Advertisement
E-Paper

ঘরবাড়ি নেই, ক্লাস চলছে পড়শি কলেজে

নিজস্ব বাড়ি নেই, শিক্ষক নেই, তবু কলেজ রয়েছে! কারণ কলেজের ভবন তৈরি হওয়ার আগেই মিলে গিয়েছে অনুমোদন। সেই মতো ছাত্র ভর্তিও করা হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে ক্লাস শুরু করে দিতে হল নদিয়ার তিনটি পলিটেকনিক কলেজের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫১

নিজস্ব বাড়ি নেই, শিক্ষক নেই, তবু কলেজ রয়েছে!

কারণ কলেজের ভবন তৈরি হওয়ার আগেই মিলে গিয়েছে অনুমোদন। সেই মতো ছাত্র ভর্তিও করা হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে ক্লাস শুরু করে দিতে হল নদিয়ার তিনটি পলিটেকনিক কলেজের। তবে অন্য কলেজে গিয়ে।

এ বছর নদিয়া জেলার তিনটি পলিটেকনিক কলেজের অনুমোদন দিয়েছে ‘অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন বা এআইসিটিআই’। একটি হল ‘রানাঘাট গভর্নমেন্ট পলিটেকনিক কলেজ’। তার ক্লাস হচ্ছে কৃষ্ণনগরের ‘বিপ্রদাস পালচৌধুরী ইনস্টিউট অব টেকনোলজি’তে। আর তেহট্ট গভর্নমেন্ট পলিটেকনিক কলেজের ক্লাস হচ্ছে বহরমপুরের ‘মুর্শিদাবাদ ইনস্টিউট অব টেকনোলজি’তে। আর গয়েশপুর গভর্নমেন্ট পলিটেকনিক কলেজের ক্লাস হচ্ছে ব্যান্ডেলের ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভে ইনস্টিটিউট’-এ।

এই মুহুর্তে তিনটি কলেজেরই প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন কৃষ্ণনগরের বিপ্রদাস পালচৌধুরী ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-র অধ্যক্ষ নারায়ণ সাহা। তিনি বলেন, ‘‘দু’বছরের মধ্যে নিজেদের বিল্ডিং তৈরি করে সেখানে ক্লাস শুরু করার শর্তে রাজ্যের আরও কয়েকটি কলেজের সঙ্গে আমাদের জেলার তিনটি কলেজকে অনুমোদন দিয়েছে এআইসিটিই। সেই মতো রানাঘাটের কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস হচ্ছে আমাদের কলেজে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আর এ বারই প্রথম নয়। একই ভাবে বছর তিনেক আগেও কালীগঞ্জের ‘মীরমদন মোহনলাল গভর্নমেন্ট পলিটেকনিক কলেজ’-এর ছাত্রছাত্রীদের এক বছর ক্লাস হয়েছিল আমাদের কলেজে। এক বছর পর তাদের বিল্ডিং তৈরি হয়ে যাওয়ায় তারা চলে গিয়েছে। ফলে এই অভিজ্ঞতা আমাদের আগেও হয়েছে। তাই তেমন কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’

কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের কলেজে ক্লাসরুমের তেমন অভাব না থাকায় এই অতিরিক্ত ছাত্রের চাপ বিশেষ কোনও সমস্যা তৈরি করবে না। তবে এখনও পর্যন্ত কলেজগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় বিপিসিআইটি কলেজের শিক্ষকরদেরকেই অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে।

কলেজের শিক্ষকদের এক অংশের দাবি, এমনিতেই কলেজে শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ৩০ জন থাকার কথা। বর্তমানে আছে ২০ জন। ফলে এই অতিরিক্ত ক্লাসের বোঝার সরাসরি প্রভাব পড়বে উভয় কলেজেরই ছাত্রছাত্রীদের উপরে। তা ছাড়া এমন কিছু ছাত্রছাত্রী আছে, যাদের অনেকটা পথ বাসে-ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়। সেটাও একটা বড় সমস্যা। যদিও নারায়ণবাবু বলেন, ‘‘ছাত্রদের স্বার্থের কথা ভেবে আমাদের কলেজের শিক্ষকরা নিজেদের মতো করে সমাধান করে নেবেন। কোনও সমস্যা হবে না।’’

তিনটি কলেজের প্রতিটি বিভাগে ৬০ জন করে ছাত্র ভর্তির অনুমতি দিয়েছে এআইসিটিআই। কিন্তু প্রথম বছর হওয়ায় রাজ্য কাউন্সিল ৩৭ জন করে ছাত্র ভর্তি করতে বলেছে। সেই হিসেবে প্রতিটি কলেজে ১১১ জন করে ছাত্র ভর্তি হওয়ার কথা। রানাঘাট কলেজে সেটা ১০৮ জন আর তেহট্ট কলেজে সেটা ৭৮ জন।

১ অগস্ট থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে। কিন্তু কৃষ্ণনগরের বিপিসিআইটিতে জেলার সব ক’টি বেসরকারি আইটিআই কলেজের পরীক্ষা চলায় ক্লাস বন্ধ আছে। এক দিনের বেশি ক্লাস হয়নি। ফলে এখনও পর্যন্ত কলেজে এই অতিরিক্ত ছাত্রের চাপ কতটা সমস্যায় ফেলবে, সেটা এখনই বুঝতে পারছেন না শিক্ষক থেকে শুরু করে পড়ুয়ারাও।

তবে বহরমপুরে কিন্তু সেই সমস্যা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সকলে। সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার প্রথম সেমিস্টারের সিলেবাস এক। ফলে তেহট্টের সমস্ত শাখার ছাত্রছাত্রীদের একটা ক্লাস ঘরে বসতে দেওয়া হচ্ছে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার অন্তরা মণ্ডল, অমিত হালদার ও ইলেট্রিক্যাল ইঞিনিয়ারিং শাখার রাহুল দাস, পিন্টু লোহাররা বলেন, ‘‘একটা ঘরে এত জন ছাত্রছাত্রীকে ক্লাস করতে হচ্ছে যে ঠাসাঠাসি অবস্থা। প্রতিদিন আমরা নিয়মিত বসার জন্য বেঞ্চ পর্যন্ত পাই না।’’ অন্তরা মণ্ডলের কথায়, ‘‘সব থেকে বড় কথা আমরা বহরমপুরে অনেক কষ্টে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই জোগাড় করে নিয়েছি। ৬ মাস পরে
আবার তেহট্টে গিয়ে সেই কাজটাই করতে হবে। সঙ্গে একগাদা খরচ।’’

সমস্যার কথা মেনেও নিয়েছেন বহরমপুর কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়গোপাল বিট। তিনি বলেন, ‘‘কিছুটা অসুবিধা তো হচ্ছেই। কারণ আমাদের ৬০ জনের বসার মতো ক্লাসঘর আছে। সেখানে ৯০ জনকে নিয়ে এক ঘরে বসতে হলে যা হয়!’’

college building
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy