Advertisement
E-Paper

পুরনো নোট নিচ্ছি তো, মাঠে আসুন না

চিৎপুর চষে মাস তিনেক আগেই বায়না পাকা করে এসেছিলেন ওঁরা। ডেকরেটার্স থেকে পালাকারদের খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা— যত্নের কোনও ত্রুটি রাখতে চাননি।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৪

চিৎপুর চষে মাস তিনেক আগেই বায়না পাকা করে এসেছিলেন ওঁরা।

ডেকরেটার্স থেকে পালাকারদের খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা— যত্নের কোনও ত্রুটি রাখতে চাননি।

অটো ভাড়া করে গাঁ-গঞ্জে প্রচারটাও কম করেননি এ ক’দিনে।

তখনও নোট বাতিলের ঘোষণা যে ওঁত পেতে আছে, জানা ছিল না তাঁদের।

আর, ঘোষণার পরে, আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখেই তাই দরাজ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন— ‘‘আনুন না পুরনো পাঁচশো-হাজার, ভাঙিয়ে দেব, কোনও চিন্তা নেই!’’

সে চিন্তা আর দূর করা যায়নি।

লাখ আড়াই টাকা খরচ করে যাত্রার আসর বসালেও টিকিট আর বিক্রি হয়নি। প্রায় লাখ খানেক টাকা খেসারত দিয়ে এখন তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে উদ্যোক্তারা বলছেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, বাবতেই পারিনি সীমান্তের মানুষ এ ভাবে যাত্রা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে!’’

বড় আশা করে চাপড়ার ভিলেজ হল মাঠে যাত্রার আসর বসিয়েছিলেন স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরা। পালার নাম ‘আমি যে তোমার চোখের তারা’। আশা ছিল, প্রথম শীতের আমেজে দেদার বিকোবে টিকিট।

যাত্রা নিয়ে চাপড়ার অতীত তো একরকম ইতিহাস। কিন্তু নোট বাতিলের ঘোষণার পর সে ইতিহাস উল্টে গিয়েছে।

শনিবার পালা শেষে তাঁরা দেখেন, দু’লক্ষ টাকা খরচ হলেও আয় হয়েছে মেরেকেটে এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।

গত ১৩ নভেম্বর একই হাল হয়েছিল হরিহরপাড়ার একটি বিচিত্রানুষ্ঠানে। কুমার শানু ছাড়াও বেশ কয়েক জন বাংলাদেশি শিল্পী এনেছিলেন তাঁরা। নোট বাতিলের হিড়িকে সেখানেও তেমন লোক হয়নি। একই অভিজ্ঞতা, রবিবার নদিয়ার থানারপাড়ার রাতভর জলসায়।

এ সব দেখেশুনে শান্তিপুর উৎসব কমিটি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই মুহূর্তে কোনও অনুষ্ঠান করবেন না তারা। ‘কালনা উৎসব’-এর কী হবে জানা নেই। নতুন করে কোনও বায়নাও নেওয়া হচ্ছে না।’’

চাপড়ার ওই যাত্রাপালার ঘটনায় সেখানকার সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি-র যাত্রা পরিচালনা কমিটির সম্পাদক শাহজাহান শেখ বলেন, ‘‘শেষের দিকে আমরা রীতিমতো মাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম, টিকিট কাটলে পুরনো পাঁচশো বা হাজার টাকা ভাঙিয়ে দেওয়া হবে।’’ লাভ হয়নি।টিকিটের দাম ছিল— মাটিতে ৫০ টাকা, চেয়ারে ১০০ টাকা আর ভিআইপিদের জন্য ১৫০ টাকা। কিন্তু নোটের আকালে এই প্রথম যাত্রা দেখতে যেতে পারেননি লক্ষ্মীগাছার সাইদুল শেখ। বলছেন, “বাড়ির সামনে দিয়ে যখন টিকিট বিক্রির গাড়িটা মাইকে ঘোষণা করতে করতে যাচ্ছিল, কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছিল।’’ জানান, কিন্তু কী আর করবেন, হাতে যে মাত্র তিনটে একশো টাকার নোট। সেটা যাত্রার পিছনে খরচ করে ফেললে সংসার চলবে কী করে!

উল্টো ছবিও অবশ্য আছে। বাঙ্গালঝির যুবক প্রণয় দত্ত বলেন, “যাত্রা আমার বিশেষ ভাল লাগে না। কিন্তু ওরা বলল টিকিট কাটলে, হাজার টাকা ভাঙিয়ে দেবে। এই সুযোগ কেউ হাত ছাড়া করে!”

বাংলাদেশ সীমান্ত-ঘেঁষা গঞ্জ চাপড়া। গ্রামীণ মানুষের বিনোদন বলতে ওই যাত্রাপালা। অনেকেই গোটা পরিবার নিয়ে চলে আসেন। কম দামের টিকিট কেটে বসে পড়েন মাটিতে। বছর দুয়েক আগে তো একবার যাত্রার দিন মুষল ধারে বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তাতেও থামাতে পারেনি মানুষকে। সেই যাত্রার অন্যতম উদ্যোক্তা পলাশ বিশ্বাস বলেন, “ওই বৃষ্টির মধ্যেও মানুষ এসেছিলেন। লাভও করেছিলাম আমরা।” দিন কয়েক আগেই নবদ্বীপে যাত্রার আয়োজন করেছিলেন নিতাই বসাক। তাঁর কথায়, “নবদ্বীপে যাত্রা মানেই লাভ। তবে এ বার একটু ভিন্ন চিত্র। কোনও রকমে খরচটা তুলেছি। সামনের মাসেই ফের যাত্রার আয়োজন করছি। দেখি ততদিনে নোটের সুদিন ফেরে কিনা!’’

সে দিকেই তাকিয়ে আছে নবদ্বীপ, চাপড়াও।

(তথ্য সহায়তা: সুজাউদ্দিন)

jatra pala
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy