মাঝ রাস্তায় চলছে পাথর তোলা। —নিজস্ব চিত্র
পুলিশি ধরপাকড়ের জেরে লরিতে ওভারলোডিংয়ে অনেকটাই লাগাম পরিয়েছে ঝাড়খণ্ড। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি এবং টানা লরি ধর্মঘটের পরেও নীরব এ রাজ্যের পুলিশ —এমনটাই অভিযোগ লরি মালিকদের যৌথ সংগ্রাম কমিটির।
রোজই ঝাড়খণ্ড থেকে কয়েকশো লরি পাথর নিয়ে ধুলিয়ান ও ফরাক্কা হয়ে যায়। লরি মালিক সমিতির অন্যতম কর্তা মহম্মদ সামসুজ্জোহার অভিযোগ, ফরাক্কার কাছে রাজ্যের শেষপ্রান্ত বেওয়ায় প্রচুর পাথর মজুত রাখা হয়েছে। ঝাড়খণ্ড থেকে আসা লরিগুলিকে বেওয়ায় রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে মজুত রাখা পাথর তুলে দেওয়া হচ্ছে। তার জন্য জনা তিরিশ শ্রমিক ছাড়াও জেসিবি মেশিন কাজে লাগানো হয়েছে। পুলিশকে পয়সা দিয়ে সেই সব ওভারলোডেড লরি পার করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ঝাড়খণ্ড ও এই রাজ্যের আটটি লরি মালিক সংগঠন ‘যৌথ সংগ্রাম কমিটি’ গড়ে এই নিয়ে সরব হয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের লরি মালিকেরাও।
সংগঠনের সভাপতি, ঝাড়খণ্ডের আকবর আলি বলেন, “ওভারলোডিংয়ের ফলে ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে রাস্তাগুলি বেহাল। ফলে, লরি চালিয়ে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না।” বৃহস্পতিবার মালদহে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দু’টি টোল ট্যাক্স কেন্দ্র চালু হওয়ায় ওভারলোডিংয়ে অবশ্য খানিক লাগাম পড়েছে। লরি চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।
যৌথ কমিটির ফরাক্কার এক কর্তা জানান, ১২ চাকার লরিতে লরি-সহ ৩১ টন এবং ১০ চাকার লরিতে লরি-সহ ২৫ টন মাল বহনের আইনি ছাড়পত্র আছে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি মাল বহন করা হচ্ছে। কমিটির দাবি, তাদের আওতায় থাকা লরি মালিকেরা নিয়ম মেনেই গাড়ি চালাচ্ছেন। কিন্তু ওভারলোডিংয়ের অজুহাতে পুলিশ সব লরি থেকেই ঢালাও ‘তোলা’ নিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি জুলুম চলছে ফরাক্কার বল্লালপুরে সেতুর কাছে। যে টাকা দিতে অস্বীকার করছে, তার গাড়ি নানা অজুহাত দেখিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে। নানা অজুহাতে একাধিক লরি মালিককে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
ঝাড়খণ্ড থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে পাথর রাজ্যে ঢোকে মূলত ৪টি সড়ক ধরে। সুতির বহুতালি কে বি সড়ক, পাকুড়–ধুলিয়ান সড়ক, বারহারোয়া-কেন্দুয়া ও বারহারোয়া–বেওয়া হয়ে ফরাক্কার রাস্তা। ফরাক্কা হয়ে তা যায় মালদহ ও উত্তরবঙ্গে। ঝাড়খণ্ড ও এই রাজ্যের প্রায় চার হাজার পাথর ও বালি বোঝাই লরি চলে ওই চারটি সড়ক পথ দিয়ে।
ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের লরিমালিক নাজমে আলমের দাবি, পাথর মূলত লরিতে তোলা হয় বারহারোয়া ও পাকুড়ে। ঝাড়খণ্ডে লরি ধর্মঘটের চাপে ওভারলোডিং বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে একটি লরিকে পাথর ও বালি নিয়ে যেতে হলে ৩০টি জায়গায় টাকা দিতে হয়। দু’দিন আগে মালদহে দু’টি টোল ট্যাক্স কেন্দ্র হওয়ায় ওভারলোডিং থাকলেই জরিমানা করা হচ্ছে। এতে সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি এখনও বন্ধ হয়নি।
লরি মালিক সংগঠনের মতে, শুধু টোলট্যাক্সে জরিমানা করলেই হবে না। ওভারলোডিং নিয়ে নজরদারি বাড়াতে বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসাতে হবে পরিবহণ দফতরকে। কেউ লরিতে বাড়তি মাল তুললে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।
তোলাবাজির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পুলিশ সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, ওভারলোডিং বন্ধ করার জন্য ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ষোলো মাইল ও গাজল— এই দুই জায়গায় টোল ট্যাক্স কেন্দ্র বসানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই বহু লরিকে আটকে ওভারলোডিংয়ের জন্য মোটা টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এতে অনেকটাই কাজ হয়েছে।
লরি মালিকদের প্রশ্ন, তা হলে বেওয়ায় ওভারলোডিংয়ের কারবার জাঁকিয়ে বসল কী করে? ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এড়িয়ে অন্য পথে যাচ্ছে বাড়তি মাল বোঝাই লরি।
সে কারণে, শুধু জরিমানা আদায় করে লরিগুলিকে ছাড় দিলে হবে না। কারণ যে টাকা জরিমানা করা হচ্ছে তা মিটিয়ে দিলেও ওভারলোডিংয়ের দৌলতে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লাভ করছে ওই সব অসৎ লরি মালিকেরা। বাড়তি মালপত্র লরি থেকে নামিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হলে তবেই কাজের কাজ হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy