Advertisement
E-Paper

রাতের আলো শুষে নিয়ে দিনেই ঝলমলে নবদ্বীপ

উৎসবের রাতের দীপচ্ছটা ছিনিয়ে নিয়ে আলোকজ্জ্বল হয়ে উঠছে দিন। নবদ্বীপের রাসে দিনের শোভাযাত্রা ধারেভারে ক্রমশ পিছনে ফেলে দিচ্ছে রাতের ‘আড়ং’কে।

দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৩
সুদীপ ভট্টাচার্য তোলা ছবি।

সুদীপ ভট্টাচার্য তোলা ছবি।

উৎসবের রাতের দীপচ্ছটা ছিনিয়ে নিয়ে আলোকজ্জ্বল হয়ে উঠছে দিন।

নবদ্বীপের রাসে দিনের শোভাযাত্রা ধারেভারে ক্রমশ পিছনে ফেলে দিচ্ছে রাতের ‘আড়ং’কে। গত কয়েক বছর ধরেই রাসের শোভাযাত্রায় বেশ কিছু ঐতিহ্যশালী প্রতিমা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে রাতের বদলে দিনের বেলায় পথে নামছে।

চোখ ধাঁধানো সেই শোভাযাত্রা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কার শোভাযাত্রা কত সুন্দর, সুশৃঙ্খল এবং অভিনব হতে পারে, তা নিয়ে যেন এক অঘোষিত প্রতিযোগিতাই শুরু হয়ে গিয়েছে ওই সব বারোয়ারির মধ্যে।

যার নিট ফল রাতের শোভাযাত্রা যেখানে উচ্চকিত, বেপরোয়া, নিয়মহীন ও বিরক্তিকর, সেখানে দিনের শোভাযাত্রার জন্য হাপিত্যেশ করে অপেক্ষায় থাকছে গোটা শহর।

বেশ কয়েক বছর ধরেই রাতের শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকশ’ প্রতিমার ভিড়ে জট পাকিয়ে থমকে যাচ্ছে পথঘাট। বিরক্ত হয়ে মানুষ ফিরে যাচ্ছেন শোভাযাত্রা না দেখেই। সেখানে দিনের শোভাযাত্রা ঘড়ির কাঁটা ধরে এগিয়ে চলে। সঙ্গে অভাবনীয় সব উপস্থাপনা খোলা রাজপথে। মুগ্ধ হচ্ছে জনতা।

এ বার কোনও বারোয়ারী যদি তাদের শোভাযাত্রায় সিকিমের ‘লায়ন ডান্স’ নিয়ে পথে নামে, তা হলে আর এক শোভাযাত্রায় খোদ জঙ্গলমহল থেকে থেকে আসা আদিবাসীদের প্রকান্ড ধামসা মাদলের গুরুগম্ভীর মুহূর্ত। দুপুর রোদে শহরের রাজপথে ধারালো খাঁড়ার ওপর বীরভূমের ‘রায়বেশে’ নাচিয়ের কসরতে শিউরে ওঠেন হাজার হাজার দর্শক। কখনও পুরুলিয়ার ছৌ নাচে শহরে রাজপথে ‘মহিষাসুর বধ’ তো কোথাও অসমের বিহুর সুরে মাতাল আপামর মানুষ।

এত দিন নবদ্বীপের দিনের বেলায় শোভাযাত্রার মুখ্য আকর্ষণ ছিল শতাধিক বাহকের কাঁধে বিদ্যুতের তার ছুঁই ছুঁই ‘গৌরাঙ্গিনী মাতার’ পথ ছুটে চলা। প্রথম থেকে এক মাত্র ওই প্রতিমাটি দিনের বেলা বের হত। সব মিলিয়ে নবদ্বীপের রাসের আড়ংয়ে দিনের শোভাযাত্রা রাতের একঘেয়েমির থেকে অনেক আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে বলেই মনে করছেন স্থানীয় মানুষ।

মঙ্গলবার দুপুরে চারিচারা পাড়ার ভদ্রকালী মাতার শোভাযাত্রা দেখে চমকে উঠেছিলেন সবাই। নবদ্বীপের ঐতিহ্যশালী চারিচারা পাড়ার ভদ্রকালীর আকাশছোঁয়া প্রতিমার সামনে প্রখ্যাত মৃদঙ্গবাদক হরেকৃষ্ণ হালদার এবং তাঁর ছাত্ররা সমবেত মৃদঙ্গ বাজিয়ে এগিয়ে চলেছেন। নৃত্য এবং বাদনের অসামান্য যুগলবন্দীতে শোভাযাত্রা অন্যমাত্রা পেয়েছিল।

অন্য দিকে হরিসভা পাড়ার ভদ্রকালীর শোভাযাত্রায় এসেছিল সিকিমের লোকনৃত্য ‘মারুণী নাচের’ দল। প্রায় পাঁচ কিমি দীর্ঘ শোভযাত্রায় তাঁদের নৃত্যশৈলিতে মোহিত হয়ে গিয়েছেন রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শনার্থীরা। সঙ্গে ছিল চন্দননগর থেকে আসা একদল তরুণ ধুনুচি নাচিয়ে। জলন্ত ধুনুচি নিয়ে এমন ভাবেও নাচা সম্ভব! জনতার প্রশ্ন ছিল এটাই। সঙ্গে ছিল ক্লাবব্যান্ড। সিংহবাহিনীর শোভাযাত্রার মুখ্য আকর্ষণ হয়ে ওঠেন সচল গৌরাঙ্গ দেব। তাঁদের আদিবাসী নৃত্য নজর কাড়ে।

এ ভাবেই তিনশ’ বছরের নবদ্বীপের রাসের গায়ে একটু একটু করে লাগছে পরিবর্তনের হাওয়া। উদ্বোধন থেকে বিসর্জন, নবমী থেকে আড়ং, বদলাচ্ছে রাসে অনেক কিছুই। মাত্র কয়েক বছর আগেও রাস দেখতে রাস্তায় নামার কথা ভাবতেই পারতেন বা শহরের মানুষ। অথচ এবার রাসের দু’দিন প্রায় সারা রাত নবদ্বীপের উত্তর-দক্ষিন, পূর্ব-পশ্চিম ঘুরে নির্ভাবনায় ঠাকুর দেখছেন শহরের সকলে। বহিরাগতরা না আসায় তাঁদের কিছুটা সুবিধা হয়। কান ঝালাপালা করা মাইকের আওয়াজ ছিল নিয়ন্ত্রিত। মদ্যপদের বিশৃঙ্খলা রোখার জন্য পুলিশও ছিল সতর্ক।

একদিকে স্যাক্সোফোন, অর্গান, ড্রামস নিয়ে চলমান অর্কেস্ট্রা। অন্যদিকে খোদ বৃন্দাবন থেকে আসা ‘রাসলীলা’ নৃত্যের দল। রাসের শোভাযাত্রায় দুটিই এবার নতুন চমক। এ ভাবেই নিত্যনতুন চমকে দিনের কাছে গুনে গুনে গোল খাচ্ছে রাতের শোভাযাত্রা।

Rash-yatra Festive
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy