রবিবার সন্ধ্যায় কৃষ্ণনগরের রোমান ক্যাথলিক গির্জায় চলছে অনুষ্ঠান।—নিজস্ব চিত্র
দুপুর থেকেই ঝেঁপে বৃষ্টি। তাই হাজার ইচ্ছে থাকলেও গির্জায় যেতে পারেননি চাপড়ার অনুপমা মণ্ডল। রবিবার ঠাঁই বসেছিলেন টিভির সামনে। রোমের ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে এ দিন মাদার টেরিজাকে সন্ত হিসাবে স্বীকৃতি দিলেন পোপ ফ্রান্সিস। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন বছর ষাটের অনুপমাদেবী। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলেন দেওয়ালে টাঙানো মাদারের ছবির সামনে। আনন্দে ভিজে গেল অনুপমাদেবীর চোখ।
ভ্যাটিক্যান থেকে তেহট্টের বালিউড়া, চাপড়া, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট—রবিবার মাদারের সৌজন্যে সবই যেন এক সুতোয় বাঁধা পড়ে গেল। মাদারকে যে এ দিন সন্ত ঘোষণা করা হবে তা জেনে গিয়েছিল তামাম দুনিয়া। অপেক্ষা ছিল শুধু এই মুহূর্তের। এ দিন টিভির সামনে বসেছিলেন চাপড়া সিস্টার হাউসের সদস্যেরা। সিস্টার কবিতা জানাচ্ছেন, কারও যেন তর সয়ছিল না। অনুষ্ঠান শুরুর অন্তত আধ ঘণ্টা আগে থেকেই টিভির সামনে বসে পড়েছিলেন সকলেই। অনুষ্ঠানের কোনও অংশ যেন বাদ পড়ে না যায়। সিস্টারদের কথায়, ‘‘এমন একটি মূহূর্তের সাক্ষী থাকতে পেরে আমরা সকলেই ধন্য।’’
চাপড়া আরসিপাড়াতে মাদারের জীবন নিয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে গির্জার লোকজনও ছিলেন। রানাবন্ধ চার্চের তরফে এ দিন পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। চাপড়া মেরি ইমাকুলেট হাই স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষিকা সিস্টার সেরলিন জানান, এ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় কিছু করা যায়নি। আজ, সোমবার স্কুলে মাদারের জীবন নিয়ে পড়ুয়াদের একটি কুড়ি মিনিটের তথ্যচিত্র দেখানো হবে।
কৃষ্ণনগরের আরসিপাড়ায় চলছে উৎসব।
মাদারকে শ্রদ্ধা জানাতে এ দিন বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কৃষ্ণনগর ক্যাথিড্রাল চার্চ। চার্চের বিশাল প্রার্থনা গৃহের ভিতরে এতদিন সযত্নে রাখা ছিল মাদারের মূর্তি। এ দিন সকালে সেই মূর্তিটাকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয় প্রার্থনা গৃহের প্রধান দরজার পাশে। ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয় সেই মূর্তি। সন্ধ্যায় আবার প্রার্থনার পরে সেই মূর্তি আবার নিয়ে যাওয়া হয় উপাসনা বেদিতে। কৃষ্ণনগর ক্যাথলিক চার্চের সহকারি পুরোহিত ফাদার অমল রাজ বলেন, “আজ মাদার সন্ত হলেন। তাঁর সেবার মধ্যে দিয়ে তিনি সমস্ত বিশ্বের কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন। আমরা সকলেই আজ ভীষণ খুশি।”
আবেগে ভাসল রানাঘাট বেগোপাড়াও। অন্য দিনের তুলনায় এ দিন প্রার্থনা সভায় হাজির হয়েছিলেন অনেক বেশি মানুষ। আলোয় সেজে উঠেছিল গোটা এলাকা। বসে গিয়েছে বেশ কিছু দোকানপাট। কীসের মেলা গো? পথচলতি লোকের অবাক প্রশ্নে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন এক প্রৌঢ়। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘মেলার থেকেও বেশি কিছু। মাদার সন্ত হয়েছেন যে। আজ আমাদের অকাল বড়দিন।’’ বেগোপাড়া চার্চের ফাদার সরোজ বিশ্বাস বলছেন, ‘‘আজ, সোমবার মাদারের মৃত্যু দিবস। এ দিনও নানা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মাদারকে নিয়ে একটি নাটকও মঞ্চস্থ হবে।”
আলোয় সেজেছে রানাঘাট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy