Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি নেই, তবু রিপোর্ট ধরাল ল্যাব

সরকারি হিসেবে, বেলডাঙা শহরে গত কয়েক সপ্তাহে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা সাত। তাঁরা সকলেই বিপন্মুক্ত। পুরসভার দাবি, ছ’মাস আগে থেকে তারা শহর পরিচ্ছন্ন রেখে এবং নানা ভাবে সচেতনতার কাজ করার জেরেই ডেঙ্গি সে ভাবে থাবা বসাতে পারেনি ওই এলাকায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২৩

ডেঙ্গি নিয়ে বেসরকারি পরীক্ষার রিপোর্ট নিঃসন্দেহে মানতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী। সে সব খতিয়ে দেখতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবু সরকারের অংশীদারিতে চলা পরীক্ষাগারই রিপোর্ট ভুল দিয়েছে বলে অভিযোগ।

সরকারি হিসেবে, বেলডাঙা শহরে গত কয়েক সপ্তাহে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা সাত। তাঁরা সকলেই বিপন্মুক্ত। পুরসভার দাবি, ছ’মাস আগে থেকে তারা শহর পরিচ্ছন্ন রেখে এবং নানা ভাবে সচেতনতার কাজ করার জেরেই ডেঙ্গি সে ভাবে থাবা বসাতে পারেনি ওই এলাকায়। যাঁদের ডেঙ্গি হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই শহরের বাইরে থেকে ডেঙ্গির জীবাণু বহন করে এনেছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।

কিন্তু এই সব কৃতিত্ব দাবির মধ্যেই সরকারি পরিকাঠামো ও পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে পুরসভার পরীক্ষাগারের দেওয়া রিপোর্ট। বেলডাঙা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বছর চব্বিশের ইন্দ্রনীল দে বহরমপুরে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কাজ করেন। জ্বর, মাথায় যন্ত্রণা, পেটের গণ্ডগোল-সহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। বাড়ির কাছে থাকা বেলডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে যান নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে চিকিৎসক বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে দেন তাঁকে।

ইন্দ্রনীল ও তাঁর পরিজনদের অভিযোগ, পরীক্ষা করাতে ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশে রাজ্য সরকারের পিপিপি মডেলে তৈরি ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে যান তাঁরা। সেখানে রক্তের নানা পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্টে ‘স্ক্রিন রিপোর্ট অফ ডেঙ্গি অ্যান্টিবডি/ অ্যান্টিজেন ডেঙ্গি এনএস ১ রিঅ্যাকটিভ (উইকলি)’ লিখে দেওয়া হয়।

ইন্দ্রনীলের পরিবার এই রিপোর্ট দেখে চিন্তায় পড়ে যায়। তাঁরা ধরেই নেন, ইন্দ্রনীলের ডেঙ্গি হয়েছে, তিনি বাঁচবেন কি না সন্দেহ । ইন্দ্রনীলের বৌদি ও পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সু্স্মিতা ঘোষ দে বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালের ভবনের মধ্যেই ওই ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি। তাদের রক্তপরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইন্দ্রনীলের বাবা আগেই মারা গিয়েছেন। সে তার মায়ের এক মাত্র সন্তা‌‌ন। তিনি ওই রিপোর্ট দেখে চিন্তায় পড়ে যান।’’

ইন্দ্রনীলের মা সুস্মিতার কাছেও তাঁর দুশ্চিন্তার কথা জানান। সুস্মিতার কথায়, ‘‘আমরা আরও দুটো পরীক্ষাগারে ওর রক্তপরীক্ষা করাই। তারা জানায়, রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মেলেনি।’’

ঘটনাচক্রে, পরের ওই দু’টি পরীক্ষাই করানো হয়েছিল বেসরকারি পরীক্ষাগারে। তারা ডেঙ্গির হদিস না পাওয়ায় ইন্দ্রনীলের বাড়ির লোকজন ফের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সুস্মিতা জানান, চিকিৎসকও রিপোর্ট দেখে জানান, ইন্দ্রনীলের ডেঙ্গি হয়নি। তার ডেঙ্গির চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।

ইতিমধ্যে ইন্দ্রনীলকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সুস্মিতা বলেন, ‘‘সে এখন আগের চেয়ে সুস্থ। সরকারি পরীক্ষাগারই যদি এ ভাবে ভুল রিপোর্ট দেয়, আমরা কাদের উপরে ভরসা করব?’’ বেলডাঙার পুরপ্রধান ভরত ঝাওর বলেন, ‘‘এই ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয়। আমি বিষয়টি ওই হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসারকেও জানিয়েছি। আমার অনুরোধে ওই পরীক্ষাগারে ডেঙ্গির পরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছে। ’’

ওই পরীক্ষাগারের কেউ অবশ্য এই নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। মঙ্গলবার দুপুরেও সেখানে প্রচুর রোগীর ভিড় দেখা যায়। রোগীরা অভিযোগ করেন, সেখানে টাকা নিয়ে রসিদ দেওয়া হয় না। এই অভিযোগেরও সদুত্তর মেলেনি। তবে বেলডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার বোধাদিত্য বক্সী শুধু বলেন, ‘‘ওটা কার্ড টেস্ট ছিল। এই ধরনের ত্রুটি কোনও কোনও ক্ষেত্রে হয়। এই পরীক্ষাগারে এলাইজা টেস্ট করার ব্যবস্থা নেই। ফলে ডেঙ্গির পরীক্ষা করা শক্ত। তাই ডেঙ্গির পরীক্ষা বন্ধ করতে বলা হয়েছে।’’

Blood Report Dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy