Advertisement
E-Paper

নিস্তরঙ্গ গয়েশপুরে সরেছেন শেষ প্রার্থীও

প্রার্থী দিয়েও পিছিয়ে গিয়েছিল বামেরা। অন্যরা সে চেষ্টাও করেনি। তৃণমূলের দাপটে বিরোধী-শূন্য সেই গয়েশপুরের ন্যূনতম আকর্ষণ জিইয়ে রেখেছিলেন যিনি, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে শাসক দলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থী নিখিল গায়েনও এ বার পিছু হটলেন। গয়েশপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি মরণকুমার দে’কে লিখিতভাবে তিনি জানিয়েছেন—ক্ষণিকের মান-অভিমান থেকেই ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। প্রত্যাহারের সুযোগ নেই তাই ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতে আপাতত তৃণমূল প্রার্থীর হয়েই প্রচার করবেন তিনি।

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৪

প্রার্থী দিয়েও পিছিয়ে গিয়েছিল বামেরা। অন্যরা সে চেষ্টাও করেনি।

তৃণমূলের দাপটে বিরোধী-শূন্য সেই গয়েশপুরের ন্যূনতম আকর্ষণ জিইয়ে রেখেছিলেন যিনি, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে শাসক দলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থী নিখিল গায়েনও এ বার পিছু হটলেন।

গয়েশপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি মরণকুমার দে’কে লিখিতভাবে তিনি জানিয়েছেন—ক্ষণিকের মান-অভিমান থেকেই ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। প্রত্যাহারের সুযোগ নেই তাই ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতে আপাতত তৃণমূল প্রার্থীর হয়েই প্রচার করবেন তিনি।

নিস্তরঙ্গ গয়েশপুর তাই নিঝুম হয়েই রইল ভোটের সকালে। জন্মলগ্ন থেকেই বামেদের দখলে থাকা গয়েশপুর পুরসভায় পুরসভা ছিল বামেদের দখলে। ২০১১ সালে পালাবদলের আগের বছরেও বিরোধী-শূণ্য ভাবে পুরসভার দখল নিয়েছিল বামেরা।

কিন্তু পাঁচ বছর পর পরিস্থিতি পুরোটাই পাল্টে গিয়েছে। এক সময় বামদূর্গ এখন শাসকদলের কব্জায়। আজ, শনিবার গয়েশপুর পুরসভার ভোটে বামেরা কোনও প্রার্থীই দিতে পারেনি। এক সময় তৃণমূল ও কংগ্রেস এই পুরসভায় প্রার্থীই দিতে পারত না। এ বার লালদূর্গে বামেরাই প্রার্থী দিতে পারেনি। বামফ্রন্ট ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টিতে প্রার্থীও দিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সব বাম প্রার্থীই ভোট প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন। প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেন বিজেপি ও কংগ্রেসের প্রার্থীরাও। রাজ্যের যে মুষ্টিমেয় পুরসভা ভোট ছাড়াই শাসকদল নিজেদের দখল নিয়েছে গয়েশপুর সেই তালিকায় নাম তুলে ফেলে। অথচ এই পুরসভাতে কোনওসময়েই বাম বিরোধীরা দাত ফোটাতে পারেনি। কেবল ২০০০ সালে ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূ‌লের টিকিটে জিতেছিলেন কৃষ্ণা দে। আর ১৯৯৫ সালে কংগ্রেস সমর্থিত এক নির্দল প্রাথী জেতেন গয়েশপুর পুর সভা থেকে।

টিকিট বিলি নিয়ে ওই পুরসভায় শাসকদলের নিজেদের মধ্যে বিরোধ বেঁধেছিল। গয়েশপুরের মূল শহর থেকে খানিকটা দূরে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে তৃণমূল টিকিট দেয় অরুণকুমার ঘোষকে। এতেই ক্ষুব্ধ হন এলাকার দীর্ঘ দিনের নেতা নিখিল গায়েন। তিনি তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলে রয়েছেন। দলের তরফে গয়েশপুর এলাকার এসসি-এসটি সেলের নেতা। কিন্তু তিনি টিকিট না পেয়ে ভোটে দাঁড়ান নির্দল হিসেবে।

নিখলবাবুর পাড়া, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে শুক্রবার গিয়ে দেখা গেল তিনি বাড়িতে নেই। খোঁজ মিলল বাড়ির পাশেই দলীয় নির্বাচনী কার্যালয়ে। সেখানে বসে রয়েছেন গোটা পাঁচেক শাগরেদকে সঙ্গে নিয়ে। যেতেই তিনি বললেন, ‘‘আমি দলের অনুগত সৈনিক। দলের নির্দেশে এ বার নির্দল হিসেবে কোনও জায়গাতেই ভোট-প্রচারে যাইনি। বাড়ি বাড়ি লিফলেট পৌঁছে দিয়ে সে কথা জানিয়েও দিয়েছি। তবে আনুষ্ঠানিক এই ভোটে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনেই ভোট দেব।’’

পাশ থেকে একজন বললেন, ‘‘নিখিলবাবু দলীয় প্রতীকে দাঁড়ানো প্রার্থীকে ভোট দেবেন। শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম ভোট দেবেন। তারপর অন্য নেতা-কর্মীরা ভোট দেবেন।’’

নিখিলবাবুর এ ভাবে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার কারণ কী? তিনিই বলেন, ‘‘জন্মলগ্ন থেকেই দলের সঙ্গে ছিলাম। দীর্ঘদিন দলের নানা দায়িত্ব সামলেছি। তাই প্রত্যাশা ছিল প্রার্থী হব। না হতে পেয়ে মন খারাপ তো হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড়াই। কিন্তু পরে দলীয় নির্দেশে এখন আর ভোট প্রক্রিয়ায় নির্দল হিসেবে যোগ দিচ্ছি না।’’

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অলিগলিতে কান পাতলে এখনও শোনা যাচ্ছে নিখিলবাবু বিক্ষুব্ধ তৃমূল নেতা। ভোট লড়ছেন নির্দল প্রার্থী হিসেবে। এ দিকে ভোটের কোনও তাপ-উত্তাপেই নেই গয়েশপুর পুরসভার বর্তমান পুরপ্রধান সিপিএমের গোপাল চক্রবর্তী। এ দিন শহরে সিপিএমের লোকাল কমিটির দফতর ছিল তালাবন্ধ। গোপালবাবুর দেখা মিলল পুরসভার অফিসে। এ দিনই তাঁর আপাতত পাঁচ বছরের জন্য শেষ দিন। তিনি বললেন, ‘‘গয়েশপুরের মাটি সিপিএমের। গেলে উপনির্বাচনেও এখানে আমরা বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে জিতেছিলাম। কিন্তু এ বার মরিয়া হয়ে তৃণমূল সন্ত্রাস করল।’’ প্রসঙ্গত, গোপালবাবু নিজে এ বার মনোনয়নই জমা দেননি। অর্থাৎ তিনি আগে থেকেই ভোট প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন। কেন? গোপালবাবু নিজেই দলের গয়েশপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক। গোপালবাবু বলেন, ‘‘আমি দলের অনেক বড় দায়িত্বে রয়েছে। কিন্তু কী করব সন্ত্রাসের সামনে টিকতেই পারলাম না। আর তিন বার ভোটে দাঁড়িয়েছি। তাই এ বার আর দাঁড়ালাম না।’’

যদিও এ বার ভোটের আগে গয়েশপুর কোনও হতাহতের ঘটনাই ঘটেনি। অন্যবার মারামারি হলেও তা কোনওদিনই খুনোখুনির পর্যায়ে যায়নি। তাহলে কেন‌ সরে গেলেন? গোপালবাবু বলেন, ‘‘অপেক্ষা করুন। সব উত্তর পাবেন।’’

Manirul shake Trinamool BJP municipal election congress Gayeshpur Gopal chakrabarty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy