Advertisement
০৫ মে ২০২৪
পাট নিয়ে হাহাকার দুই জেলায়

সরকারের অবস্থান কী, প্রশ্ন চাষির

বেথুয়াডহরিতে পাট কেনার জন্য ১০টি কেন্দ্র আছে। বর্তমানে কর্মী সংখ্যা সেখানে ৫০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ জন।

নিজস্ব  প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫২
Share: Save:

কথার কমতি নেই। খামতি নেই আলোচনা কিংবা তোড়জোড়ে! কিন্তু নিট ফল? চাষিদের হয়রানি এবং লোকসান বেড়েই চলেছে। চাষিদের অভিযোগ, পাট উঠে যাওয়ার পরে তাঁরা জানতে পারছেন কী ধরনের পাট জেসিআই কিনবে। কৃষি দফতর কিংবা জেসিআই তাঁদের এ ব্যাপারে কখনও কোনও পরামর্শ, প্রশিক্ষণ কিছুই দেয়নি। নওদার মিলন মণ্ডল বলছেন, ‘‘ভাল মানের পাট চাষ করতে হলে কী করণীয় সেটাই তো আমরা জানি না।’’

মিলনবাবুর অভিযোগ, অন্য সময় ওই দফতরের লোকজন এসে বোঝান কম জলে কী ভাবে পাট পচাতে হবে। কখনও কখনও যন্ত্রের মাধ্যমেও পাট ছাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু গলদ তো থেকে যাচ্ছে গোড়াতেই। ভাল পাটের জন্য জলের একটা বিরাট ভূমিকা থাকে। কিন্তু পাটের যে বীজ চাষিরা বুনছে, সেটা কতটা উন্নত মানের তা তো চাষি জানতে পারছেন না। পাট নিগম থেকে সব চাষি বীজ পান না। বাজার থেকে যে বীজ কেনা হয় তা কতটা খাঁটি, সেই বিচারই বা করছে কে? চাষিদের ক্ষোভ, পাট নিয়ে সরকারের অবস্থান কী, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেই তো পারে। কিন্তু এ ভাবে ঘুরপথে হয়রান করার অর্থ কী? এমনিতেই সীমান্ত এলাকায় পাটচাষ নিয়ে প্রতি বছরই ঝামেলা করে বিএসএফ। তাদের যুক্তি, পাট লম্বা ফসল। নজরদারিতে অসুবিধা হয়। হোগলবেড়িয়ার চাষি শঙ্কর মণ্ডল বলছেন, ‘‘এক দিকে দু’মুঠো ভাত, আর অন্য দিকে দেশের নিরাপত্তা। এই শাঁখের করাতে ভুগছে সেই চাষিই।’’

কিন্তু জেসিআই কি শুধুই মান ভাল নয় বলে পাট কিনছে না, নাকি অন্য কারণও রয়েছে?

জেসিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মী সংখ্যা তলানিতে ঠেকায় বেশ কয়েকটি পাট ক্রয়কেন্দ্র থেকে পাট কেনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণনগর অঞ্চলে নদিয়া ও পূর্ব বর্ধমান মিলিয়ে ১৪টি পাট ক্রয়কেন্দ্র আছে। এ বছর সাতটি কেন্দ্র থেকে পাট কেনা হচ্ছে। আঞ্চলিক কর্তাদের দাবি, এই ১৪টি কেন্দ্রে ৭০ জন কর্মী ছিলেন। সংখ্যাটা কমতে কমতে এ বছর দাঁড়িয়েছে ২১ জন। শুধু এ বছরেই ১৪ জন অবসর নিয়েছেন।

১৯৯০ সাল থেকে নতুন করে কোনও নিয়োগ হয়নি বলেই জানাচ্ছেন সংস্থার কর্তারা। কৃষ্ণনগরের ম্যানেজার জিতেশচন্দ্র সরকার বলছেন, ‘‘একটি কেন্দ্র থেকে পাট কিনতে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ জন কর্মীর প্রয়োজন। ফলে বাধ্য হয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই আমরা ওই কেন্দ্রগুলি থেকে এ বার পাট কেনা বন্ধ করে দিয়েছি।’’

বেথুয়াডহরিতে পাট কেনার জন্য ১০টি কেন্দ্র আছে। বর্তমানে কর্মী সংখ্যা সেখানে ৫০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ জন। এ বছর তারাও মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া থেকে একটি করে কেন্দ্র বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। আবার বহরমপুরে কর্মী সংখ্যা ৮৬ জন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩২জন। সেখানেও ১৩টি কেন্দ্রের মধ্যে দু’টি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। বেথুয়াডহরির ম্যানেজার আই এ খান ও বহরমপুরের ম্যানেজার মেঘনাদ সাহা কবুল করছেন, ‘‘কর্মীর অভাবেই পাট কেনা বন্ধ রাখতে হয়েছে।’’ যদিও জেসিআইয়ের রাজ্য স্তরের কর্তারা অন্য কথা বলছেন। জেসিআইয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কল্যাণ মজুমদার বলছেন, ‘‘কোন কেন্দ্রই পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। আর আমরা সমবায়ের মাধ্যমে পাট কিনছি। তাই চাষিদের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’

কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ জায়গায় তেমনটা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ চাষিদের। তাঁরা বলছেন, ‘‘চাষিদের সমস্যা জানতে হলে তো জমিতে আসতে হবে। ঠান্ডা ঘরে বসে ফড়ে কিংবা দালালদের কাছে চাষ কিংবা চাষির খবর নিয়ে জেসিআই কিংবা কৃষি কর্তারা আত্মতুষ্টিতে ভুগতেই পারেন। কিন্তু তাতে চাষির চোখের জল শুকোয় না।’’

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jute farmers Jute Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE