Advertisement
০২ জুন ২০২৪

জলঙ্গির স্কুলে চালু হল না মিড-ডে মিল

আরও একটা দিন চলে গেল।মিড-ডে মিল চালু হল না জলঙ্গির নওদাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।হওয়ার মধ্যে হল শুধু আলোচনা। পাওয়া গেল আশ্বাস। একপেট খিদে নিয়েই ক্লাস করল কচিকাঁচারা।

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১৮
Share: Save:

আরও একটা দিন চলে গেল।

মিড-ডে মিল চালু হল না জলঙ্গির নওদাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

হওয়ার মধ্যে হল শুধু আলোচনা। পাওয়া গেল আশ্বাস। একপেট খিদে নিয়েই ক্লাস করল কচিকাঁচারা।

জলঙ্গির বিডিও মিড-ডে মিল রান্নায় যুক্ত ৩২টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মধ্যে থেকে বেছে মাত্র তিনটিকে কাজ দিতে চাওয়ায় গত এক মাস ধরে ওই স্কুলে গোলমাল চলছে। তার জেরে রান্না হচ্ছে না। খিদের জ্বালায় দুপুরে ছাত্রছাত্রীরা কান্নাকাটি করছে, বাড়িও চলে যাচ্ছে অনেকে।

গরিব ছেলেমেয়েদের স্কুলে টেনে আনতে এবং স্কুলছুট রুখতে যে মিড-ডে মিল দেওয়া হয়, ডোমকলের এই স্কুলটিতে প্রশাসনের অপদার্থতায় তা কার্যত শিকেয় উঠেছে। আনন্দবাজারে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে শুক্রবার ডোমকলের মহকুমাশাসক এক জন ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটকে জলঙ্গি পাঠান। পরে মহকুমাশাসক তাহিরুজ্জামানের আশ্বাস, ‘‘দ্রুত সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা চলছে।’’

বৃহস্পতিবারই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীগুলির বিক্ষোভে স্কুল চত্বর অশান্ত হয়েছিল। মারামারি হয়। ভেঙে দেওয়া হয় রান্না করার উনুন। এক মাস ধরে মিড-ডে মিল বন্ধ থাকার কথা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পরেই এ দিন বিষয়টি নিয়ে ব্লক অফিস থেকে শিক্ষা দফতরের জলঙ্গি দক্ষিণ চক্রে তৎপরতা তুঙ্গে ওঠে। যদিও সন্ধ্যায় ওই চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অভীক হাজরা ‘আলোচনা চলছে’-র বেশি কিছু বলতে পারেননি।

তবে, এ দিন প্রশাসন নড়েচড়ে বসায় কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন শিক্ষকেরা। তাঁদের সঙ্গে এ দিন বিডিও এবং অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কথা হয়েছে। শিক্ষকদের বক্তব্য, বিডিও প্রথম থেকে বিষয়টি নিয়ে জেদ ধরে না থেকে সমাধানসূত্র খুঁজলে পরিস্থিতি এতটা ঘোরালো
হত না।

প্রধান শিক্ষক বদরুজ্জামান বলেন, ‘‘আমরা এ দিন বিডিওর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাদের স্কুল চালু রাখতে বলেছেন। বিষয়টির যাতে দ্রুত সমাধান হয়, সেই রাস্তা খোঁজা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন। আমরা তাই স্কুল চালু রেখেছি।’’

যে সব গোষ্ঠীর নাম তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে, সেগুলিরই একটির সদস্য সুফিয়া বিবি বলেন, ‘‘আমাদেরই ঘরের ছেলেমেয়েরা এখানে পড়ে। ফলে আমরা সব সময় চাই মিড-ডে মিল রান্না হোক। কিন্তু বিডিও জেদ ধরে আছেন, শুধু তাঁর মনোনীত তিনটি গোষ্ঠির মহিলাদের দিয়ে রান্না করাবেন বলে। আমরা বিডিও বা তাঁর প্রতিনিধিকে এখানে আঅসতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের কথায় কান দেননি।’’ তবে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর শতাধিক মহিলা এ দিন আর স্কুল চত্বরে জড়ো হননি।

মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘মিড-ডে মিল বন্ধ থাকা কখনওই কাম্য নয়। আমাদের কাছে ওই স্কুলে গণ্ডগোল হচ্ছে বলে খবর ছিল, কিন্তু মিড-ডে মিল যে বন্ধ তা কেউ জানাননি। সেটা জানা থাকলে অনেক আগেই আমরা যে কোনও ভাবেই হোক রান্না চালু রাখার ব্যবস্থা করতাম।’’

অভিভাবকেরাও এ দিন মিড-ডে মিল বন্ধ থাকা নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁদের ক্ষোভ, প্রশাসনের কর্তাদের জেদের কারণেই ছেলেমেয়েরা খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অভিভাবক বাবলু শেখে বলেন, ‘‘শুধু যে খাবার দেওয়া হচ্ছে না, তা তো নয়। এই নিয়ে প্রায়ই স্কুল চত্বরে গণ্ডগোল হচ্ছে। বন্ধ হচ্ছে ক্লাস। প্রায়ই স্কুল থেকে ফিরে এসে ছেলেমেয়েরা সে সব কথা বলছে।’’ অবিলম্বে মিড-ডে মিল চালু না হলে আন্দোলনে নামবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন এঁদের কেউ-কেউ।

জলঙ্গির বিডিও সাধন দেবনাথ গত দিন দাবি করেছিলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তিনি সব জানিয়েছেন। পরে জানা যায় মহকুমাশাসক থেকে মিড-ডে মিলের নো়ডাল অফিসার বা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান— কাউকে তিনি কিচ্ছু জানাননি। এ দিন অবশ্য তিনি আর কোনও ঝুঁকি নেননি। সাধনবাবু শুধু বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেই বলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mid day meal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE