Advertisement
E-Paper

শব্দ-দানব রুখতে পণ ব্যবসায়ীদের

লিস্টির প্রথমে লেখা হল ডিজে। বাজেট কম পড়ছে দেখে মাংস ও অন্য খরচ কমানো হল। কিন্তু ডিজে নিয়ে কোনও আপস নয়। পিকনিক, বিয়েবাড়ি, উৎসব, অনুষ্ঠানে ডিজে না থাকলে যেন মান থাকে না। গত কয়েক বছরে এটাই দস্তুর হয়ে উঠেছে।

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫৭

পিকনিকের লিস্টি হচ্ছে পাড়ার ক্লাবে। খাসির মাংস ১০ কেজি, চাল পাঁচ কেজি...। কথা শেষ না হতেই এক জন বললেন, ‘‘মাংস-টাংস পরে হবে। আগে লেখ ডিজে। ডিজে না হলে ওই পিকনিকে কিন্তু আমি নেই!’’

লিস্টির প্রথমে লেখা হল ডিজে। বাজেট কম পড়ছে দেখে মাংস ও অন্য খরচ কমানো হল। কিন্তু ডিজে নিয়ে কোনও আপস নয়। পিকনিক, বিয়েবাড়ি, উৎসব, অনুষ্ঠানে ডিজে না থাকলে যেন মান থাকে না। গত কয়েক বছরে এটাই দস্তুর হয়ে উঠেছে।

আর তার ফল যে কী ভয়ঙ্কর হতে পারে তা কানের ভিতর দিয়ে একেবারে মরমে টের পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ধরা যাক, পিকনিক হবে লালবাগে। জলঙ্গি থেকে যে দল যাচ্ছে সেখানে, তারা ডিজে বাজাতে শুরু করল পাড়ার মোড় থেকেই। অসুস্থ লোকজন কেঁপে উঠলেন। ক্লাসে পড়াতে গিয়ে থেমে গেলেন শিক্ষক। গোটা রাস্তা সে এক কান ঝালাপালা করা ব্যাপার।

সম্প্রতি লালবাগে ডিজে দৌরাত্ম্য রুখতে পথে নেমেছে পুলিশ। এ বার ডিজে বাজানোর ক্ষেত্রে রাশ টানতে উদ্যোগী হলেন খোদ মাইক ব্যবসায়ীরা। ডোমকলের ওই ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আর নয়। এখন থেকে তাঁরাই গাড়িতে করে নিঃশব্দে মাইক কিংবা ডিজে পৌঁছে দেবেন পিকনিক স্পটে। সন্ধ্যার পরে ফের তাঁরাই বোবা অবস্থায় মাইক নিয়ে আসবেন। আর ঘড়ির কাঁটায় রাত ন’টা বাজলেই অমায়িক হেসে মাইক বন্ধ করবেন ‘মাইক ম্যান’।

কেবল ‘মিটিং’ করেই শেষ নয়, বড়দিনের আগে, রবিবার রীতিমতো মাইক ফুঁকে বিষয়টি নিয়ে প্রচারও করলেন ব্যবসায়ীরা। মুর্শিদাবাদ জেলা ডেকোরেটর অ্যাসোসিয়েশনের ডোমকল ইউনিটের পক্ষ থেকে সচেতনতার পাশাপাশি মাইক ব্যবসায়ীদের কড়া বার্তাও দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দাবি, এই নিয়ম ভেঙে কোনও ব্যবসায়ী পিকনিক দলকে মাইক চালাতে দিলে ৫০০১ টাকা জরিমানা করা হবে।

সংগঠনের ডোমকল ইউনিটের সভাপতি হামিদ খাঁনের কথায়, ‘‘আমরা ব্যবসা করলেও এই সমাজেই বাস করি। ডিজের অত্যাচার তো আমাদেরও সহ্য করতে হয়। এতদিন আমাদের লোক সঙ্গে না থাকায় যে যেভাবে খুশি মাইক কিংবা ডিজে বাজাত। গত তিন বছর থেকে প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের কাছেও অনেক অভিযোগ এসেছে। আর সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত।’’

বড়দিনের আগে-পরে থেকে শুরু হয় পিকনিক। তারপর সারাটা শীতকাল জুড়েই পিকনিকের পাশাপাশি চলে নানা অনুষ্ঠান। কাদের সাউন্ড বক্সে কত জোর চলে তার প্রতিযোগিতাও। তাতে কার কী অসুবিধা হতে পারে তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা থাকে না বলেই অভিযোগ। আর সেই অভিযোগের গুঁতোয় হাঁফিয়ে ওঠে পুলিশও।

ডোমকলের এসডিপিও মাকসুদ হাসান বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা উদ্যোগী হওয়ায় আমাদের কাজটাও অনেক সহজ হয়ে গেল।’’ রানিনগরের ওসি অরূপ রায় বলেন, ‘‘মাইক কিংবা ডিজে নিয়ে কোনও বাড়াবাড়ি বরদাস্ত করা হবে না। কেবল মাইক নয়, যাঁরা এই কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকবে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।’’

রানিনগরের মাইক ব্যবসায়ী সারোয়ার হোসেনের কথায়, ‘‘আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রাস্তায় মাইক বাজবে না। রাত ৯টার পরে মাইক বন্ধ। এটা না করলে আগামী দিনে আমাদের ব্যবসাই লাটে উঠবে।’’ ডোমকলের কুপিলা গ্রামের আব্দুল বারি মণ্ডলের কথায়, ‘‘দেখা যাক, বাস্তবে শব্দ-দৌরাত্ম্য কতটা কমে!’’

Noise Pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy