চা-চর্চায় মাফুজা খাতুন। রঘুনাথগঞ্জের কানুপুরে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
ভোটের প্রচারের শুরুতেই মোক্ষম বাউন্সারের মুখে পড়তে হল জঙ্গিপুরের বিজেপি প্রার্থী মাফুজা খাতুনকে। সংখ্যালঘু গ্রামে গিয়ে যে ভাবে সেই বাউন্সার সামাল দিলেন তাতে বোঝা গেল ‘বাম ঘরানা’ লালিত পালিত মাফুজা শত্রু শিবিরে যোগ দিয়ে রীতিমত প্রস্তুতি নিয়েই সুদুর দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে ১৯০ কিলোমিটার দূরে জঙ্গিপুরে ভোটে লড়তে এসেছেন রীতিমতো কোমর কষেই।
জঙ্গিপুর লোকসভার মধ্যে যে ক’টি সংখ্যালঘু গ্রাম রয়েছে কানুপুর তারই একটি। হাটতলার পাশে কানুপুরের সুখচাঁদ শেখের চায়ের দোকানে নৈমিত্তিক সকালের আড্ডাটা তখন বেশ জমে উঠেছে। মঙ্গলবার সকালে আটটা নাগাদ সেখানেই গাড়ি থেকে নেমে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসলেন তিনি। পরিচয় দিলেন নিজের “আমি মাফুজা খাতুন। বিজেপি-র জঙ্গিপুরের প্রার্থী। এলাম আপনাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে।”
একে মহিলা, তার উপর বিজেপি-র প্রার্থী। মুসলিম প্রভাবিত গ্রামে সেই আড্ডায় বিজেপি প্রার্থীর এই অনাহুত উপস্থিতিতে তখন থমকে পড়েছে আড্ডা। পাশেই বসে প্রাক্তন শিক্ষক ও কানুপুরেরই আরএসপির প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান সামশুল হক, প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য অধুনা তৃণমূলের লুতফল হক-সহ অনেকেই হাজির সেখানে। পাশে গ্রামেরই বিজেপি কর্মী রজব শেখ। পরিচয় পর্ব শেষে চায়ের অর্ডার হল। এ কথা সে কথার শেষে ছুটে এল সেই বাউন্সার ‘‘সংখ্যালঘু মহিলা হয়ে সাম্প্রদায়িক বিজেপি-র হয়ে কেন দাঁড়িয়েছেন ভোটে ?”
মাফুজা চায়ের গ্লাসটা তখন মুখে তুলেছেন সবে। একে অন্যের মুখ চাওয়া চায়ি শুরু হয়ে গেছে। উপস্থিত সংখ্যালঘুরাও যেন কিছুটা হতচকিত। ভোট চাইতে এসে এমন প্রশ্ন না করলেই বোধহয় ঠিক হত ।
চায়ে পে চর্চায় এসে এই প্রশ্নে মাফুজা কিন্তু ধীর স্থির। শুরু করলেন, “খুব ভাল প্রশ্ন করেছেন। আপনি মুরুব্বি মানুষ। আপনার মতো অনেকেরই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। মানুষ সব কিছু বোঝেন তার অভিজ্ঞতার নিরিখে। কে কি বলল তা দিয়ে নয়। বিরোধীরা বার বার বলে থাকেন বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল। সংখ্যালঘুদের মনে ভয় জাগায় তারা। কিন্তু গত ৫ বছরে সারা দেশের কোথাও কোনও সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গা ঘটেছে কি?’’ পাল্টা চাল দিলেন, ‘‘মনে রাকবেন, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ভার কিন্তু রাজ্য সরকারের হাতে।’’ সঙ্গে জুড়ে দিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘সর্ব ধর্মের বাণী! দোকান থেকে উঠে আসার মুখেই ছুটে এল প্রশ্নটা, “আপনি তো বামে ছিলেন, হঠাৎ সব ছেড়ে ডানে ভিড়লেন কেন?”
ফের বসে পড়লেন বেঞ্চে। একে একে বলে চলেছেন তার ছোট বেলার কথা। নিজের চার ভাইবোনের কথা। এসএফআই দিয়ে কলেজ জীবনের শুরু থেকে সিপিএমের বিধায়ক হওয়ার গল্প। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালেন, মতান্তর হয়েছিল দলের সঙ্গে।
সেই মতান্তর অবশ্য ভাঙলেন না। তবে উঠে এল সেই নিরাপত্তাহীনতার কথা। অবলম্বনহীন অবস্থায় যা তাঁকে ‘আশ্রয় দিয়েছে’ বলে মনে করছেন অনেকে।
চায়ে পে চর্চা শেষে আশপাশের মানুষের মোবাইল নম্বর চেয়ে নিলেন একে একে। বলে গেলেন, ‘‘আমিই যোগাযোগ করব আপনাদের সঙ্গে।’’চায়ের আড্ডা থেকে চিমটি এল, ‘‘সে সুযোগ পাবেন তো চাচি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy