বেলডাঙার বাবু কার্তিক। — নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজো, কালী পুজো এখানে জমজমাট হলেও, কার্তিক লড়াই বেলডাঙার মূল আকর্ষণ। অন্যান্যবার উদ্যোক্তারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ালেও এ বার কাপলে ভাঁজ পড়েছে তাঁদের। কারণ সেই— নোটের গুঁতো।
অন্যান্যবার চাঁদা তুলতে তেমন সমস্যা না হলেও এ বার বড় নোট বাতিলের ধাক্কায় তাঁদের ঘুম ছুটেছে। পুজো বুধবার ও বৃহস্পতিবার।
মঙ্গলবার সকাল ১০ টা। বেলডাঙার এক কার্তিক পুজো কমিটির চার সদস্য রসিদ নিয়ে তিন মাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে। পাশের গলির ভিতরে ঢুকে দরজার পাশে কলিং বেল টিপতেই বাড়ির কর্তা বেড়িয়ে এলেন।
-‘‘কী হল ভাই?’’
-কাকু পুজোর চাঁদা।
কাকুর ইশারাতে তাঁর বছর ১২ কন্যা বাড়ি থেকে ৫০০ টাকার নোট এনে বাবার হাতে দিল। কোনও কথা না বলে বাড়ির কর্তা ৫০০ টাকার নোট এনে পুজো উদ্যোক্তাদের হাতে দিলেন। আঁতকে উঠলেন উদ্যোক্তারা। কাকুর উত্তর, ‘‘পুজোর কত খরচ বেড়েছে। তোমাদের ৫০০ টাকা লেগে যাবে।’’
নাছোড় উদ্যোক্তারাও। তাঁদের একজন বললেন, ‘‘আপনার গত বারে ২১ টাকা চাঁদা ছিল। তাই দিলেই চলবে। তাছাড়া ওই ৫০০ টাকা তো সরকার বাতিল করেছে। আমরা সেই টাকায় কি করবো?’’
শেষ পর্যন্ত চাঁদা না নিয়েই ফিরে যান উদ্যোক্তারা। জানিয়ে যান বুধবার এসে ওই ২১টাকাই নিয়ে যাবেন।
বেলডাঙার কার্তিক লড়াই-এর মূল আকর্ষণ বাথানগড়ের বুড়ো শিব। তাদের এক উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘চাঁদা তুলতে বেড়িয়ে রীতিমতো নাকানি চোবানি খেতে হচ্ছে। সবাই ৫০০-১০০-এর নোট বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
গতবার ২৬ হাজার টাকা চাঁদা উঠেছিল। বেশি তো দূরের কথা, সেই টাকা তুলতে জুতোর সুকতলা ক্ষয়ে যাচ্ছে। গতবার যাঁরা ১১ টাকা দিয়েছিলেন, তাঁরাও অবলীলায় ৫০০-র নোট বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাকি টাকা ফেরত দিতে নাজেহাল হতে হচ্ছে তাঁদের। প্রত্যেরই বক্তব্য, ‘খুচরো টাকা পাব কোথায়?’ বড় নোট নিলে কীভাবে চলবে, সেই চিন্তাতে আর চাঁদা উঠছে না।
উৎসবের প্রধান প্রতিমা প্রাচীন বাথান গড়ের বুড়ো শিব। কমিটির উদ্যোক্তা শিব শঙ্কর দাস বলেন, ‘‘মানুষের কাছে চাঁদা চাইতে গেলেই ৫০০ টাকার নোট দেখাচ্ছে। সেটা ২১, ৩১, ১০১ চাঁদা যাই হোক নিতে হবে ৫০০ টাকা। আসলে বাতিল নোট দিয়ে শিবের ভক্তি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’’ কিন্তু উদ্যোক্তারা পড়েছেন মুশকিলে। খুচরো টাকা তাঁরাই বা পাবেন কোথায়?
মঙ্গলবার বেলডাঙা কার্তিক তলা পুজো কমিটির এক উদ্যোক্তা জানালেন, অনেকেই এ বার স্বেচ্ছায় ৫০০টাকা চাঁদা দিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে তাঁরাও তা নিচ্ছেন। কিন্তু, রসিদ দিচ্ছেন ৪০০-৪৫০ টাকার। উদ্যোক্তাদের সাফাই, ব্যাঙ্কে টাকা বদলাতে যে যাবে, তাকে তো কিছু দিতে হবে।
বেলডাঙা বারোয়ারিতলা কৃষ্টি পরিষদ পরিচালিত শ্রী শিব দুর্গা পুজো। তাদের এবার ২১৯ বছরে পা দিল। কমিটির সম্পাদক নিতাই সিংহ বলেন, ‘‘৫০০ টাকার নোট ছাড়া কথা নেই। কথায় কথায় মানুষ বাতিল ৫০০ টাকা বার করে চাঁদা দিতে চাইছে।’’
প্রতিমা, আলোকসজ্জা, বিসজর্নের আয়োজন সবই রয়েছে। কিন্তু চাঁদা কই?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy