প্রতীকী চিত্র।
মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে ঘর বন্ধ করে বসেছিলেন মা। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে দেহ বের করেছে। মায়ের মানসিক ভারসাম্য নিয়ে সন্দিহান পুলিশ। মেয়ের যে মৃত্যু হয়েছে, তিনি তা মানতে নারাজ।
কান্দির এই ঘটনায় প্রত্যাশিত ভাবেই কলকাতার রবিন স্ট্রিটের ছায়া দেখছেন অনেকে। যেখানে দীর্ঘদিন ধরে বোন দেবযানীর কঙ্কাল আগলে বসেছিলেন দাদা পার্থ দে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ঘটনাটা মোটে দু’দিনের।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কান্দি শহরে বাঁধাপুকুর এলাকায় দরজা ভেঙে বের করা হয় কোয়েল রায়ের (২৬) দেহ। মা চুমকি রায় তখনও পুলিশকে বলে চলেছেন, ‘‘বেশি ওষুধ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে, কিন্তু মেয়েটা মরেনি।’’ ময়নাতদন্তের পরে বহরমপুরে দাহ করা হয়েছে কোয়েলের দেহ।
বাঁধাপুকুরের ওই দোতলা বাড়ির বাসিন্দা ছিলেন চার জন। বাবা-মা আর দুই ছেলেমেয়ে। কোয়েলের বাবা প্রদীপ রায় বছর দশেক আগে শিলিগুড়িতে হিমূল দূগ্ধ উৎপাদন কেন্দ্রে কাজ করতেন। একটি রেল দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন, তার পর থেকে বাড়িতেই থাকেন। বাইরে বেশি বেরোন-টেরোন না। দোতলায় তিনি, তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ে থাকতেন। নীচের ঘরে থাকেন ছেলে বুবাই রায়। পাড়ায় তাঁদের একেবারেই মেলামেশা ছিল না। ফলে তাঁদের ব্যাপার-স্যাপারও লোকে তেমন জানে না।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, কোয়েল বিএ পাশ করে কয়েক বছর বাড়িতে বসে ছিলেন। তার পরে ফের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পড়তে ভর্তি হন। পরিচিতদের একাংশের দাবি, মদ্যপানের প্রতি তাঁর আসক্তি ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেও পুলিশ দরজা ভেঙে ঢুকে ঘরে ফাঁকা মদের বোতল পায়। কান্দি থানার আইসি সোমনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা আত্মহত্যা নয় বলেই প্রাথমিক ভাবে আমাদের মনে হয়েছে। বরং অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে মৃত্যু হতে পারে।’’
প্রদীপবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, গত সোমবার কোয়েল ও তাঁর মা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছিলেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত মাঝে-মধ্যে দরজা খোলার শব্দ পেয়েছেন তিনি। বুধবার আর কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি এক প্রতিবেশিনীকে ডাকেন। তিনি উপরে উঠে ডাকাডাকি করলে ভিতর থেকে চুমকিদেবী বলেন, “আস্তে কথা বলো, কোয়েল ঘুমোচ্ছে। এখন দরজা খোলা হবে না।” জেমো তিনসাঁকো এলাকায় একটি বাড়ি আছে প্রদীপবাবুদের। সেটিতে ভাড়া থাকেন শ্রীমন্ত দাস। খবর পেয়ে তিনি এসে ডাকাডাকি করেন, সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে দরজা ভাঙে। ঘরে ঢুকে দেখা যায়, কোয়েলের দেহ মেঝেয় পড়ে। কাছেই বসে ছিলেন তাঁর মা। দেহে তেমন পচন ধরেনি। খাটের পাশে জানালায় কৌটোর মধ্যে একটু তড়কা আর একটা ছেঁড়া রুটি। ঘরের মধ্যেই রান্নার ব্যবস্থা। স্টোভ, আনাজ সব মজুত। পাশের একটি দরজা দিয়ে গেলে শৌচাগার। পুলিশ যাওয়ার খানিক পরেই অন্য একটি ঘরে ঢুকে ফের দরজা বন্ধ করে দেন চুমকিদেবী। আর তাঁকে বের করা যায়নি।
শ্রীমন্তের আক্ষেপ, “প্রদীপবাবুর প্রচুর সম্পত্তি। কিন্তু সব থেকেও কিছু নেই। সকলেই অসুস্থ। এক মাত্র ছেলে সারাক্ষণ মদ খেয়ে পড়ে থাকে।” আর প্রদীপবাবু বলেন, “আমি নিজেই এত অসুস্থ, কী ভাবে কী হল কিছুই বুঝতে পারছি না।” কান্দি থানার আইসি বলেন, ‘‘ওঁরা কেউই ঠিক করে কিছু বলতে পারছেন না। মানসিক ভাবে কেউই পুরোপুরি সুস্থ বলে আমাদের মনে হয়নি। কথাবার্তা অসংলগ্ন। তবে আমরা আরও খোঁজখবর করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy