Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পুকুর চেয়ে রাজ্যের দ্বারস্থ এনটিপিসি

তিন দশক ধরে চলে আসা দু’টি ছাইগাদা উপচে পড়ছে। ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে তৃতীয় ছাইগাদা তৈরিতে সহায়তা চেয়ে রাজ্যের দ্বারস্থ হতে চলেছে এনটিপিসি।

ভরে এসেছে ছাইপকুর। নিজস্ব চিত্র

ভরে এসেছে ছাইপকুর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫৮
Share: Save:

তিন দশক ধরে চলে আসা দু’টি ছাইগাদা উপচে পড়ছে। ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে তৃতীয় ছাইগাদা তৈরিতে সহায়তা চেয়ে রাজ্যের দ্বারস্থ হতে চলেছে এনটিপিসি।

ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছ’টি ইউনিটে ২১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১০.৬ মিলিয়ন টন কয়লা পুড়িয়ে প্রতি বছর প্রায় ৩৬ লক্ষ মেট্রিক টন ছাই উৎপন্ন হয়। তা পাইপের মাধ্যমে নিয়ে গিয়ে ফেলা হয় মালঞ্চা ও নিশিন্দ্রার দু’টি ‘অ্যাশপন্ড’ বা ছাইগাদায়। মাস চারেক আগেই সেগুলি ভরাট হয়ে উপচে গিয়েছে। ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অরবিন্দকুমার সিংহ বলেন, “তৃতীয় ছাইগাদা তৈরি করা না গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর পথ থাকবে না।’’

এনটিপিসি সূত্রে জানানো হয়েছে, ছাইগাদা করার জন্য প্রায় ৩০০ একর জমি রয়েছে তাদের। কিন্তু তার কিছুটা জবরদখল করে চাষ করছে এলাকার কিছু লোক। সব রাজনৈতিক দলের নেতা ও গ্রামবাসীর সঙ্গে দফায়-দফায় বৈঠক করে জট খোলা যায়নি। এত দিন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য কিছু ছাই লেগেছে। বাংলাদেশেও ছাই পাঠানো হচ্ছিল একাধিক এজেন্সির মাধ্যমে। কিন্তু তাও এখন বন্ধ। ফরাক্কায় কোনও ইটভাটা নেই যে ছাই নেবে। একটি মাত্র আছে সমশেরগঞ্জে। জঙ্গিপুরে প্রায় ৩০টি ইটভাটা থাকলেও তারা দূরত্বের কারণে সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ছাই নিতে আগ্রহী নয়। ফলে জমে থাকা ছাই আর সে ভাবে বের করে দেওয়া যাচ্ছে না।

এনটিপিসি-র বক্তব্য, এলাকাবাসী তৃতীয় ছাইগাদা নিয়ে যে সব সমস্যার কথা তুলেছিলেন তা মাথায় রেখে একটি সেতু, জল নিকাশের প্রশস্ত নালা ও ছাই নিয়ন্ত্রণের সমস্ত ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এখনকার ছাইগাদাগুলিতে বনসৃজন করে পিকনিক স্পট করে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে বরফ গলেনি। অরবিন্দবাবু বলেন, ‘‘বাধ্য হয়েই আমরা রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছি।”

নিশিন্দ্রা গ্রামের বাসিন্দা অমল মিশ্র অবশ্য পাল্টা বলেন, “গ্রামের দক্ষিণে একটি ছাইগাদার ঠেলাতেই আমাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। খোলা আছে উত্তর-পশ্চিম দিকটা। সে দিকে নতুন করে ছাইগাদা হলে ঝাড়খণ্ডের বন্যায় অন্তত সাতটি গ্রাম ভেসে যাবে। সেই কারণেই আপত্তি জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।”

ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হকের বক্তব্য, “তৃতীয় ছাইগাদা নিয়ে গ্রামবাসীদের আপত্তি যুক্তিসঙ্গত। তা ছাড়া ছাইগাদার সংখ্যা বাড়ালেই তো আর সমস্যা মিটবে না। বরং ছাই কাজে লাগানোর পথে হাঁটতে হবে এনটিপিসি কর্তাদের।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবুল হাসনাতও বলেন, “এলাকার মানুষের দাবি সময় মতো মানা হয়নি বলেই এখন বাধা আসছে। তবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাক, তা কেউ চায় না। রাজ্য সরকারের উচিত অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NTPC Pond State Goverment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE