Advertisement
০৩ মে ২০২৪
India Lockdown

হেল্পলাইনে শুধুই বেজে যাচ্ছে ফোন, দিশেহারা আটক শ্রমিকেরা

ওই শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন, লকডাউনের শুরর দিকে বিষয়টি যে এই রকম অবস্থায় পৌঁছবে তা বোঝা যায়নি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সন্দীপ পাল
কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ০৫:০৯
Share: Save:

শেষ কবে ঘরের বাইরে বেরিয়ে বাজার করতে গিয়েছিলেন, তা তাঁদের মনে পড়ে না। মালিক যেটুকু চাল ও ডাল দিয়েছেন, ওই দিয়ে রেঁধেই দিন কাটাতে হচ্ছে। ভাত-ডাল খেয়েই টানা দেড় মাস ধরে দিন কাটাচ্ছেন কালীগঞ্জের শ্রমিকেরা।

কিন্তু মালিক-ই বা আর কত দিন দেবেন? সেই শঙ্কা এখন তাঁদের তাড়া করে ফিরছে। ওঁরা পরিযায়ী শ্রমিক, মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার শঙ্করবাড়িতে গাড়ি সরঞ্জাম তৈরির কারখানায় কাজ করেন। লকডাউনের পর থেকেই কাজ বন্ধ ওই সব শ্রমিকের, তাই মাইনেও নেই। তাঁরা কখনও ভাবতেও পারেননি যে জায়গায় কাজ করে বছরের পর বছর ধরে নিজের পেট আর গ্রামের সংসার চালাচ্ছেন, সেই কাজের জায়গাই কোনও দিন আতঙ্কের হয়ে দাঁড়াবে। দিন যত গড়াচ্ছে, মহারাষ্ট্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। সেই খবরের আতঙ্কে রাতের ঘুম বন্ধ উড়ে গিয়েছে ওই শ্রমিকদের। তার উপরে খাবার জোগাড়ের চিন্তা, বাড়ি ফিরতে না পাপার অসহায়তা।

তাঁদের কারও কারও কথায়, ‘‘মনে ভয় তো আছেই। তার সঙ্গে রয়েছে এখানকার স্থানীয় প্রশাসনের কড়াকড়ি। ভাবছি, বাইরে বেরব কী করে আর বেরিয়ে যাব-ই বা কোথায়? সব কিছুই তো বন্ধ।’’

ওই শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন, লকডাউনের শুরর দিকে বিষয়টি যে এই রকম অবস্থায় পৌঁছবে তা বোঝা যায়নি। শুরুর দিকে অনেকেই বলেছিলেন, গাড়ি জোগাড় করে নিজের রাজ্যে বাড়ির দিকে রওনা দিতে। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল হলে বাড়ি ফেরা যাবে, এই ভেবে নিয়ে অনেকে ওই মতে সায় দেননি। জনতা কার্ফুর পরেও তাঁরা থেকে যান ভিন্ রাজ্যের কর্মস্থলে।

জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে ওই একটি বিল্ডিংয়ে লকডাউনে আটকে রয়েছেন মোট ১৪ জন শ্রমিক। তার মধ্যে কালীগঞ্জের দেবগ্রামের বাসিন্দা ৮ জন শ্রমিক, চাপাই গ্রামের ৩ জন, জামালপুরের বাসিন্দা ১ জন এবং রয়েছেন বারাসতের দুই বাসিন্দা।

মহারাষ্ট্র থেকে ফোনে ওই শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী তাঁরা ‘প্রচেষ্টা’ ফর্ম ভরেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও টাকা আসেনি। এ ছাড়াও তাঁদের আরও অভিযোগ, বাড়ি ফেরার জন্য দিন-রাত প্রশাসনিক ‘হেল্পলাইন’ নম্বর (০৩৩-২৩৫৬১০৭৫)-এ যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি। রবিবার সন্ধ্যা অবধি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও কোনও উত্তর আসেনি। শ্রমিকদের দুশ্চিন্তা, ৪ মে থেকে ফের তৃতীয় দফার লকডাউন শুরু হলে তাঁরা খাবেন কী! আর সংক্রমণ থেকে বেঁচে নিজের রাজ্যে বাড়িই বা ফিরবেন কী করে!

এঁদের মধ্যে এক শ্রমিক টোটন ঘোষ বলেন, ‘‘প্রাই আট বছর ধরে কাজ করছি একই জায়গায়। পরিচয়ও হয়েছে। সেই কারণ প্রথমে ভেবেছিলাম কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু দিন যত এগোচ্ছে, ভয় তত বাড়ছে।’’ তিনি জানান, অন্য দিকে রোজগার নিয়েও চিন্তা রয়েছে। বাড়ি ফিরে গিয়েও তো সেই ঘরে বসে থাকতে হবে। হঠাৎ করে এখন নতুন কোনও কাজ জুটবে না।

আর এক শ্রমিকের আকুতি, ‘‘বাড়ির জন্য চিন্তা হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিলে বাড়ি যেতে পারি। কিন্ত যোগাযোগই তো করে উঠতে পারছি না।’’

এই বিষয়ে নদিয়ার জেলাশাসক বিভু গোয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওঁদের জেলার কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে বলুন। ধাপে ধাপে ব্যবস্থা করা হবে।’’

কিন্তু যাঁদের কাছে জেলার কন্ট্রোল রুমের নম্বর নেই কিংবা আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে ওঠেনি, সেই সব শ্রমিকের বাড়ি ফেরার কী হবে? উত্তর অজানাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE