Advertisement
০৯ মে ২০২৪
অম্লরোষ

১৫ টাকায় বিক্রি এক কাপ অ্যাসিড

স্ত্রীর মুখে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগে স্বামী উত্তম দাস ধরা পড়েছিল সোমবার সন্ধ্যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই রাতেই রানাঘাটের আঁইশতলা থেকে দিলীপ দেবনাথ নামে এক অ্যাসিড বিক্রেতাকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৫
Share: Save:

স্ত্রীর মুখে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগে স্বামী উত্তম দাস ধরা পড়েছিল সোমবার সন্ধ্যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই রাতেই রানাঘাটের আঁইশতলা থেকে দিলীপ দেবনাথ নামে এক অ্যাসিড বিক্রেতাকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

মঙ্গলবার ধৃত দু’জনকে রানাঘাট আদালতে হাজির করানো হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী প্রদীপকুমার প্রামাণিক বলেন, “উত্তম দাসকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজত ও দিলীপ দেবনাথকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।’’

পুলিশের দাবি, জেরার মুখে উত্তম স্ত্রীর মুখে অ্যাসিড ছোড়ার কথা কবুল করেছে। সে জানিয়েছে, স্ত্রীকে বাড়িতে ফিরে আসার জন্য বারবার বললেও ওই তরুণী রাজি হচ্ছিলেন না। শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানকার লোকজন তাকে মারধর করত। সেই ক্ষোভে ও দুঃখে সে স্ত্রীকে অ্যাসিড ছুড়েছে।

আঁইশতলা বাজারে দিলীপবাবুর সুতোর রঙের কারবার আছে। জেরায় সে-ও কবুল করেছে, ওই ব্যবসার পাশাপাশি সে অ্যাসিডও বিক্রি করে। তবে তার কোনও লাইসেন্স নেই। পুলিশকে দিলীপ জানিয়েছে, ১৫ টাকার বিনিময়ে উত্তমকে সে সালফিউরিক অ্যসিড বিক্রি করেছিল। উত্তম তাকে জানিয়েছিল, ওই অ্যাসিড দিয়ে সে রুপোর গয়না পরিষ্কার করবে। সেই বিশ্বাসেই সে তাকে অ্যাসিড বিক্রি করেছিল।

সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, যাঁদের অ্যাসিড বা ওই ধরনের বিপজ্জনক দ্রব্য বিক্রির অনুমোদন রয়েছে, তাঁদের কাছে একটি রেজিস্টার থাকবে। সেখানে ক্রেতার ঠিকানা লিখে রাখতে হবে। সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ অ্যাসিড কিনতে পারবেন না।

অথছ, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কোনও অনুমোদন ছাড়াই অ্যাসিড বিক্রি চলছে। ক্রেতার সচিত্র পরিচয়পত্র দেখা তো দূরের কথা, তাঁর কথা বিশ্বাস করেই তুলে দেওয়া হচ্ছে অ্যাসিড।

মদ্যপ স্বামীর অত্যাচারে শ্বশুরবাড়ি যেতে রাজি ছিলেন না ধানতলার বঙ্কিমনগরের বছর ছাব্বিশের ওই তরুণী। স্বামীর অনুনয়, অনুরোধ, হুমকিতেও বরফ গলেনি। অভিযোগ, সেই রাগে রবিবার রাতে স্ত্রীকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছুড়ে চম্পট দেয় ওই তরুণীর স্বামী, উত্তম দাস।

সোমবার রাতেই উত্তমকে তাহেরপুর থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করে খোঁজ মেলে দিলীপের। এ দিন ছেলের সঙ্গে আদালতে দেখা করতে এসেছিলেন উত্তমের মা শচীরানি দাস। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার রাতে পুলিশ বাড়িতে এসেছিল। তখনই জানতে পারি, উত্তম এমন কাণ্ড করেছে। উত্তম বৌমাকে আনতে বেশ কয়েক বার ধানতলায় গিয়েছিল। কিন্তু বৌমা ফিরতে চাইছিল না বলে ও যে এমন কাণ্ড করবে তা ভাবতেই পারছি না।’’

মঙ্গলবার দুপুরে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ওই তরুণীর পাশে বসেছিলেন তাঁর বাবা। তিনি জানান, উত্তম মদ্যপ অবস্থায় তাঁদের বাড়িতে গিয়েও গণ্ডগোল করত। বহু বার বুঝিয়েও কোনও লাভ হয়নি।

এ দিন হাসপাতালে অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন সেভ ডেমোক্রেসির রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “অ্যাসিড আক্রান্তরা কী কী সুবিধা পেতে পারে তা অনেকেই জানেন না। এই তরুণীর পরিবারও জানত না। গোটা বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি। আমরাও এই পরিবারের পাশে আছি।” এই ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাহেরপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলছেন, “এই ব্যাপারটি নিয়ে আমরা যত দ্রুত সম্ভব ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। সুপ্রিম কোর্টের যে নির্দেশ আছে সেটাই মেনে চলব।’’ একই কথা বলেছেন ধানতলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাজকুমার দাস।

অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শঙ্কর নস্কর বলেন, “ওই তরুণীকে সাহায্য করা হবে।” সাধারণ মানুষের মতে, এই অবস্থায় সবথেকে জরুরি অ্যাসিড বিক্রির উপরে নজরদারি। কিন্তু প্রশাসন কী করছে? বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, যখনই অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটে তার পরের কিছু দিন সকলেই হইচই করেন। প্রশাসনও সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু তারপর আবার যে কে সেই।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘একা প্রশাসনের চেষ্টায় এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। সচেতন হতে হবে সকলকেই। নাহলে এই অম্লরোষ বন্ধ করা সত্যিই কঠিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Acid attack police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE