Advertisement
২১ মে ২০২৪

ভ্যানেই বিক্ষোভ বিচারাধীনদের

মাসাধিককাল স্তব্ধ হয়ে আছে আদালত। জামিন যোগ্য হয়েও জেলেই পচতে হচ্ছে দিনের পর দিন।

জঙ্গিপুর আদালত চত্বরে ভ্যানের মধ্যেই ছটফট করলেন ওঁরা। মঙ্গলবার। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

জঙ্গিপুর আদালত চত্বরে ভ্যানের মধ্যেই ছটফট করলেন ওঁরা। মঙ্গলবার। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০৫:২৩
Share: Save:

ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙল অভিযুক্ত বন্দিদের। মঙ্গলবার, জঙ্গিপুর সংশোধনাগার থেকে ৩৮ জন অভিযুক্তকে গাড়িতে পুলিশ জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে আনতেই গাড়ির মধ্যেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। গাড়ি থেকে নামতে অস্বীকার করে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন সকলেই।

মাসাধিককাল স্তব্ধ হয়ে আছে আদালত। জামিন যোগ্য হয়েও জেলেই পচতে হচ্ছে দিনের পর দিন। জেলের মধ্যে জায়গা নেই। দুঃসহ গরমে প্রচন্ড কষ্টের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে তাদের। জেল সূত্রেও জানা গিয়েছে, জঙ্গিপুর সংশোধনাগারে দেড়শো অভিযুক্তের ঠাঁই হয়, সেখানে এখন ২৭৪ জন বন্দি। প্রায় সাড়ে চারশো জামিন যোগ্য অভিযুক্ত, সংশোধনাগারে জায়গা না হওয়ায় তাদের অনেককেই পাঠানো হয়েছে বহরমপুর সংশোধনাগারে।

কিন্তু রাজ্যের অধিকাংশ আদালতে কর্মবিরতি উঠে গেলেও জঙ্গিপুর ব্যতিক্রম কেন? জঙ্গিপুরের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “হাওড়ায় পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন আইনজীবীরা। সেখানে তাঁরা এখনও কর্মবিরতি তোলেননি। তাই হাওড়ার আইনজীবীদের পাশে থাকতে আমরাও কর্মবিরতি

চালিয়ে যাচ্ছি।’’

আর তার জেরেই এ দিন বিক্ষোভ। ঘন্টা খানেক ধরে চলতে থাকে এই বিক্ষোভ। ছোট পুলিশ ভ্যানে গাদাগাদি করে নিয়ে আসা অভিয়ুক্তদের মধ্যে অসুস্থও হয়ে পড়েন ধুলিয়ানের আজাহার হোসেন। গাড়ির মধ্যেই জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে তার মাথায় জল ঢালতে তাকেন অন্যরা। গাড়ি ঘিরে তখন ডজন খানেক পুলিশ ও সিভিক কর্মীর অস্বস্তিকর অবস্থা। পাশেই বিচারক আবাসনে ও এজলাশে অভিযুক্তদের চিৎকার ও স্লোগানে তখন টেঁকা দায়।

এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ অভিযুক্তদের নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গিপুরের এ সিজেএম অমর কিশোর মাহাতোর আদালতে। এজলাসের লকআপে জায়গার অভাবে গাড়ি থেকে নামানো হয় জনা ২০ অভিযুক্তকে। নিয়ে যাওয়া হয় এজলাসে। বিচারক একে একে অভিযুক্তদের কাঠগড়ায় তুলে কেন তারা আদালতে বিক্ষোভ স্লোগান দিচ্ছিলেন জানতে চান। বাণী ইসরাইল, রেজাউল শেখ, সুব্রত দাস, আনসারুল শেখ, বরজাহান শেখ, জিয়ারুল শেখ— সকলের সঙ্গেই কথা বলেন তিনি।

বিচারক বলেন, “জঙ্গিপুরে আদালতের ১২টির মধ্যে ১০টি এজলাসে নিয়মিত বিচারকেরা বসছেন। আদালতের বিরুদ্ধে তাই অভিযুক্তদের কোনও অভিযোগ থাকা ঠিক নয়। যারা জামিন যোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে জেলে আছেন তাদের জামিন দিতে আপত্তি নেই আদালতের।” স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদে জেলে থাকা একজনকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, “লিখিত আবেদন করুন আপনাকে এখনই এক হাজার টাকার বন্ডে জামিনের নির্দেশ দিচ্ছি।” কিন্তু প্রশ্ন, জামিন পেলেও তারা বেলবন্ড আনবেন কোথা থেকে?

ফলে, আদালত জামিন দিলেও জেলমুক্তি ঘটছে না অনেকেরই। জঙ্গিপুরে আইনজীবীদের কর্মবিরতির ফলে উপ-সংশোধনাগারে মঙ্গলবার বন্দির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭৫। উপ সংশোধনাগারের অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বর্মন বলেন, ‘‘স্থানাভাবের কারণে ৩০ জনকে লালবাগ উপ সংশোধনাগারে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jangipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE