Advertisement
E-Paper

খাতায় টাকা আছে, ব্যাঙ্কে নেই

সরকার বলে দিয়েছে, চাইলে সপ্তাহে ব্যাঙ্ক থেকে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত তোলা যাবে। কিন্তু ক‌োনও ব্যাঙ্ক দিচ্ছে দু’হাজার, কোথাও পাঁচ হাজার। এটিএমের দেওয়ার কথা দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু বেশির ভাগ এটিএমের ভাঁড়ার ফাঁকা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ০২:১৬
বিয়ের কার্ড নিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ। — নিজস্ব চিত্র

বিয়ের কার্ড নিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ। — নিজস্ব চিত্র

সরকার বলে দিয়েছে, চাইলে সপ্তাহে ব্যাঙ্ক থেকে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত তোলা যাবে। কিন্তু ক‌োনও ব্যাঙ্ক দিচ্ছে দু’হাজার, কোথাও পাঁচ হাজার।

এটিএমের দেওয়ার কথা দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু বেশির ভাগ এটিএমের ভাঁড়ার ফাঁকা। সে সবে বেশি টাকা না ভরে বরং সরাসরি শাখায় হত্যে দিতে আসা গ্রাহকদের আগে সামলাচ্ছে ব্যাঙ্ক।

নিট ফল: নিজের অ্যাকাউন্টে বৈধ টাকা তুলতে গিয়ে জনতা জেরবার।

সবচেয়ে করুণ দশা বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের। মুর্শিদাবাদে তাদের ৭৪টি শাখা রয়েছে। তার মধ্যে দু’টি মাত্র শহরে। ব্যাঙ্কের মুর্শিদাবাদ রিজিওন্যাল ম্যানেজার সুমন চক্রবর্তী শুক্রবার বলেন, ‘‘জোগান না থাকায় ৪০টি শাখা থেকে টাকা দেওয়াই সম্ভব হয়নি। বহরমপুর শহরের শাখা থেকে তিন হাজার টাকা, বাকি ৩৩টি শাখা থেকে পাঁচশো-হাজার করে টাকা দেওয়া হয়।’’ মেহেদিপুর শাখার অফিসার-কর্মীদের বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় ক্ষুব্ধ জনতা। ব্যাঙ্কের কর্মীদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভও দেখায়। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক আধ ঘণ্টা অবরোধও করা হয়। নদিয়ায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রমাপ্রসাদ পাঠক বলেন, “টাকা যা ছিল, প্রায় শেষ। কী করে যে চালাচ্ছি, আমরাই জানি।”

এ দিন সকালে কৃষ্ণনগর শহরের পাত্রবাজারে ব্যাঙ্ক অব বরোদার দেওয়ালে হেলান দিয়ে হতাশ মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেলেডাঙার কাঠের ব্যবসায়ী পলাশ ভৌমিক। গত ২১ নভেম্বর তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আড়াই লক্ষ টাকা পাননি। প্রায় সবই করেছেন ধার-বাকিতে। পাওনাদাররা তাগাদা দিচ্ছেন। তাঁর ক্যাশ ক্রেডিট অ্যাকাউন্ট যা থেকে দিনে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত তোলা যায়। বুধবার এক বার ঘুরে গিয়েছেন, তাঁর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। এ দিন ফের হত্যে দিয়ে মাত্র তিন হাজার টাকা পেয়েছেন। ওই ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানাজার অরুণকুমার খান্ডালা বলেন,

“আমরা পুরো টাকা কোথা থেকে দেব? যা আছে, সকলের মধ্যে ভাগ করে দিতে হচ্ছে। ১৭ নভেম্বর শেষ টাকা পেয়েছি।”

ডোমকলের বাগডাঙা বাজারের ব্যবসায়ী জসিমুদ্দিন মণ্ডলও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে দিনে চার হাজারের বেশি তুলতে পারছেন না। ফলে তাঁর ব্যবসা মার খাচ্ছে। তিনি জানান, ২৪ হাজার টাকার জন্য কাজকর্ম শিকেয় তুলে সপ্তাহ ছ’দিন ব্যাঙ্কে আসা সম্ভব নয়। ডোমকল বাজারের টাইলস ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেনের আক্ষেপ, ‘‘নিয়মে বলছে, কারেন্ট অ্যাকাউন্টে সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকা তোলা যাবে, কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন। অনেক পীড়াপীড়ি করেও আজ ১০ হাজারের বেশি তুলতে পারিনি।’’

বহরমপুর শহরে স্টেট ব্যাঙ্কের প্রধান শাখা ও শহর লাগোয়া বানজেটিয়ায় আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক ছাড়া আর কোথাও এ দিন কেউ ২৪ হাজার টাকা হাতে পায়নি। স্টেট ব্যাঙ্কের এডিবি শাখা থেকে দশ হাজার এবং লাগোয়া অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক থেকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার গোরাবাজার শাখা থেকে কাউকে একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। তবে সমবায়িকা মোড়ের শাখায় ৫ হাজার টাকা করে মিলছে। ওই শাখার গ্রাহক মিঠুন দাস বলেন, ‘‘দরকার ছিল ১৫ হাজার, পেলাম মোটে পাঁচ।’’

স্টেট ব্যাঙ্কের কাশিমবাজার শাখা আবার নিজের শাখার গ্রাহককে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিলেও অন্য শাখার গ্রাহককে চার হাজারের বেশি টাকা দেয়নি। সকালেই ‘টাকা না থাকার দরুন আজ টাকা দেওয়া হবে না’ বলে নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার লালগোলা শাখা। ঘটনাচক্রে, জেলার লিড ব্যাঙ্ক ইউবিআই-ই। ম্যানেজার অমিত সিংহ বলেন, ‘‘টাকার জোগান না থাকাতেই এই হাল।’’

রানাঘাটে অবশ্য ইউবিআই থেকে ২৪ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছে। তবে তা নেহাতই ব্যতিক্রম। যেমন শিমুরালিতে ইউবিআই গড়ে দু’হাজার টাকা দিয়েছে। চাকদহের চান্দুরিয়ার বাসিন্দা অমল হালদার বলেন, “কী অবস্থা হল বলুন তো, ব্যাঙ্কে টাকা থাকা সত্ত্বেও তা পেতে রোজ ছুটতে হচ্ছে।’’ ব্যাঙ্ক অবশ্য দাবি করেছে, বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ১২ হাজার পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। আনুলিয়ার এসবিআই ব্যাঙ্ক আবার ২৪ হাজার করেই দিয়েছে, যতক্ষণ টাকা থাকবে ততক্ষণ দেওয়া হবে, এই শর্তে।

টাকা কম থাকায় এটিএমেও বেশি টাকা ভরছে না ব্যাঙ্কগুলি। কৃষ্ণনগর সদর মোড় লাগোয়া স্টেট ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার নিরঞ্জন কুমার বলেন, “আমাদের ৮৫টি এটিএম কাউন্টার। কিন্তু ২৫-৩০টির বেশি টাকা ভরছি না। ব্যাঙ্ক থেকেই দেওয়ার চেষ্টা করছি।” আবার, পাত্রবাজারের কাছে ইউবিআই ‘চেস্ট ব্যাঙ্কে’র ডেপুটি ম্যানেজার বিজন বৈদ্য বলেন, “আমাদের ৫০টি এটিএম। আমরা মাত্র একটিতে টাকা ভরছি। সেই কারণেই শাখাগুলো কোনও রকমে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারছি।”

Bank Money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy