েছে।

পুলিশি অভিযানের প্রতীক্ষায় বসে থাকেননি মদের দোকান ও বারের মালিকরা। মুর্শিদাবাদে ‘সোসাইটি ফর ওয়েলফেয়ার অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেন লিকার লাইসেন্সি’র জেলা সম্পাদক অনিমেষ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বহরমপুরে শুধু একটি বার ও তিনটি দোকান বাদ দিয়ে সব বন্ধ। মালিকেরা নিজেরাই বন্ধ করেছেন।’’ নদিয়ায় ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেন লিকার অফ অ্যান্ড অন শপ অ্যান্ড সিএস অ্যান্ড হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মিহির চক্রবর্তীও বলেন, “আমরা কোর্টের নির্দেশ শুনেই দোকান বন্ধের সিন্ধান্ত নিয়েছি। অন্তত দেড় হাজার পরিবার পথে বসল।”

আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কিছু দোকান মালিকও। বছরখানেক আগে বহু লক্ষ টাকা খরচ করে চাপড়ার সাতমাইলে কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়কের পাশে বার খুলেছিলেন সৌভিক সরকার। সেটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “আমি রাস্তায় বসে গেলাম! এত খরচ করেছি। এই ধাক্কা সামলাব কী করে?”

আহিরণের মদের দোকানি গৌতম সাহা বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট অনেক আগেই নির্দেশ দিয়েছে। বিকল্প ঘরের ব্যবস্থা করে আবেদনও জমা করেছি। কিন্তু এখনও স্থানান্তরের অনুমোদন মেলেনি। ফলে দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে।” তবে রঘুনাথগঞ্জের আবগারি ওসি প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের আশ্বাস, দোকান স্থানান্তরিত করার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বেথুয়াডহরির মদের দোকানের মালিক অংশুমান দে-র সংশয়, “দোকান বন্ধ করে কি মদ খাওয়া আটকানো যাবে? বরং এ বার লোকে বেশি করে চোলাই আর নকল মদ খেতে শুরু করবে!” বস্তুত, সপ্তাহান্তে প্রায় অর্ধেক মদের দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া রাস্তা থেকে দূরে লোকালয় ঘেঁষা দোকানের পোয়া বারো হয়েছে। সাধারণ দিনের চেয়ে অনেক বেশি ভিড় হয়েছে ওই সব দোকানগুলিতে।

তবে পুলিশ এই নির্দেশে খুশি। তাদের মতে, জাতীয় ও রাজ্য সড়কে দুর্ঘটনার বড় কারণ মত্ত হয়ে গাড়ি চালানো। রাস্তার ধারে মদের দোকান ও বার বন্ধ হওয়ায় দুর্ঘটনা কমবে।

Alcohol ban highways Supreme Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy