ভাঙনের জেরে গ্রামে ঢোকার রাস্তাটাই তলিয়ে গিয়েছে ভাগীরথীতে। বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি আজও। মাস তিনেক আগে সরকার একটু মুখ তুলে চেয়েছিল। গ্রামের প্রত্যেকটা পরিবারের হাতে একটা করে সৌরলন্ঠন তুলে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু এই ক’মাসেই দেহ রেখেছে অধিকাংশ লন্ঠন।
যেগুলি এখনও কাজ করছে, ২-৩ ঘন্টার বেশি আলো দেয় না। ফলে সমস্যায় পড়েছেন নাকাশিপাড়ার চরকুর্মিপাড়ার বাসিন্দারা।
একের পর এক না পাওয়ায় ধুঁকতে থাকা গ্রামটার মানুষগুলো তাই প্রায় ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে বৃহস্পতিবার হাজির হয়েছিল জেলাশাসকের অফিসে।
এ দিন নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “ওই গ্রামের কিছু লোক আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁরা রাস্তা, বিদ্যুৎ-সহ বেশ কিছু সমস্যার কথা বলেছেন। আমরা নিশ্চয় কিছু একটা ব্যবস্থা নেব।”
ভাগীরথীর পাড় বরাবর চরকুর্মিপাড়া গ্রামটা। ভাঙনের জেরে গ্রামটির চারিদিকে ভাগীরথী ‘ইউ’ আকার ধারন করেছে। নাকাশিপাড়ার পাটুলিঘাট থেকে ভাগীরথীর পাড় বরাবর গ্রামে ঢোকার একটিমাত্র রাস্তা ছিল। বাসিন্দাদের দাবি, ১৫ বছর হয়ে গেল ভাগীরথীর পাড় দফায় দফায় ভেঙেছে। একটু একটু করে গ্রামের রাস্তা চলে গিয়েছে ভাগীরথীর গর্ভে।
রাস্তা নেই। বাসিন্দারা ভাগীরথীর পাড় ধরে কোনও মতে যাতায়াত করেন। বর্ষাকালে সে পথটুকুও থাকে না। তখন গ্রাম থেকে ঢোকা-বেরনোর এক মাত্র ভরসা নদীপথ। এলাকার বাসিন্দারা জেলাশাসকের কাছে ভাগীরথীর পাড় বরাবর একটি রাস্তা তৈরির দাবি জানিয়েছেন। তা ছাড়াও তাঁদের গ্রামের বিদ্যুৎ আনার দাবি জানিয়েছেন।
চরকুর্মিপাড়ার বাসিন্দা প্রতাপ মাহাতো বর্ধমানের একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। এ দিন গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কৃষ্ণনগরে জেলাশাসকের অফিসে এসেছিল সে-ও। প্রতাপ বলে, ‘‘আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। কেরোসিনের লন্ঠনের আলোতে পড়াশুনা করতাম। গত নভেম্বরে আমাদের একটা সৌরলন্ঠন দেওয়া হয়েছিল। সেটা হাতে পাওয়ার দিন সাতেক পরই অকেজো হয়ে যায়। ফলে আমাদের আবার কেরোসিনের লন্ঠনে পড়াশুনা করতে হচ্ছে।’’
ওই গ্রামেরই আর এক বাসিন্দা রঘুরাম মাহাতো বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে ৩৫০টি পরিবার আছে। প্রতিটি পরিবারে একটি করে সৌরলন্ঠন দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে অন্তত পক্ষে একশো জনের বাড়ির লণ্ঠনই খারাপ হয়ে গিয়েছে। কয়েকটা আবার কাজ করছে, কিন্তু ২-৩ ঘণ্টার বেশি জ্বলে না। তাই আমরা স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছি।’’
নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ বলেন, “রাস্তা আর বিদ্যুতায়নের কাজ যাতে হয়, সে উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি।” বিধায়কের দাবি, ওই গ্রামের কিছু ব্যক্তিগত জমি ও বাঁশ বাগানের উপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যেতে হবে। জমির মালিকদের বুঝিয়ে সেই ব্যবস্থাও তাঁরা করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy