Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
পরিচয়পত্র তো বহু দূর

বিশ্বাসেই মেলে ঘর

জেলা সদর বহরমপুরেও বহু লোকজন ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তাঁরা কি বাড়ি মালিকের কাছে পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি জমা দেন?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিদ্যুৎ মৈত্র
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

শহরে ভাড়াটে থাকা কয় জনা? প্রশ্নটা সহজ। কিন্তু সদুত্তর মেলে না। প্রশাসন ও পুর-কর্তৃপক্ষের একাংশ মানছেন, খাগড়াগড় কাণ্ডের আগে ও পরে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়েই ভাড়াটে-ছবিটা বিশেষ বদলায়নি।

জেলা সদর বহরমপুরেও বহু লোকজন ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তাঁরা কি বাড়ি মালিকের কাছে পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি জমা দেন? বেশিরভাগ বাড়ির মালিকের উত্তর, ‘‘পরিচয়পত্রের আবার কী দরকার! এত দিনের ভাড়াটে। বিশ্বস্ত লোক।’’

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে তোলপাড় হয়েছিল দেশ। খাগড়াগড় সুতোয় নাম জড়িয়েছিল বেলডাঙারও। ওই বিস্ফোরণে নিহত শাকিল গাজি-সহ ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েক জন বেলডাঙাতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত। ‘বোরখা ঘর’ নামে শাকিল বেলডাঙার বড়ুয়া মোড়ে একটি দোকানও চালাত। বলাই বাহুল্য, ওই ঘর কিংবা দোকান ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা কেউই কোনও পরিচয়পত্র জমা দেয়নি। বাড়ির মালিকেরাও সে সব সংগ্রহ করার ব্যাপারেও আগ্রহ দেখাননি।

কিন্তু টনক নড়ে খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে। শাকিলের ডান হাত, হাতকাটা নাসিরুল্লাও বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল হাটপাড়াতেই। থানা-পুলিশ-গোয়েন্দাদের জেরায় জেরবার বাড়ি মালিকেরাও তো বটেই, গোটা জেলার অনেকেই তখন পণ করেছিলেন, বেঁচে থাকতে আর বাড়ি ভাড়া নয়।

বহরমপুর, বেলডাঙা-সহ অন্য পুরসভা ও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ভাড়াটের পরিচয়পত্র ছাড়া কোনও মতেই বাড়ি ভাড়া দেওয়া যাবে না। কিন্তু সময়ের উপর সময়ের প্রলেপ পড়তে পড়তে ফের সে উদ্যোগে ভাটা পড়েছে।

খাগড়াগড় কাণ্ডে দোষীদের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে শুক্রবার। তার পরেও বাড়ি মালিকদের যে হুঁশ ফেরেনি তা মালুম হচ্ছে পুরকর্তাদের কথাতেও। বেলডাঙার পুরপ্রধান ভরত ঝাওর যেমন বলছেন, ‘‘খাগড়াগড় কাণ্ডের পরেই আমরা এ নিয়ে লোকজনকে সচেতন করেছিলাম। তবে সত্যি কথা বলতে এখনও মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। ভাড়াটের তথ্য আমাদেরও কাছে নেই। লোকজন এখনও বিশ্বাসেই ঘর ভাড়া দিচ্ছেন।’’

বহরমপুর পুরসভার প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়ও মানছেন, ‘‘খাগড়াগড় কাণ্ডের পরে আমরাও সচেতন করেছিলাম। ফের সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসব। যাঁরা বাড়ি ভাড়া দেন তাঁদেরও সচেতন করব।’’ পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘আলোর পথে নামে পুলিশের একটি অ্যাপ রয়েছে। সেখানে বাড়ির মালিকেরা ভাড়াটের তথ্য সহজেই আপলোড করে দিতে পারেন।’’ কিন্তু তার পরেও কি হুঁশ ফিরবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE