Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চাষের জমি হারিয়ে যাচ্ছে জলঙ্গির গর্ভে

সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হন নারায়ণপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রীণা খাতুন বিশ্বাস। বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন কল্লোল প্রামাণিক। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হন নারায়ণপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রীণা খাতুন বিশ্বাস। বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন কল্লোল প্রামাণিক। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৬
Share: Save:

• গত প্রায় ২৪-২৫ বছর আগে এলাকার মাঠে চাষবাসে সুবিধার জন্য সরকার থেকে ১২টি ছোট পাম্প বসানো হয়েছিল। বর্তমানে সেগুলো খারাপ হয়ে পড়ে আছে। চাষের কাজে সমস্যা হচ্ছে চাষিদের।

সাহাবুদ্দিন বিশ্বাস, হায়তাপাড়া

পাম্পগুলো বছর দশেক চালু থাকার পর খারাপ হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা আমাদের হাতে আসায় ওই পাম্পগুলো সারানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

• এই পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় বেশিরভাগ গ্রামের জল আর্সেনিকযুক্ত। বিশুদ্ধ পানীয় জলের কষ্ট রয়েছে সাধারন মানুষ। পঞ্চায়েত কি করছে?

গোলাম কিবরিয়া, সাদিপুর

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর টোপলা গ্রামে একটি পাম্প ও জলাধার তৈরি করেছে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে সেই পাম্পের পানীয় জল বিভিন্ন গ্রামে সরবরাহ করা হবে। তা ছাড়া মানুষের পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে পঞ্চায়েত একটি সজলধারা তৈরি করেছে। আর দু’টি নতুন সজলধারা তৈরি করবে পঞ্চায়েত।

• জলঙ্গি নদীর জল ঢুকে আগে খালগুলো ভরে থাকত। চাষিদের সেই জলে চাষের কাজ করতে সুবিধা হত। কিন্তু এখন খালে সেই জল ঢোকে না। স্লুইস গেট ও রিভার পাম্প তৈরি করলে চাষিদের সমস্যা দূর হতো।

জানেসকার শেখ, পরানপুর

এটা পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় হবে না। সবটাই সেচ দফতরের কাজ। আমরা এর আগেও স্লুইস গেট ও রিভার পাম্পের বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদ ও সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। চাষিদের সমস্যার কথা আবার জানাব।

• আখড়াপাড়া সেতু থেকে প্রতাপনগর অবধি রাস্তার বেহাল দশা। স্কুল পড়ুয়া ও সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। পঞ্চায়েত সারানোর ব্যবস্থা করছে না কেন?

আলমগীর মণ্ডল, আখড়াপাড়া

আখড়াপাড়া এলাকার প্রায় আশি শতাংশ রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। কিছু রাস্তার কাজ বাকি রয়েছে। সেই কাজ ভবিষ্যতে সারানো হবে।

• গত কয়েক বছরে জলঙ্গি নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙতে গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে। চাষের জমি হারিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যপারে পঞ্চায়েত কী উদ্যোগ নিয়েছে?

আব্দুস সাত্তার, গোপালনগর

ভাঙন রোধে একশো দিনের কাজে মাটি দেওয়ার পাশাপাশি নদীর পাড়ে ভেটিভার গাছ লাগানো হবে। ভেটিভার তৈরির নার্সারি করা হয়েছে।

বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে এ ভাবেই যাতায়াত করে দু’জেলার মানুষ।
জলঙ্গির উপর সেতু তৈরির দাবি অনেক দিনের। —নিজস্ব চিত্র।

• পঞ্চায়েতের বিশাল এলাকা জুড়ে কোনও চিকিৎসাকেন্দ্র নেই। কাছাকাছি হাসপাতাল বলতে কুড়ি কিলোমিটার দূরের নতিডাঙা বা ত্রিশ কিলোমিটার দূরে তেহট্ট হাসপাতাল। বিশেষ করে রাতবিরেতে প্রসূতি মহিলাদের বা মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে বিপদে পড়তে হয়।

জুব্বার বিশ্বাস, সাদিপুর

এটা একটা বড় সমস্যা। স্থানীয় বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্তের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এলাকায় জমি পাওয়া গেলে, সেখানে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা হবে।

• এলাকার দুঃস্থ মানুষ সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন না। অথচ তুলনায় অবস্থাসম্পন্ন মানুষ সেই সুবিধা নেয়।

রফিকুল শেখ, গোপালনগর

এই সমস্যা সব জায়গাতেই আছে। গত ২০০৮ সালে শেষ বিপিএল তালিকা তৈরির সমীক্ষা করেছিল সরকার। সেই সময় অনেক দুঃস্থ পরিবার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। ভবিষ্যতে সমীক্ষা হলে পঞ্চায়েত তাঁদের কথা মাথায় রাখবে।

• আজলামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তার কালভার্ট গত ছ’মাস ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। যাতায়াতের পথে যে কোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে। পঞ্চায়েত ওই কালভার্ট সারাচ্ছে না কেন?

রাজ্জাক শেখ, আজলামপুর।

টিয়াকাটা ঘাট থেকে লালনগর ভায়া গোপালনগর প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার একটি রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। ক’দিনের মধ্যে ওই ঠিকাদাররাই কালভার্টের কাজ করবে।

• জলঙ্গির উপর বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ দুই জেলার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। ব্যবসায়ী থেকে মাল বোঝাই বড় বড় ট্রাক সেই পথে যায়। ওখানে একটি কংক্রিট সেতু নির্মাণ করলে দু’জেলার মানুষই উপকৃত হয়।

সাহাবুদ্দিন হালসানা, আজলামপুর

মুর্শিদাবাদের নওদা, বেলডাঙা ও হরিহরপাড়া থানা এলাকার প্রচুর চাষি ওই সাঁকো পেরিয়ে নাজিরপুর হাটে সব্জি নিয়ে আসেন। এ দিকের বহু মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে বহরমপুর বা উত্তরবঙ্গ যান। ওখানে সেতু তৈরির প্রস্তাব জেলা প্রশাসন ও বিধায়ককে জানিয়েছি।

• এলাকার বেশিরভাগ মাঠেই বেলেমাটি হওয়ায় কলা চাষ হয়। সেচের জলের সমস্যা রয়েছে। সরকার এখানে গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করলে চাষিরা উপকৃত হত।

আজিজুল শেখ, বেলতলা

বহু বছর আগে একটি গভীর নলকূপ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এখন সাধারণত গভীর নলকূপ বসানো হয় না। তবুও পঞ্চায়েত চাষিদের সেচের অসুবিধার কথা সেচ দফতরকে জানাবে।

• বাড়ির কাছাকাছি কোনও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র না থাকার জন্য বাচ্চাদের বহু দূরের কেন্দ্রে যেতে হয়। যাতায়াতের অসুবিধার জন্য অনেক বাচ্চাই সেখানে যেতে পারে না।

উকিলা বিবি, টোপলা

টোপলা সংসদ এলাকায় দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। সরকারি জায়গার অভাবে নিজস্ব ঘর নেই। কোনওটা ভাড়া বাড়িতে বা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে। নতুন কোনও কেন্দ্র তৈরি এখনই সম্ভব নয়। তা ছাড়া সবার বাড়ির সামনে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চাইলে কী করা যাবে।

• বছর দুয়েক আগে বহু রাস্তায় বিদ্যুৎ খুঁটিতে আলোর ব্যবস্থা হয়েছিল। রাতে চলাচলে মানুষের সুবিধা হত। কিন্তু এখন সেই সব আলো খারাপ হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত আলোর ব্যবস্থা করলে সুবিধা হবে।

মুজিবর রহমান মণ্ডল, টোপলা

শহরের রাস্তার মতো না হলেও বেশ কিছু রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে পঞ্চায়েতের। আর্থিক সমস্যার জন্য সেটা এখনই সম্ভব হচ্ছে না। আগামী দিনে পঞ্চায়েত নিজস্ব তহবিলের টাকা খরচ করে প্রতিটি বুথে আলোর ব্যবস্থা করবে।

• বর্ষার জল নামার জন্য গ্রামের এক মাত্র খেলার মাঠ ভেঙে যাচ্ছে। অথচ পঞ্চায়েত একটা কালভার্ট তৈরি করলে বৃষ্টির জল নেমে যেত। মাঠের ভাঙন এড়ানো যেত।

আশাবুল শেখ, নতুনপাড়া

ওখানে কালভার্ট কখনও ছিল না। খুব নিচু জায়গায় গত কয়েক বছর মাটি তুলে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আরও দুই-তিন বছর রাস্তায় মাটি তুলে উচু করার পর একটা কালভার্ট তৈরি করা হবে।

• এলাকার উচ্চ বিদ্যালয় বা প্রাথমিক কোনও স্কুলে প্রাচীর নেই। স্কুলের মধ্যে গবাদি পশু চরে বেড়ায়। তা ছাড়া, রাস্তার পাশেই স্কুল। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

জিব্রাইল শেখ, পরানপুর

স্কুলের প্রাচীর খুব জরুরি। এটা পঞ্চায়েতের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়। প্রাচীর তৈরির জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Pradhan Foot Bridge Narayanpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE