Advertisement
০৪ মে ২০২৪

দাদা খুব খুশি হত, আক্ষেপ শুভেন্দুর

অভাবের সংসারে ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ যোগাতে ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল দাদা। তাই উচ্চ মাধ্যমিক ভাল ফল করার পর বারে বারে দাদার কথা মনে পড়ছিল মুরুটিয়ার শুভেন্দু দাসের। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘‘আজ দাদা থাকলে কী খুশিই না হত।’’

মায়ের সঙ্গে শুভেন্দু। —নিজস্ব চিত্র

মায়ের সঙ্গে শুভেন্দু। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
করিমপুর শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০১:০৪
Share: Save:

অভাবের সংসারে ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ যোগাতে ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল দাদা। তাই উচ্চ মাধ্যমিক ভাল ফল করার পর বারে বারে দাদার কথা মনে পড়ছিল মুরুটিয়ার শুভেন্দু দাসের। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘‘আজ দাদা থাকলে কী খুশিই না হত।’’

এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে মুরুটিয়ার দক্ষিণ বেলডাঙার ছেলে শুভেন্দু কলা বিভাগে ৪৪৭ নম্বর পেয়েছে। বাংলায় ৮৬, ইংরাজিতে ৮৫, ভূগোল ৯৩, দর্শন ৯৬ ও ইতিহাসে ৮৭। বাবা সুবল দাস পেশায় দিনমজুর। মাস কয়েক আগে ইন্দিরা আবাস যোজনায় পাকা ঘর হয়েছে। সম্পত্তি বলতে সেইটুকুই। অভাবের সংসারে ভাইয়ের পড়াশোনা যাতে থেমে না যায় তার জন্য পাড়ি দিয়েছিল কেরালায়। রোজগারের টাকাও পাঠাত। কিন্তু ২০১১ সালে এক দুর্ঘটনায় মারা যায় সুব্রত। হঠাৎ যেন আকাশ ভেঙে পড়ে দাস পরিবারের উপর। ভেঙে পড়েনি শুভেন্দু। দাদা স্বপ্ন পূরণ করতে পড়াশোনা চালিয়েছে শুভেন্দু। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সংসারেও কাজেও হাত লাগিয়েছে।

বাবা সুবল দাস বলেন, “বড় ছেলে সুব্রতও পড়াশোনায় ভাল ছিল। সংসারের হাল ধরতে আর ভাইয়ের পড়াশোনার বাড়তি খরচ সামলাতে ভিন রাজ্যে কাজে চলে যায়। সেখানে এক দুর্ঘটনায় মারা যায়। ভোটের পরিচয় পত্র না থাকার জন্য দেহ বাড়িতেও আনতে পারিনি।’’ শুভেন্দুকে অনেক দূর পর্যন্ত পড়ানোর ইচ্ছে ছিল সুব্রতর। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্যে পেরে উঠছেন না সুবল। ছোট ছেলে জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ। দিন মজুরির উপর সংসার চলে।

তাই বাড়িতে একটা ছোট্ট এক মুদির দোকান খুলেছেন সুবল। সংসার সামলে শুভেন্দুর মা পারুলদেবী দোকানে গিয়ে বসেন। দোকান থেকে সামান্য যা রোজগার হয় তাই দিয়ে চলে সংসার, শুভেন্দুর পড়াশোনা। পারুলদেবী বলেন, ‘‘মেজ ছেলে এত কষ্টের মধ্যে ভাল ফল করেছে। ওকে যতদূর সম্ভব পড়াতে চাই। কিন্তু সামর্থ্য যে নেই। কী করে যে ওর পড়াশোনা এগোবে জানি না।’’ শুভেন্দুর কথায়, “স্কুলের শিক্ষকরাও সকলেই খুব সাহায্য করেছে। নিজের খরচ যোগাতে মাঝে মাঝে বাবার সঙ্গে কাজ করতেও গিয়েছি। ইংরেজি বিষয় নিয়ে পড়ে শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে আছে। যাতে ভবিষ্যতে গরিব ছেলেদের সাহায্য করতে পারি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subhendu Das HS result
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE