Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি বাবার

পড়ে থেকেই মরে গেল আমার মেয়েটা

ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল মেয়েটি। চোট লাগে মাথায়। স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। ঘড়িতে তখন বিকেল চারটে। তার পর... ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্রেফ স্যালাইন ও ইঞ্জেকশন দিয়ে কার্যত বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয় তাকে, অভিযোগ কিশোরীর বাবার।

মৌমিতা কর্মকার।

মৌমিতা কর্মকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০৫
Share: Save:

ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল মেয়েটি। চোট লাগে মাথায়। স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। ঘড়িতে তখন বিকেল চারটে।

তার পর... ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্রেফ স্যালাইন ও ইঞ্জেকশন দিয়ে কার্যত বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয় তাকে, অভিযোগ কিশোরীর বাবার। একটা দিনও কাটেনি। মৃত্যু হয় কলেজ ছাত্রী বছর সতেরোর মৌমিতা কর্মকারের।

মঙ্গলবার দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মৌমিতার বাবা মনোরঞ্জন কর্মকার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানান।

স্থানীয় সূত্রে খবর, মৌমিতা রানাঘাট কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তার বাড়ি রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের মাঝেরগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের মিঠাপুর গ্রামে। রোজকার মতো গত ২৪ অগস্টও সে কলেজে গিয়েছিল। বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ রানাঘাট-বনগাঁ লোকালে ফেরার সময় গাংনাপুর স্টেশনে নামতে গিয়ে পড়ে যায় মৌমিতা। মাথায় চোট নিয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। মৌমিতার বাবা মনোরঞ্জনবাবুর অভিযোগ, সেই সময় জরুরী বিভাগে কোনও চিকিৎসক ছিল না। শুধুমাত্র স্যালাইন ও ইনজেকশন দিয়ে ফেলে রাখা হয়। তাঁর বক্তব্য, রাত সওয়া আটটা নাগাদ এক জন চিকিৎসক এসে দেখেন মেয়েকে। সিটি স্ক্যান করানোর পরামর্শ দেন। স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সিটি স্ক্যান করানো হয়। রিপোর্ট দেখার পর ওই চিকিৎসক তাকে তড়িঘড়ি কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেন। রাত পৌনে তিনটে নাগাদ তাকে নিয়ে নীলরতন পৌঁছয় তার বাড়ির লোকেরা। ঘণ্টাখানেক পর সেখানেই মৃত্যু হয় মৌমিতার।

তার বাবা পেশায় স্বর্ণব্যবসায়ী। মৌমিতারা এক ভাই ও এক বোন। সে-ই বড়। তার বাবা মনোরঞ্জনবাবু বলেন, “ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর প্রায় চার ঘণ্টা কোনও চিকিৎসা হয়নি। পড়ে থেকেই মরে গেল মেয়েটা। বারবার নার্সদের কাছে গিয়ে বলেছি, এক জন ডাক্তারবাবুকে ডাকুন। কিন্তু ওরা কান দেননি। শুধু বলে গিয়েছেন, আপনার মেয়ের চিকিৎসা শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ মনোরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘রাতে ডাক্তারবাবু রাউন্ডে এসে মেয়েকে দেখেন। কিন্তু এমন সময়ে এলেন, তখন আর তাঁদের কিছু করার ছিল না। সিটি স্ক্যান রিপোর্ট দেখার পর ওরা আমাদের হাসপাতাল থেকে তাড়াতে পারলে বাঁচেন। ওদের জন্যই আমার মেয়ে মারা গিয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি জানি, মেয়েকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু আমি চাই, আমার মতো কারও মেয়েকে যেন চিকিৎসার গাফিলতিতে মরতে না হয়। যাদের জন্য আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। বিষয়টি আমি মুখ্যমন্ত্রী-সহ সবাইকেই জানিয়েছি।”

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “এ ধরনের কোনও অভিযোগ আমি পাইনি। পেলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেব।” তিনি বলেন, “আমার মনে হয় জরুরী বিভাগে সেই সময় চিকিৎসক ছিলেন। তিনি মেয়েটিকে দেখেছেন। তবুও, আমি যখন শুনেছি, খবর নেব। দেখব, সে দিন কী কারনে কী ঘটেছে।”

বেশ কয়েক বার চেষ্টা করেও হাসপাতালের সুপার দেবদুলাল মুখোপাধ্যায়কে পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালের অন্য একটি সূত্রের পাল্টা অভিযোগ, হাসপাতাল কোনও গাফিলতি করেনি, গাফিলতি মেয়েটির পরিবারেরই। তাদের বক্তব্য, জরুরী বিভাগে চিকিৎসক ছিলেন। তিনি মেয়েটিকে দেখেন ও সিটি স্ক্যানের পরামর্শ দেন। বাড়ির লোকই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। তার জেরেই এই পরিণতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Juvenile Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE