Advertisement
E-Paper

ভয়ের বদলে ভক্তিতে নুয়ে যায় মাথা

পুজো-পদ্ধতি তৈরি হলেও, তিনি তখনও ঠিক করতে পারেননি দেবীমূর্তি দেখতে কেমন হবে। শোনা যায়, ঠিক সেই সময় আগমবাগীশ স্বপ্নাদেশ পান। তাঁকে বলা হয়, পরের দিন সকালে প্রথম যাঁকে তিনি দেখবেন, তাঁর মতো করেই গড়তে হবে প্রতিমা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:২০

তন্ত্রাচার্য কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ তখন নতুন করে শক্তিসাধনার পথ খুঁজছেন। পুজো-পদ্ধতি তৈরি হলেও, তিনি তখনও ঠিক করতে পারেননি দেবীমূর্তি দেখতে কেমন হবে। শোনা যায়, ঠিক সেই সময় আগমবাগীশ স্বপ্নাদেশ পান। তাঁকে বলা হয়, পরের দিন সকালে প্রথম যাঁকে তিনি দেখবেন, তাঁর মতো করেই গড়তে হবে প্রতিমা।

সেই সময় নবদ্বীপের গোপপল্লিতে বাড়ি ছিল আগমবাগীশের। জনশ্রুতি, সকালে উঠে তাঁর প্রথম নজরে পড়ে এক গোপবধূ। তাঁর গায়ের রং কালো। কিন্তু অপরূপ লাবণ্যে ভরা চেহারা। কর্মব্যস্ত সেই বধূ ডান পা সামনে বাড়িয়ে ডান হাতে এক তাল গোবর নিয়ে বাঁ হাতে করে কুটিরের মাটির দেওয়ালে ছুড়ে দিচ্ছেন। খোলা চুল। কপালে সিঁদুরের ধেবড়ানো টিপ। পরনে খাটো বস্ত্র। কৃষ্ণানন্দকে দেখে বিব্রত বধূ নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করতেই স্বল্পবাসটুকুও গেল খসে। দু’হাত গোময়। লজ্জায় জিভ কাটলেন নিরুপায় সেই মহিলা। তড়িঘড়ি সেখান থেকে চলে গেলেন আগমবাগীশ।

ওই গোপবধূকে দেখেই নাকি কৃষ্ণানন্দ তাঁর ইষ্টদেবীর অধরা রূপ পরবর্তী কালে নির্মাণ করেন। গবেষকেরা মনে করেন, মহাপণ্ডিত আগমবাগীশ দেবীর রূপকল্প নির্মাণের সময় ‘কালীতন্ত্রে’ দেবী রূপের বর্ণনাকে অনুসরণ করেছিলেন। ‘করালবদনা ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম...’। দক্ষিণাকালী ঘোর কৃষ্ণবর্ণা, আলুলায়িত কেশরাশি। গোবরের তাল ধরা ডান হাত যেন বরাভয়ের মুদ্রা। ঘুঁটে ছুড়তে ব্যস্ত বাঁ হাতে ঠাঁই পেল অশুভ শক্তি বিনাশক খড়্গ। কপাল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সিঁদুর হয়ে উঠল তৃতীয় নয়ন। দক্ষিণাকালীর এই মূর্তি ক্রমশ প্রিয় হয়ে ওঠে।

আগমবাগীশকে কষ্ট দিয়েছিল শক্তিসাধনার নামে তন্ত্রের অপব্যবহার। তিনি তাবৎ তন্ত্রের সার সংকলন করে রচনা করলেন ‘বৃহৎ তন্ত্রসার’। সহজ সরল পদ্ধতিতে সকলের উপযোগী করে শক্তিসাধনার নতুন ধারা সৃষ্টি করলেন। নির্মাণ করলেন এক শান্ত শক্তিমূর্তি যা দেখে ভয়ের বদলে ভক্তিতে নুয়ে আসে মাথা। অমাবস্যার রাতে যে দক্ষিণাকালীর আরাধনা এখন ঘরে ঘরে হয়। তারও প্রবর্তন করেন আগমবাগীশ। ইতিহাস বলে, এই গোটা ব্যাপারটাই ঘটে ছিল নবদ্বীপে, চৈতন্যজন্মের একশো বছরের মধ্যে। তাই চৈতন্যভূমি হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গদেশের অন্যতম প্রধান শক্তিক্ষেত্র নবদ্বীপের গুরুত্ব আলাদা। ষোলো শতকের মধ্যভাগে নবদ্বীপের পণ্ডিতবংশে জন্মগ্রহণ করেন কৃষ্ণানন্দ। পিতা মহেশ্বর গৌড়াচার্য। চৈতন্যদেব যেমন বৈষ্ণবধর্মের আমূল সংস্কার করে সকলের কাছে পৌছে দিয়েছিলেন, একই ভাবে কৃষ্ণানন্দও বঙ্গদেশে শক্তি সাধনার ধারাটিকে আমূল বদলে সাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন।

Maa Kali Diwali Kali Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy