হাঁসুয়াবিদ্ধ জাকির হোসেন। ডোমকল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে।—নিজস্ব চিত্র
হাঁসুয়াটা বিঁধে রয়েছে একেবারে শিরদাঁড়ায়। সেই অবস্থাতেই মোটরবাইক ছুটল ডোমকল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের উদ্দেশে। সামান্য ঝাঁকুনিতেও ককিয়ে উঠছে বছর সাতেকের জাকির হোসেন।
মঙ্গলবার দুপুরে হাঁসুয়াবিদ্ধ জাকিরকে দেখে চমকে উঠেছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তাঁরা দেখেই জানিয়ে দেন, অস্ত্রোপচার ছাড়া এই হাঁসুয়া বের করা অসম্ভব। কিন্তু অস্ত্রোপচার যে হবে তার পরিকাঠামো কোথায়? আইসিইউ নেই। তা হলে উপায়?
জাকিরের বাড়ির লোকজনের কাতর অনুরোধ, ‘‘কিছু একটা করুন ডাক্তারবাবু।’’ মুহূর্তের মধ্যে হাসপাতালের সুপার প্রবীর মাণ্ডি, চিকিৎসক সব্যসাচী চক্রবর্তী অন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেন, অস্ত্রোপচার হবে ডোমকল হাসপাতালেই। কারণ, রেফার করলে ওই অবস্থায় জাকিরকে যেতে হবে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেক্ষেত্রে সময় ও যাতায়াতে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। তার পরে রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে শুরু হয় অস্ত্রোপচার। প্রায় ৪০ মিনিট অস্ত্রোপচারের পরে বের করা হয় সেই হাঁসুয়া। হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক সব্যসাচী চক্রবর্তী জানান, জাকির এখন অনেকটাই সুস্থ।
চিকিৎসকদের দাবি, ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। বিপজ্জনক ভাবে শিরদাঁড়া ফুঁড়ে হাঁসুয়া বেশ কয়েক কয়েক ইঞ্চি ভিতরে চলে গিয়েছিল। সব্যসাচী বলছেন, ‘‘কাজটা ঝুঁকির ছিল। এখানে পরিকাঠামোগত অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু রোগীকে রেফার করলে বিপদটা আরও বাড়ত।’’
ডোমকল হাসপাতালের সুপার প্রবীর মাণ্ডি বলেন, ‘‘আমি নিজেও ওটিতে ছিলাম। টিমওয়ার্কের কারণেই কঠিন কাজটা আর কঠিন ছিল না। রোগীর পরিবারও আমাদের পাশে থাকার ফলে খুব কম সময়ে এই সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পেরেছি।’’
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দশেকের বন্ধুর সঙ্গে মাঠে ঘাস কাটতে যেতে রাজি হয়নি জাকির। তার পরেই দু’জনের বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, তার পরেই জাকিরের পিঠে হাঁসুয়ার কোপ মারে তার বন্ধু। ডোমকলের কালুদিয়াড় গ্রামের ওই ঘটনার পরেই ভয় পেয়ে জাকিরকে ফেলে সে পালিয়ে যায়।
জাকিরের মা কাকলি বিবি বলেন, ‘‘সবটাই চিকিৎসকের উপরে ছেড়ে দিয়েছিলাম। এখনও যে ছেলে বেঁচে আছে, এটাই আমার কাছে বড় পাওনা। চিকিৎসকেরা ঝুঁকি না নিলে কী হত তা ভেবেই শিউরে উঠছি।’’
জাকিরের কাকা রবিউল শেখ বলছেন, ‘‘আমরা ধরেই নিয়েছিলাম বহরমপুর বা কলকাতা যেতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে আমরাও বুঝে গিয়েছিলাম যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমরা খুব খুশি আমাদের এলাকার হাসপাতালেই জাকিরের অপারেশন হল। ও এখন ভালও আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy