Advertisement
০৯ মে ২০২৪

মাঠে-মাঠে ধানের সুবাসে আজ নবান্ন

নতুন ধানের এই লোট দিয়েই তো আজ, বৃহস্পতিবার থেকে রাঢ়াঞ্চলের গ্রামে-গ্রামে শুরু হচ্ছে নবান্ন। এখনও জমি থেকে পঁচিশ শতাংশও ধান ওঠেনি।

আলপনা গোলা জুড়ে। নিজস্ব চিত্র

আলপনা গোলা জুড়ে। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৮
Share: Save:

ধুম লেগেছে নবান্নের!

গোটা মাঠ জুড়ে ধান কাটার হুড়োহুড়ি। তার মাঝেই গুটিকয় খেতমজুর এক মনে বুনে চলেছেন ধানের ‘লোট’। এ সব পৌঁছে দিতে হবে জমিমালিকের বাড়িতে।

নতুন ধানের এই লোট দিয়েই তো আজ, বৃহস্পতিবার থেকে রাঢ়াঞ্চলের গ্রামে-গ্রামে শুরু হচ্ছে নবান্ন। এখনও জমি থেকে পঁচিশ শতাংশও ধান ওঠেনি। তবু নবান্নের ব্যস্ততা শুরু হয়ে গিয়েছে। পাঁজি বলছে, নবান্নের শুভ দিন মাত্র দু’টি। ৬ ও ১৬ অঘ্রাণ, অর্থাৎ বৃহস্পতি ও রবিবার।

অগ্রহায়ণের শুক্লপক্ষে বাংলার ঘরে ঘরে নতুন ধানের আবাহনেই নবান্ন। ইদানীং বহুধা বিভক্ত পরিবারে জমি কমেছে। গোয়াল-গরু উধাও। এসেছে ট্রাক্টর, ঝাড়াই মেশিন। তবু নবান্নের সাবেক আঘ্রাণ কিছুটা টিঁকে আছে এখনও। সাগরদিঘির মণিগ্রামের প্রবীণা সতী দে বলেন, “ধান কাটা শেষ না হলে কী হবে, নবান্নের আয়োজন হয়েছে বহু বাড়িতেই।’’ গ্রামের বা বাড়ির কুলদেবতাকে জমির নব অন্ন উৎসর্গ করা হবে। নতুন চাল শিলে বেটে নানা ফলমূলের টুকরো দিয়ে তৈরি হবে সিন্নি বা মলিদা। সেই সিন্নির সঙ্গে নতুন চালের চিড়ে, দই, জিলিপি, বোঁদে দিয়ে জলযোগ চলবে দুপুর পর্যন্ত। তার পর কলা, আখ, মুলো-সহ নানা রকমের ভাজা ও পঞ্চব্যঞ্জন দিয়ে দুপুরে ভূরিভোজ।

কৃষিনির্ভর চাঁই ও ধানক সমাজে নবান্ন অনেকটা লক্ষ্মীপুজোর মতো। এঁদের বেশির ভাগই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষি। খুড়িপাড়া গ্রামের দ্বিজপদ মণ্ডল বলেন, “এখন ধান কাটা চলছে। সে ভাবে টাকাকড়ি হাতে নেই। ধান ঝেড়ে বিক্রির পরে সংক্রান্তিতে গ্রাম জুড়ে হবে নবান্ন।”

বোখরা গ্রামে রানি ভবানী প্রতিষ্ঠিত রক্ষাকালীর মন্দির রয়েছে। সেখানে নব অন্ন নিবেদন করেই পূর্ণিমাতে নবান্ন হবে গ্রামে। মন্দিরের পুরোহিত অলক চট্টোপাধ্যায় জানান, আগে নবান্নের বৈশিষ্ট্য ছিল কলাই ডালের জিলিপি ও বোঁদে। আগের দিন বাজার থেকে আসত সব্জি। পর দিন হত বাসি নবান্ন। সে দিন বাড়িতে উনুন জ্বলত না। নবান্নের বাসি খাবার খাওয়াই ছিল দস্তুর।

নবান্ন না থাকলেও মুসলিম বাড়ি নতুন ধানের ভাগ দেয় মসজিদ ও মাদ্রাসাকে। সাগরদিঘির মথুরাপুরের চাষি এক্রামুল হক বলছেন, “২০ মণ ধান পেলে এক মণ ধান জাকাত (দান) দেওয়া নিয়ম। সকলেই তা মেনে চলেন।”

ধর্ম যার যা-ই হোক, আজ নতুন ধানের সুবাসে ভরুক বাংলার ঘর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna Festival
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE