সুদীপের বাড়িতে শিক্ষক শুভেন্দু দাস।—নিজস্ব চিত্র
নওদার চাঁদপুর গ্রামের সুদীপ মণ্ডল মাধ্যমিকে পেয়েছিল স্টার মার্কস। উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছেন ৪৪৪। কোনও গৃহ-শিক্ষকের সাহায্য না নিয়েই। উচ্চমাধ্যমিক পড়া চলাকালীন ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি নওদার চাঁদপুরে সুদীপের বাবা দুর্ঘটনায় মারা যান। মা তখন তাঁর তিন ছেলেকে নিয়ে অন্ধকারে পড়েন। বাধ্য হন বড় ছেলেকে বাইরের রাজ্যে দিন মজুরির কাজে পাঠাতে। কারণ, সুদীপ পড়াশুনোয় বরাবরই ভালো। সুদীপের মা লোকের বাড়িতে রান্নার কাজ শুরু করেন। এই ভাবেই পড়া চলছিল সুদীপের। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ছেলের পছন্দের বিষয় ভূগোল নিয়ে পড়াতে সমস্যায় পরেন তাঁর মা শম্পা মণ্ডল। তখন তিনি পড়া বন্ধের কথা ভাবেন। সেই খবর পৌঁছয় স্থানীয় কোলাইচণ্ডী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শুভেন্দু দাসের কানে। তিনি তাঁর বন্ধু নওদার কিশোরীতলা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক জুলফিকার আলি ভুট্টোকে জানান। যেমন কথা সেই মতো কাজ। রবিবার সকালে নওদার চাঁদপুর গ্রামে যান ওই শিক্ষক। তারপর সুদীপের সঙ্গে দেখা করে জানতে পারেন টাকার অভাবে সে পড়া বন্ধ করে দিন মজুরির কাজ করবে। কিন্তু সে ভূগোলে অনার্স নিয়ে পড়তে আগ্রহী। তারপর ওই শিক্ষক তার ভর্তির জন্য ১৩ হাজার টাকা তার হাতে তুলে দেন।
সুদীপ জানিয়েছেন, তিনি কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে ভর্তি হবেন। নওদার কিশোরীতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলি ভুট্টো বলেন, ‘‘আমার একজন পরিচিত শিক্ষকের মুখে শুনি সুদীপ উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪৪ নম্বর পেয়েও পড়া ছেড়ে কাজে লাগতে চাইছে। মনটা খারাপ হয়ে যায়। শনিবার ঠিক করেছিলাম রবিবারে তার বাড়ি গিয়ে বিষয়টা দেখে প্রয়োজনে সাহায্য করব। সেই মতো আজকে সকালে তার বাড়ি যাই। দেখি বাড়িতে ঢোকার দরজাটাও ভাঙা। ওরা ভীষণ গরীব। ওই ছাত্রের মা পরের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। ও সব দেখে সুদীপের ভূগোল অনার্সে ভর্তির ব্যবস্থা করেছি। আমার বন্ধু কোলাইচন্ডি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শুভেন্দু দাস ওই ছাত্রের কৃষ্ণনগরে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। সেখানে সুদীপ থাকবে তার জন্য তাকে কোনও খরচ করতে হবে না। আমরা সুদীপের পরিবারকে বলেছি ওর তিন বছরের পড়ার দায়িত্ব আমরা নিলাম।’’ অর্থিক সাহায্য ছাত্র পেয়ে সুদীপ মণ্ডল জানিয়েছেন, তিনি পাটিকাবাড়ি হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পড়া ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষকদের আর্থিক সাহায্য পেয়ে কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে ভর্তি হবেন বলে ঠিক করেছেন। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে গিয়ে ভর্তি হবেন। ছাত্রের মা শম্পা মণ্ডল জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী গত বছর মারা গিয়েছেন। সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। একটা ম্যাজিক ভ্যান তাকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। বাবা মরা ছেলের পড়াশুনো আবার শুরু হবে এই ঘটনায় তিনি খুব খুশি। ছেলে চাকরি পেলে তাঁকে আর কাজ করতে হবে না। ছোট ছেলে নবম শ্রেণিতে। তার পড়াশোনা কতদিন চালাতে পারবেন তা বুঝতে পারছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy