Advertisement
০৭ মে ২০২৪

স্ত্রী খুনে যাবজ্জীবন সাজা জঙ্গিপুরে

আদালতে বাবার বিরুদ্ধে মাকে খুনের অভিযোগ তুলে সাক্ষ্য দিয়েছিল দুই নাবালক ছেলেমেয়ে। আর তাতেই অভিযুক্ত চাঁদ দাসকে শুক্রবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল জঙ্গিপুর আদালত। রায় দিতে গিয়ে জঙ্গিপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘নিজের ছেলেদের মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে পরিকল্পনা করেই স্ত্রীকে খুন করেছেন অভিযুক্ত চাঁদ দাস।

সাজা ঘোষণার পর। —নিজস্ব চিত্র।

সাজা ঘোষণার পর। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৫ ০১:০৬
Share: Save:

আদালতে বাবার বিরুদ্ধে মাকে খুনের অভিযোগ তুলে সাক্ষ্য দিয়েছিল দুই নাবালক ছেলেমেয়ে। আর তাতেই অভিযুক্ত চাঁদ দাসকে শুক্রবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল জঙ্গিপুর আদালত।

রায় দিতে গিয়ে জঙ্গিপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘নিজের ছেলেদের মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে পরিকল্পনা করেই স্ত্রীকে খুন করেছেন অভিযুক্ত চাঁদ দাস। তার ছেলেমেয়েরাও আদালতে দাঁড়িয়ে নির্ভয়ে বাবার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। এই ঘটনা একটি বিরল নজির। তাই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডই অভিযুক্ত চাঁদ দাসের উপযুক্ত শাস্তি বলে মনে করেছে আদালত।’’

মুর্শিদাবাদের সুতির আমুহা গ্রামে চাঁদ দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় সমশেরগঞ্জের নতুন মালঞ্চা গ্রামের বাসিন্দা সান্ত্বনা দাসের। তাদের তিনটি ছেলেমেয়েও হয়। ২০০৯ সালে নিজের গ্রাম ছেড়ে ধুলিয়ান শহরের কাহারপাড়া এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে সপরিবারে থাকতে শুরু করেন রুটি কারখানার কর্মী চাঁদ দাস। সরকারি আইনজীবী মহম্মদ আকিমুদ্দিন বিশ্বাস জানান, বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীকে মারধর ও নির্যাতন করত চাঁদ। বহুবার নতুন মালঞ্চায় বাবার বাড়ি পালিয়েও যান অতিষ্ঠ সান্ত্বনাদেবী।

পরে ধুলিয়ানে চলে আসার পর স্ত্রীর উপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ২০১০ সালের ১৬ মে সকালে বাড়ির সদর দরজা খোলা অবস্থায় দেখে সন্দেহ হয় বাড়ির মালিকের। গিয়ে দেখেন ঘরের মেঝেতে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সান্ত্বনাদেবীর দেহ। পলাতক স্বামী চাঁদ দাস। এর পরই পুলিশ ও মৃতার বাবার বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। কয়েক মাস পরে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও পরে জামিন পা চাঁদ। মামলার বিচারপর্ব শুরু হতেই ফের গা ঢাকা দেয় সে। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচার শুরু হয়। সেই থেকেই প্রায় তিন বছর জেল হাজতে রেখেই বিচার চলছিল তার। এ দিন বিচারকের শাস্তি ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন না অভিযুক্তের বাড়ির কোনও আত্মীয় পরিজনই।

এমনকী নিজের কৃতকর্মের জন্য এজলাসে দাঁড়িয়ে অনুতাপ করতে দেখা যায়নি তাঁকে। এরপরই বিচারক তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় শোনান। এ দিন আদালতে না এলেও বাবার সাজার খবর অবশ্য প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে মামার বাড়ি ধুলিয়ানের নতুন মালঞ্চায় দুপুরেই পৌঁছে যায় তার ছেলে শুভঙ্কর ও মেয়ে প্রিয়ার কাছে। শুভঙ্কর এখন নবম শ্রেণিতে পড়ে।

মেয়ে প্রিয়া গ্রামেরই স্কুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। মামার বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়েই বাবার শাস্তির খবর শুনে শুভঙ্কর বলে, ‘‘পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেন এ ভাবে মারলে মাকে। আমাদের কাছে মাকে মারার কথা স্বীকার করে বাবা সেদিন বলে যা করেছি তার জন্য পারলে ক্ষমা করে দিস। কিন্তু ক্ষমা করতে পারিনি।’’

মামার বাড়িতে মেয়ে প্রিয়ার কথাতেও এ দিন ঝরে পড়েছে বাবার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ। তার কথায়, ‘‘আজ আমার মাযের আত্মা শান্তি পেল। শাস্তি হয়েছে বাবার। খুশি সকলেই।’’ সে দিনের ৩ বছরের কোলের ছোট্ট শিশু সুব্রতের বয়স এখন বয়স ৮। মাকেও মনে নেই, বাবাকেও ঠিক মতো মনে করতে পারছে না সে। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকেছে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া দিদিমার দিকে। মৃতা মেয়ের শোক প্রায় ভুলতেই বসেছিলেন মা অনিতাদেবী।

শুক্রবার জামাইয়ের শাস্তির কথা ফের কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার কথায়, ‘‘এতদিনে শান্তি পেল মেয়ের আত্মা।’’ দিদির মৃত্যুতে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন ভাই বরুণ দাস। শাস্তির কথা শুনে বললেন, ‘‘দেশে যে ন্যায় বিচার আছে এই শাস্তিই তার নজির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE